সুলতানা সিফাত
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নাহিদুল আর মাহিদুল, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের যমজ ভাই। দেখতে হুবহু এক! বন্ধুরা তো দূরের কথা, পরিবারের সদস্যরাও মাঝেমধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। ছোটবেলা থেকেই দুজনের আগ্রহ ছিল একসঙ্গে একই খেলায়, একই বইয়ে, একই স্বপ্নে। তবে প্রথম দিকে তারা ছিল ক্রিকেটপাগল। বাবা জসিম উদ্দিন ভাবতেন, হয়তো একদিন ওরা বড় ক্রিকেটার হবে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওদের স্বপ্ন বদলে গেল। একদিন ইউটিউবে একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা দেখে ওরা মুগ্ধ হয়ে গেল। কম্পিউটার স্ক্রিনের ছোট ছোট কোড কীভাবে বিশাল সমস্যার সমাধান করে ফেলছে, এ জাদু ওদের মন কেড়ে নিল।
এরপর শুরু হলো নতুন অধ্যায়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর দিনরাত কঠোর পরিশ্রম। দুজন মিলে প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। একে অন্যের সঙ্গী হয়ে একজনের সমস্যা অন্যজন বুঝিয়ে দিত। বইয়ের পাতা আর কোডিং চ্যালেঞ্জে ডুবে থাকত তারা।
অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ! নাহিদুল ৫২তম, মাহিদুল ১০১তম। পুরো পরিবার আনন্দে আত্মহারা! বাবা-মা চোখে জল ধরে রাখতে পারলেন না। ছোট বোন সোয়াত আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
এমন চমকপ্রদ ফলের বিষয়ে নাহিদুল বলেন, ‘এসএসসি পাস করার পর থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে প্রোগ্রামার হওয়ার ইচ্ছা ছিল আমাদের দুই ভাইয়ের। আর এ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বুয়েট ছিল আমাদের প্রথম পছন্দ। সে লক্ষ্যেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষ থেকেই বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি আমরা। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে দৈনিক ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। বাবা-মা আর শিক্ষকরা পড়াশোনায় সব সময় সহযোগিতা করেছেন আমাদের। এখন স্বপ্ন বুয়েটের পাট চুকিয়ে প্রোগ্রামিংয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করা।’
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১০১তম স্থান অধিকার করা মাহিদুল বলেন, ‘বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমাদের বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন সামনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বুয়েটের পড়াশোনার পর্ব শেষ করা। এরপর বিদেশের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাই আমরা।’
এখন ওদের নতুন স্বপ্ন বুয়েটের পথচলা শেষে প্রোগ্রামিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে একসঙ্গে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া। আর সেই স্বপ্নের শুরু এখনই!