প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশি তরুণ ডেভেলপার রেজাউল করিম আরিফের ডেভেলপ করা ‘পিক্সেল-ফ্লো’ নামের একটি এআই-ভিত্তিক টুল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভাবনীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সুইডিশ প্লাটফর্ম লাভেবল আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এআই শোডাউন হ্যাকাথন-এ আরিফের তৈরি এই প্রজেক্টটি বিশ্বের ৫,১১৮টি প্রকল্পের মধ্য থেকে বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় গুগল, ওপেনএআই এবং অ্যানথ্রপিক সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল।
‘পিক্সেল-ফ্লো’ মূলত একটি এআই মুড বোর্ড জেনারেটর; যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নানান ধারণা ও থিমভিত্তিক ভিজ্যুয়াল প্ল্যান তৈরি করতে পারেন। প্রতিযোগিতায় মাত্র ৪০ ঘণ্টার মধ্যে আরিফ এই প্রজেক্ট তৈরি করেন এবং তা প্রোটোটাইপ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এ কাজের মধ্যে তিনি ব্যবহার করেছেন অ্যানথ্রপিক0-এর শক্তিশালী ভাষা মডেল ক্লড ফোর, রিঅ্যাক্ট, টাইপ-স্ক্রিপ্ট, হাগিংফেসের ট্রান্সফরমার এবং ফ্যাব্রিক-জেএস।
প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডেই তিনি অ্যানথ্রপিক থেকে ১০ হাজার ডলার পুরস্কার পান এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত রাউন্ডে বিজয়ী হিসেবে আরও ১০ হাজার ডলারের পুরস্কার লাভ করেন। অর্থাৎ মোট ২০ হাজার ডলারের পুরস্কার নিয়ে ‘পিক্সেল-ফ্লো’ বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আরিফ বলেন, ‘আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম যখন জানতে পারি আমি জিতেছি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে এই প্রোটোটাইপটিকে আরও নিখুঁত করে ভবিষ্যতে একটি স্যাস (সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস) পণ্য হিসেবে বাজারে আনব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পটি প্রমাণ করে যে, এআই এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একজন ব্যক্তি একাই অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে।’
আরিফের এই অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পথচলা। স্কুলজীবনেই তিনি ফ্রিল্যান্স ডিজাইনের কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে আইটি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য দেশ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি কোম্পানিতে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।
তার এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যও এক উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা। আরিফ মনে করেন, বাংলাদেশের আরও তরুণ-তরুণীরা যেন এআই-কেন্দ্রিক কোডিং ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্ত হয়, সেটাই তার মূল আশা।
পিক্সেল-ফ্লো-এর উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একদিকে যেমন বাংলাদেশের এআই সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে তা বিশ্ববাজারে দেশীয় উদ্ভাবনের জন্য আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। এটি প্রমাণ করছে, প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশি তরুণরাও প্রযুক্তির অগ্রগামী কণ্ঠ হতে পারে।
এই অর্জন নিঃসন্দেহে দেশের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি মাইলফলক, যা নতুন প্রজন্মকে এআই, মেশিন লার্নিং ও ক্রিয়েটিভ কোডিংয়ের জগতে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে তুলবে। ‘পিক্সেল-ফ্লো’ আমাদের দেখিয়ে দিল, সাহস, কল্পনা আর কিছু আধুনিক টুলস থাকলেই বাংলাদেশ থেকেও বিশ্বমানের প্রযুক্তি নির্মাণ সম্ভব।