শরীফ আহমেদ
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অমরত্বের প্রত্যাশা মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকলেও বাস্তবে মানুষ অমর নয়। তবে ক্লোন প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মানুষকে আজীবন সংরক্ষণ বা তার মতো রোবট তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধারণা থেকেই জন্ম নিয়েছে হিউম্যানয়েড রোবট, যা মানুষের মতো দেখতে ও কাজ করতে সক্ষম। এগুলো এখন আর শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে সীমিত নয়, বাস্তবেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে।
হিউম্যানয়েড রোবটের অগ্রগতি
বর্তমানে হিউম্যানয়েড রোবটগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ও কর্মক্ষম হয়ে উঠছে। এগুলো শুধু বাড়িঘরে সাহায্য করাই নয়, মহাকাশ অভিযানেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব রোবটের মূল চালিকাশক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এআইয়ের সাহায্যে রোবটগুলো নিজেদের পরিবেশ থেকে শিখতে পারে, মানুষের কথা বুঝতে পারে এবং আবেগ শনাক্ত করতে পারে।
উন্নত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ‘সোফিয়া’ (হ্যানসন রোবোটিকস) এবং ‘পেপার’ (সফটব্যাংক)-এর মতো রোবট। এগুলো কথা বলতে, প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ‘বস্টন ডায়নামিকস’-এর অ্যাটলাস রোবট বাধা অতিক্রম করা, পেছন দিকে হাঁটা বা দৌড়ানোর মতো জটিল কাজ করতে পারে।
প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্ভাব্য ক্ষেত্র
হিউম্যানয়েড রোবটের ব্যবহার গ্রাহকসেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ক্রমেই বাড়ছে। প্রবীণদের যত্নের ক্ষেত্রে এসব রোবট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এরা শুধু দৈনন্দিন কাজেই সাহায্য করে না, সঙ্গদানও করে। এ ছাড়া কম্পিউটার ভিশন ও মেশিন লার্নিংয়ের অগ্রগতির কারণে রোবটগুলো জনাকীর্ণ স্থানে চলাচল ও বস্তু শনাক্ত করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও হিউম্যানয়েড রোবটের অগ্রগতি বিস্ময়কর, এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মানুষের আচরণের পুরোপুরি প্রতিলিপি তৈরি করা এবং জটিল সামাজিক পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া এখনও কঠিন। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে এসব রোবট আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানি Figure AI আগামী চার বছরে ১ লাখ হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এআই প্রযুক্তি এবং BMW, OpenAI ও Microsoft-এর সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। Figure AI-এর ‘Figure 02’ রোবট ইতোমধ্যে BMW-এর উৎপাদন লাইনে সফলভাবে পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছে।
প্রতিযোগিতা ও বাজার
Figure AI-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো Tesla, Agility Robotics এবং Unitree-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র রোবটিকস উদ্ভাবনের কেন্দ্রস্থল, চীনও এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। Forbes-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১৬টি হিউম্যানয়েড রোবোটিকস কোম্পানির মধ্যে আটটিই চীনে অবস্থিত।
শেষ কথা
হিউম্যানয়েড রোবটের সম্ভাবনা শুধু উৎপাদন বা শিল্পক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা এবং গৃহস্থালি কাজেও এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে এসব রোবট মানুষের দৈনন্দিন জীবন করে তুলবে আরও সহজ ও নিরাপদ।