আইওটি এবং এআইওটি প্রযুক্তি
ইয়ামীর আহমেদ
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৩ পিএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫ ২২:৪১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কল্পনা করুন, এক ভোরবেলা আপনি ঘুম থেকে উঠলেন, কিন্তু ঘড়ি আপনাকে ডেকে তুলল না বরং ঘরের জানালা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল, কফি মেশিন আপনার পছন্দমতো কফি বানিয়ে ফেলল এবং বাড়ির টেম্পারেচার নিজে থেকেই আরামদায়ক হয়ে গেল। আপনি অফিসের পথে রওনা দিলেন, কিন্তু গাড়ি নিজেই আপনাকে ট্রাফিক ফাঁকা রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছে দিল। মনে হতে পারে, এটি কোনো সায়েন্স ফিকশন মুভির দৃশ্য। কিন্তু এটি আর ফিকশন নয়, এটি বাস্তব। ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অব থিংস (AIoT) প্রযুক্তির বদৌলতে এ স্মার্ট জীবন আজ আমাদের হাতের মুঠোয়!
সংযুক্ত পৃথিবীর জাদু : IoT কীভাবে কাজ করে
একটি সাধারণ আলোচনার মাধ্যমে বোঝা কঠিন যে, কত দ্রুত IoT আমাদের পৃথিবী বদলে দিচ্ছে। IoT আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি, ট্রাফিক সিগন্যাল, হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামÑ সবকিছুই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে এবং একে অন্যের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে।
কল্পনা করুন, আপনার ফ্রিজ নিজেই বুঝতে পারছে যে দুধ ফুরিয়ে এসেছে এবং এটি সরাসরি আপনার মোবাইলে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথবা হাসপাতালের কোনো রোগীর হার্টবিট হঠাৎ কমে গেলে IoT প্রযুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারকে সতর্ক করে দিচ্ছে। এটি শুধুই আরামদায়ক জীবন নয়, বরং বিপ্লবের সূচনা!
যেখানে IoT শেষ, সেখানেই AIoT-এর শুরু
IoT ডিভাইস শুধু তথ্য সংগ্রহ করে, কিন্তু এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আর এখানেই আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন AIoT। এটি IoT ডিভাইসগুলোর মস্তিষ্ক!
AIoT প্রযুক্তি এমনভাবে কাজ করে যে এটি শুধু তথ্য সংগ্রহই করে না, বরং সেগুলো বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তও নেয়। ধরুন, একটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি শুধু ক্যামেরা ও সেন্সরের সাহায্যে রাস্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে না, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কখন থামতে হবে, কখন গতি বাড়াতে হবে বা কখন রুট পরিবর্তন করতে হবে।
স্মার্ট ফ্যাক্টরিতে AIoT-র মাধ্যমে মেশিনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন করছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেরামতের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে, এমনকি সমস্যার পূর্বাভাস দিয়ে সময়মতো সমাধান করে ফেলছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা : IoT ও AIoT আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন আনতে চলেছে
এ দুটি প্রযুক্তি একত্রে আমাদের পৃথিবী যেভাবে বদলে দিতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন।
স্মার্ট শহর : রাস্তার ট্রাফিক লাইট থেকে শুরু করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পর্যন্ত সবকিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে, ফলে যানজট ও জ্বালানির অপচয় কমবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিপ্লব : হাসপাতালের প্রতিটি সরঞ্জাম ও ওষুধের ব্যবহার AIoT দ্বারা নির্ধারিত হবে, রোগ নির্ণয় হবে আরও দ্রুত ও নিখুঁত।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা : বাড়ির নিরাপত্তা ক্যামেরা শুধু রেকর্ডই করবে না, বরং সন্দেহজনক কার্যকলাপ শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশকে সতর্ক করে দেবে।
কিন্তু বিপদও আছে!
যেখানে প্রযুক্তি আছে, সেখানে চ্যালেঞ্জও আছে।
নিরাপত্তার ঝুঁকি : হ্যাকাররা যদি IoT ও AIoT ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে তথ্য চুরি ও সাইবার হামলার ভয় বাড়বে।
নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা : একসময় যদি এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে, তবে সেটা কি আমাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে?
শেষ কথা
IoT ও AIoT প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে প্রস্তুত। এটি শুধু আমাদের জীবন সহজ করবে না, বরং কাজের ধরন থেকে শুরু করে মানুষের চিন্তাভাবনার দৃষ্টিভঙ্গি পর্যন্ত পরিবর্তন আনবে। আমরা কি এ প্রযুক্তির প্রতি যথেষ্ট প্রস্তুত? নাকি এটি আমাদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে? সময়ই দেবে এর উত্তর!