ডিজিটাল প্রতারণা
মুহিন তপু
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ১৬:১৩ পিএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫ ১৬:১৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যতই জনপ্রিয় হচ্ছে, ততই বাড়ছে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা। সাধারণ মানুষ এখন ফিশিং ও OTP স্ক্যামের মতো সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে হারাচ্ছেন মোবাইল ব্যালান্স থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পুরো টাকা। মূল কারণ ডিজিটাল লিটারেসির অভাব।
ফিশিং ও ওটিপি (OTP) স্ক্যাম
ফিশিং হচ্ছে এমন একটি প্রতারণামূলক কৌশল, যেখানে হ্যাকার বা প্রতারক ভুয়া ওয়েবসাইট, ইমেইল বা বার্তা পাঠিয়ে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। এটি দেখতে একেবারে মূল প্রতিষ্ঠানের মতো হলেও এর পেছনে থাকে অপরাধীরা।
অন্যদিকে OTP স্ক্যাম এমন একটি প্রতারণা যেখানে মোবাইল বা ইমেইলে প্রাপ্ত One Time Password (OTP), যা একটি নিরাপত্তা কোড হিসেবে কাজ করে, তা জেনে প্রতারক আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারকরা ফোন বা মেসেঞ্জারে যেভাবে পৌঁছায়
সাধারণত প্রতারকরা ফেসবুক বিজ্ঞাপন, মেসেজ, কল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ করে। অনেক সময় তারা বিকাশ/নগদ/রকেট বা ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলে, ‘আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে’ বা ‘আপনি একটি রিওয়ার্ড জিতেছেন’ ইত্যাদি। এভাবে ধীরে ধীরে তারা ভরসা অর্জন এবং OTP বা পিন সংগ্রহ করে।
সাম্প্রতিক প্রতারণার ধরন
বিকাশ/নগদ ফ্রড কল : ফোন করে বলা হয় অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে হবে, না হলে বন্ধ হয়ে যাবে।
ফেক অনলাইন শপ : ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি, কিন্তু টাকা দেওয়ার পর পণ্য আসে না।
জব বা স্কলারশিপ স্ক্যাম : বিদেশি চাকরি বা স্কলারশিপের অফার দিয়ে টাকা নেওয়া।
ফেক ওয়েবসাইট : মূল ব্যাংক বা মোবাইল অপারেটরের নাম ব্যবহার করে বানানো ফেক ওয়েবসাইটে লগইন করানো হয়।
বাস্তব অভিজ্ঞতা
মিরপুরের বেসরকারি চাকরিজীবী রুবেল হাসান জানান, ‘একদিন সকালবেলা বিকাশ অফিসার পরিচয়ে একটি ফোন আসে। তারা বলে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে। আমি না বুঝেই OTP দিয়ে দিই। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৩২ হাজার টাকা উধাও। এরপর যখন বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি, তারা বলে কিছুই করার নেই!’
ডিজিটাল লিটারেসি
বেশিরভাগ মানুষ জানে না OTP মানে কী, অথবা কীভাবে একটি লিঙ্ক ফিশিং হতে পারে। এটিই প্রতারকদের সুযোগ করে দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও সাধারণ মানুষ এখনও নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞ। তাই প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার একান্ত প্রয়োজন।
সরকারি উদ্যোগ ও আইনগত ব্যবস্থা
সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল সাইবার অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করছে। বিটিআরসি প্রতারকদের নম্বর ব্লক করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
তবে এ উদ্যোগগুলো আরও বিস্তৃতভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো উচিত। সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন।
প্রতিরোধের ১০টি করণীয়-
শেষের আগে
ডিজিটাল সুযোগের সঙ্গে এসেছে ডিজিটাল ঝুঁকি। প্রযুক্তির সুবিধা নিতে হলে তার নিরাপত্তাব্যবস্থাও জানতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার না ঘটালে এ প্রতারণার ফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে না।