প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪ ২১:২১ পিএম
আপডেট : ০৭ মে ২০২৪ ২২:১৫ পিএম
বিশ্বকাপ সামনে রেখে তাওহিদ হৃদয়দের এখন তো সময় স্ট্রাইক রেট নিয়ে ভাবার— আ. ই. আলীম
চেষ্টা হলো মানসিকতা পরিবর্তনের, আলাদা করে পাওয়ার হিটিং কোচের কথাও ভাবল বিসিবি, অনুশীলনে ভারী বলে ছক্কা হাঁকানোর প্রস্তুতিটাও তো হরহামেশাই হচ্ছে— আখেরে লাভ হলো ঠিক কতটা? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যখন দেড়শ ছাড়িয়ে দুইশ হয়ে তিনশ রানের পথে হাঁটছে, বাংলাদেশের ব্যাটাররা তখন খাবি খাচ্ছে বলের সঙ্গে রানের পাল্লা দিতে! আদতে জরুরি কী— ইমপ্যাক্ট ইনিংস নাকি ধারাবাহিকতা? হয়তো এ দুটির কোনোটিই মারকাটারি সংস্করণের বিচারে স্ট্রাইক রেটের কাছে পাত্তা পাবে না! সেই স্ট্রাইক রেট তথা ‘কম বলে বেশি রান’ করতে পারার সক্ষমতা কতজনের? আঙুলের কর গুনে টাইগার ক্রিকেটে যাদের নাম তাদের একজন তাওহিদ হৃদয়। বিশ্বাস রাখা যেতে পারে, জাকের আলী অনিক ও লেগ স্পিনার রিশাদের ওপর!
তাহলে বাংলাদেশ দলের বাকি কতজন? টপ অর্ডার যেখানে মোটাদাগে ব্যর্থ সেখানে জাকের, হৃদয় কিংবা রিশাদ— এই তিনের ওপরই ভরসা। দুজনের স্থান মিডল অর্ডারে, আরেকজন খেলছেন টেলএন্ডারের ভূমিকায়। মারকাটারি সংস্করণে তবুও এদের ওপর কেন আস্থা? তার প্রমাণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি। সিকান্দার রাজাদের অপেক্ষাকৃত খর্ব শক্তির দলটির বিপক্ষেও যখন টপ অর্ডার ধসে পড়েছে, তখন হাল ধরেছেন মিডলে থাকা হৃদয়। এক-দুই করে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও তার ব্যাট হেসেছে। বাংলাদেশেও পেয়েছে বিশ্বকাপের আগে ‘সমালোচনা’ এড়াতে চাওয়া জয়! কিন্তু সমালোচনার আপদ কতটা রুখেছে টাইগারদের এমন পারফরম্যান্স? বিশ্বকাপে হার্ড হিটিং কিংবা দ্রুত রান তোলার সক্ষমতা কতটা হয়েছে শান্তদের? প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন জমতে পারে, উত্তরও আছে। অধিনায়ক শান্ত থেকে ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোচেরও একই ভাষ্য, ‘উন্নতির জায়গা আছে!’
সেই উন্নতির জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে হৃদয়। ছোটখাটো গড়নের তাওহিদ ‘হৃদয়’ কেড়েই চলেছেন। চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তার ২৫ বলের ৩৫ রানকে ‘ম্যাচ সেভিয়ার’ বলাই যায়। দ্বিতীয় ম্যাচেও হেসেছে তার ব্যাট। আগের দিন দেড়শ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেটে খেলা তাওহিদ সেদিন খেলেছেন ১৮৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে। ১৮ বলে ৩৩ রান করে খেলার ব্যাপ্তি কমিয়ে দিয়েছিলেন। তৃতীয় দিনে এসে পেয়েছেন ফিফটি। টপ অর্ডার যখন ধুঁকছিল তখন ব্যাটিংয়ে আসেন। ৯ ওভারে ৬০ রান তোলা দলকে পরের ১১ ওভারে এনে দেন প্রায় একশ রান। ৩৮ বলে হাঁকান তিনটি চার ও দুটি ছক্কা। দেড়শ স্ট্রাইক রেটে আনেন ৫৭ রান। সঙ্গে যোগ হয় জাকের আলী অনিকের ৩৪ বলে ৪৪ রান।
দলের টপ অর্ডাররা যখন রান করতে না পারেন বা দ্রুত রান তুলতে বারবার ব্যর্থ হন, তখন মিডলে ইনিংস গড়ার পাশাপাশি স্ট্রাইক রেট মাথায় নিয়ে ব্যাট চালাতে হয় হৃদয়দের। তরুণ হৃদয়-জাকের-রিশাদরা হয়তো সত্যিকার অর্থেই মানসিকতার পরিবর্তন আনবেন। ডট বল কম খেলা এবং বাউন্ডারি হাঁকানোর সক্ষমতায় বাকি দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেবেন। তবেই না আসবে এই সংস্করণে সাফল্য। স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর বিকল্প আর কিছুই নেই!
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ বাকিরা ব্যর্থই ছিলেন। লিটন বাজে শট খেলে ফিরেছেন। টি-টোয়েন্টির দ্রুত রান তোলার জমানায় ওপেনার খেলেছেন ১৫ বল, দুই চারে যোগ করেছেন ১২ রান! অধিনায়ক শান্তর ব্যাট যেন শীতঘুমে। ৪ বলে করেছেন ৬ রান। যদিও দেড়শ ছাড়িয়েছিল তার স্ট্রাইক রেট!
সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল সর্বোচ্চ ১৮০ রান করলেও স্ট্রাইক রেট খুব একটা সুবিধার ছিল না। ১১৪.৬৪ স্ট্রাইকে ব্যাট চালানো শান্ত এবার আরও বড় দুশ্চিন্তার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে খেলছেন ১০৫.৭১ স্ট্রাইক রেটে। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজে আরও বাজে— ১৫ বলে ১৬, ২৪ বলে ২১ রানের পর আজ ছিল ৪ বলে ৬ রান! টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর হৃদয়-জাকেরের হাল ধরা ইনিংসে দেড়শ ছাড়ায় বাংলাদেশ। সিরিজ রক্ষার দিনে তাও যেন ধরে ফেলছিল জিম্বাবুয়ে। একটা সময় পর শঙ্কাও জেগেছিল, ‘জিতেই যাচ্ছে বুঝি জিম্বাবুয়ে!’ সেই শঙ্কা যদিও বাস্তব হয়নি, তবে কাঁপন নিশ্চয় ধরিয়ে দিয়েছিল টাইগারদের মনে।
সেই কম্পনের কারণ নিশ্চয় স্কোরবোর্ডে রানের ঘাটতি! ‘কম রান কেন’, সেই কারণ খুঁজতে গেলে আসবে স্ট্রাইক রেট! অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তবুও খুশি। সিরিজ জয়ের পর অফিসিয়াল ব্রডকাস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টাইগার কাপ্তান বলেছেন, ‘সবাই যেভাবে পারফর্ম করেছে তাতে খুশি। তারা সবাই নিজেদের প্রমাণ করেছে, বিশেষ করে হৃদয় ও জাকের আলী। পরের ম্যাচে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করব।’ কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে যেখানে সবচেয়ে বেশি ফেরা জরুরি সেই স্ট্রাইক রেট নিয়ে কতটা চিন্তিত শান্তরা! বিশ্বকাপ সামনে রেখে এখন তো সময় স্ট্রাইক রেট নিয়ে ভাবার!