এস. এম. ইমদাদুল হক
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:১৯ পিএম
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত দেশের জাতীয় টায়ার ফোর ডেটা সেন্টারে (বিডিসিসিএল) পল্লী বিদ্যুতের তেলেসমাতির সমাধানে এক্সপ্রেস গ্রিড লাইন পথে হাঁটছে সরকার। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থায় বিভ্রাটের শিকার হওয়ার দুরভিজ্ঞতা থেকে এই পরিকল্পনা নিয়েছে বিডিসিসিএল।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানিয়েছেন বিডিসিসিএলের চেয়ারম্যান ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি বিডিসিসিএল বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ২০০ ব্যাটারিও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে যেহেতু পল্লী বিদ্যুতের ওপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না এ জন্য ডেটাসেন্টারের জন্য এক্সপ্রেস গ্রিড লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইন স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। যেহেতু ঢাকা থেকে দূরে তাই লাইনটি স্থাপনে একটু সময় লাগবে।
এদিকে গত ২৩ জুন নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুত সংযোগের কোনো কৌশলই কাজ করেনি দেশের ফোর টায়ারের জাতীয় ডেটা সেন্টারটি। ওই দিন ভোর ৫টা ৮ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত শাটডাউন হয়ে পড়েছিলো ১৬০০ কোটি টাকায় বানানো দেশের জাতীয় এই তথ্য ভাণ্ডারটি। আধাঘণ্টার মতো পুরো সিস্টেম ছিলো শীতল ঘুমে। এর প্রভাবে ওই দিন প্রায় অকার্যকরই ছিল ডি-নথি সিস্টেম। এর কয়েকদিন পরও ব্যাহত হয় ডি-নথির কার্যক্রম। কেননা, সরকারের ৩৪ হাজার দফতরের ডেটা ও সরকারের নথি ব্যবস্থাপনার সব ডেটাসহ যাবতীয় সরকারি ডেটা বিডিসিসিএলে ব্যাকআপ থাকে। প্রতিদিন সরকারের ১৩ হাজারের বেশি অফিস ডি-নথি সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালায়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ডেটার নিরাপত্তা ও ডেটা হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় ২৫ জুন এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ ভুঞা বিডিসিসিএলকে চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ডেটা সেন্টারের সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডি-নথি সিস্টেমসহ অন্যান্য সকল সিস্টেমের প্রয়োজনীয় সার্ভিস ব্যাহত হয়। কিছু সিস্টেম পুনরায় চালু হলেও সব সার্ভিস পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। আর নেটিভ ক্লাউডে থাকা স্টোরেজ সার্ভিসও চালু না হওয়ায় বেশ কিছু অফিস ডি-নথি সিস্টেম ব্যবহারই করতে পারছে না।’
চিঠিতে এই ত্রুটির দ্রুত সমাধান, ডেটা নিরাপত্তার নিয়শ্চয়তা এবং ডেটা হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। এ নিয়ে মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেছেন, ‘আমরা বারবারই বলেছি যে, ডেটার সুরক্ষায় আমরা শুধু চিঠি বা নোটিশ করে থেমে থাকিনি আমরা মিটিংও করেছি যে কীভাবে ডেটা সুরক্ষায় সর্বোচ্চটা করা যায়। এখন এসব বিষয়ে ডেটা সেন্টারের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিডিসিসিএলের ডিরেক্টর কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জামান, বুয়েটের অধ্যাপক ও বিডিসিসিএলের ডিরেক্টর ড. এস. এম. মাহবুবুর রহমান এবং বিডিসিসিএলের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর খালিদ ইবনাল আসাদকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, এই দুর্ঘটনায় কোনো ডেটা লস হয়নি। তবে এমন একটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুত গেলে সিস্টেম যথারীতি মুহূর্তেই সেকেন্ডারি পাওয়ার ব্যাকআপে ব্যাটারিতে চলার কথা। কিন্তু তেল বাঁচাতে ক্রিটিক্যাল অবকাঠামোর সেকেন্ডারি পাওয়ার ব্যাকআপ জেনারেটর অটোমেটেড না রেখে ম্যানুয়াল করে রাখা এবং দু’শতাধিক ব্যাটারির সবই এক্সপায়ার হয়ে যাওয়ায় জেনারেটর চলেনি। একইভাবে ব্যাটারির ক্ষমতা ৩০ মিনিট থাকার কথা থাকলেও তাও ২ মিনিটও সচল থাকেনি।
বিডিসিসিএলের ওই দুর্ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির এক সদস্য খামখেয়ালীর কারণে এমনটা ঘটার কথা উল্লেখ করলেও সব ঘটনায় কাওকে দায়ী করা বা কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন।