বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫
মুহিন তপু
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:১১ পিএম
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশি স্টার্টআপদের সম্ভাবনা, প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ আকর্ষণের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিন (৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয় Startup Connect নামে একটি বিশেষ পর্ব। এ অধিবেশনে দেশিবিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এম্পাওয়ারিং ইনোভেশন কানেকটিং অপরচুনিটি’।
নতুন ধারার প্রযুক্তি : রোবট ও পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন
এবারের সম্মেলনে বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছে ‘ডুবটেক’ নামে একটি স্টার্টআপ। তারা পানির নিচে কাজ করতে সক্ষম রোবট তৈরি করেছে, যা বন্দরের জাহাজ ইন্সপেকশন ও অ্যাকুয়াকালচার পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। সহপ্রতিষ্ঠাতা সৌমিক হাসান জানিয়েছেন, তারা বাণিজ্যিকভাবে ইতোমধ্যে এক বছর ধরে কাজ করছেন এবং এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে।
আরেকটি নতুন সংযোজন ‘ইকোসেন্টিল’, যারা লবণাক্ত জলাধারে হেলোফাইডস জাতীয় গাছ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব চাষের সুযোগ তৈরি করছে। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় কৃষি ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে তারা।
এ ধরনের নানা উদ্ভাবনচিন্তা নিয়েই লোকারণ্য ছিল পুরো আয়োজন। দিনব্যাপী স্টার্টআপ কানেক্ট অনুষ্ঠানে দেশিবিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
যেসব বিষয়ে আলোকপাত হয়েছে
Startup Connect সেশনে শুধু প্রকল্প প্রদর্শন নয়, বরং ছিল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আলোচনাও। আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল-
বিশেষজ্ঞদের মতে একটি উদ্ভাবনী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সহায়ক নীতিমালা ও রিসোর্স অ্যাকসেস; যা এ সম্মেলনে গুরুত্ব পেয়েছে।
নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম
চারটি পৃথক হলে দিনব্যাপী চলে সেশন ও আলোচনা। মূল ভেন্যুর বাইরে স্টার্টআপগুলো পণ্যের প্রদর্শনী করে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সামনে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরেছে। বিদেশি উদ্যোক্তা, সরকারি কর্মকর্তা এবং করপোরেট প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি হয় এক অনন্য সংযোগের সুযোগ।
স্টার্টআপবান্ধব নীতিমালা ও সরকারি উদ্যোগ
সম্মেলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সরকারি পর্যায় থেকে নেওয়া ইতিবাচক সিদ্ধান্তগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঘোষণা দেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করা হবে। এ ছাড়া Startup Bangladesh প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে শতাধিক উদ্যোগে সরাসরি বিনিয়োগ করা হয়েছে।
B2B ও B2G সংযোগ তৈরিতে এ সম্মেলনের অবদান অনস্বীকার্য। স্থানীয় স্টার্টআপরা প্রথমবারের মতো সরাসরি আন্তর্জাতিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ও সরকারি ক্রয়কারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছে।
শেষের আগে
Startup Connect প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কেবল চাকরি খুঁজছে না, তারা প্রযুক্তি দিয়ে নতুন সমাধান তৈরিতে আগ্রহী। এ সম্মেলন তাদের জন্য শুধু একটি সুযোগ নয়, এটি প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের দিকেই এগিয়ে যাওয়ার শক্তিশালী পদক্ষেপ।