‘ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ২০২৫’
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ২২:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫ ২৩:০৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
২০২৫ সালের ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া তালিকায় বাংলাদেশের তিন তরুণ উদ্যোক্তা স্থান করে নিয়েছেনÑ আরেফিন জামান (হেলথকেয়ার ও সায়েন্স), সাকিব হোসেন (শিল্প, উৎপাদন ও জ্বালানি) এবং সায়েদ জুবায়ের হাসান (সামাজিক প্রভাব)। ফোর্বসের ভাষ্য অনুযায়ী, এ বছরের তালিকাভুক্তরা এমন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন, যা অনেকাংশেই তথ্য প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশি তরুণরা উদ্ভাবন ও নেতৃত্বের মঞ্চে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের প্রভাব রাখতে শুরু করেছেন।
আরেফিন জামান
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের অন্যতম অগ্রদূত হলেন আরেফিন জামান। তিনি MedEasy নামক একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্লাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে। মূল লক্ষ্য ছিল শহর ও গ্রামের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবধান ঘোচানো। প্লাটফর্মটি আজ দেশের হাজার হাজার মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যসেবার ভরসার নাম।
MedEasy ব্যবহারকারীদের অনলাইন ডাক্তার কনসালটেশন, ওষুধ ডেলিভারি, ডায়াগনস্টিক সার্ভিস এবং পুষ্টিবিদদের পরামর্শের সুযোগ দেয়। শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারই নয়, আরেফিন তার উদ্যোগকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন। ২০২৩ সালে MedEasy ৭.৫ লাখ ডলার সিড ফান্ডিং সংগ্রহ করে, যার ফলে কোম্পানির মোট ফান্ডিং দাঁড়ায় ১.৩ মিলিয়ন ডলার।
Forbes তাকে ‘Healthcare & Science’ ক্যাটাগরিতে ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় স্থান দিয়েছে। তার এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। ভবিষ্যতে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার পরিকল্পনা করছেন।
সাকিব হোসেন
Fashol নামক এগ্রিটেক স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা সাকিব হোসেন এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছেন, যা কৃষক এবং ভোক্তার মাঝে সরাসরি সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যোগটির উদ্দেশ্য ছিল মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
Fashol-এর অনন্যত্ব হলো এর Fashol Farmers Centres এবং Micro Distribution Centres, যেখানে কৃষক সরাসরি তাদের উৎপন্ন পণ্য বাজারজাত করতে পারেন। শহরাঞ্চলে রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং খুচরা বিক্রেতারা এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে টাটকা পণ্য সংগ্রহ করে থাকেন। কৃষকরা পান দ্রুত পেমেন্ট এবং প্রাসঙ্গিক বাজারদর সম্পর্কে তথ্য।
Forbes তাকে ‘Industry, Manufacturing & Energy’ বিভাগে তালিকাভুক্ত করেছে। Fashol বর্তমানে দেশের অন্তত ২০টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং আগামী ২ বছরে ৫০টি জেলায় বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে।
সায়েদ জুবায়ের হাসান
সায়েদ জুবায়ের হাসান হলেন কৃষি স্বপ্ন নামক একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক এগ্রিটেক প্লাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা এই উদ্যোগটির মূল লক্ষ্য ছিল কৃষকদের তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা এবং কার্বন ক্রেডিট বাজারে যুক্ত করার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
‘কৃষি স্বপ্ন’ প্লাটফর্মটি রিয়েল-টাইমে কৃষিপণ্য চাহিদা বিশ্লেষণ করে, কৃষকদের সঙ্গে প্রক্রিয়াজাতকরণকারী, লজিস্টিক কোম্পানি এবং সরকারি অংশীদারদের সংযুক্ত করে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় টেকসই কৃষি চর্চা এবং কার্বন ট্র্যাকিং সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য এই প্লাটফর্মটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।
Forbes তাকে ‘Social Impact’ বিভাগে স্বীকৃতি দিয়েছে। সায়েদ এই অর্জনকে শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবে দেখেন না, বরং বাংলাদেশের কৃষকদের যৌথ বিজয় হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি বলেন, ‘কৃষিকে ডিজিটালাইজেশন ছাড়া উন্নত করা সম্ভব নয়। আমরা এই দিকেই এগোচ্ছি।’
এই তিন তরুণ বাংলাদেশের উদ্যোক্তা পরিবেশে নতুন আশার আলো দেখিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন, সাহস এবং উদ্ভাবনের পথচলা নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।