প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ২২:৩৫ পিএম
টস এবারও জিতে শান্ত নিয়েছেন ফিল্ডিং— আ. ই. আলীম
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৮ উইকেটের ব্যবধানে। টস জিতে আগে বোলিং এবং ম্যাচ জয়। দ্বিতীয় ম্যাচেও টস ভাগ্য পক্ষে গেছে স্বাগতিকদের। আবারও আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টাইগার কান্ডারি নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশ্বকাপ সামনে রেখে ব্যাটারদের রান-উৎসব করার সুযোগটা নেননি শান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে, টাইগার ব্যাটারদের চেয়ে উজ্জ্বল বোলাররা। তাই টস জিতলেই পরম আস্থায় বোলারদের দিয়ে ম্যাচ শুরু করছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজেও দেখা গেছে একই চিত্র। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বড় জয় সত্ত্বেও সেই মুখস্থ ফর্মুলাতেই আটকে আছে শান্ত ব্রিগেড।
টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি— ক্রিকেটের সব সংস্করণেই বহুল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টস। পরিসংখ্যান বলছে, টি-টোয়েন্টিতে এখন অবধি ৬১টি জয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশ জিতেছে টস জয়ের ম্যাচে। আরও খোলাসা করে বললে, রান-তাড়ায় এসব জয় টাইগারদের। ২০০৬ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলা ও জেতার ম্যাচেও টস জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগে ফিল্ডিংয়ে এসেছিল ঐতিহাসিক জয়। ২০০৭ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে পাওয়া জয়টিও টস জিতে পরে ব্যাট করে। সবশেষ তিন সিরিজেও টাইগারদের একই ফর্মুলা। অধিনায়ক বদলেছে, সময় পেরিয়েছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে— টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার ট্রেন্ড কমেনি। টাইগাররা বহুবার এই ফর্মুলায় হেঁটে সমালোচনার মুখে পড়েছে, ব্যাটিং ধ্স এবং বাজে হারও দেখেছে। পিছপা হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির’ সিরিজেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মেনে চলেছেন মুখস্থ ট্রেন্ডটি।
যদিও কন্ডিশন, ম্যাচের পরিস্থিতি বা প্রতিপক্ষের ওপর তাকানোর সময় তেমন যেন পানই না বাংলাদেশের অধিনায়করা। টস জিতেই ফিল্ডিং। বিপক্ষ দল যত দুর্বল হোক না কেন, পরিস্থিতি যেমন হোক নাই-বা কেন— বাংলাদেশের একই ফর্মুলা। টাইগাররা তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম দুটিতে তো বটেই, ২০০৭ বিশ্বকাপে শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষের জয়টিতেও শুরুতে ফিল্ডিং করেছে, টসও জিতেছিল। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবকটিতে পরে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। সিরিজটি জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে।
একই বছর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে পরে ব্যাট করে জয়। দ্বিতীয়টিতে ফিল্ডিং না নিয়ে হার। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেই ফর্মুলা। নেপাল ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দুটিও পরে ব্যাট করে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালের একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও জয় এসেছে রান তাড়ায়। সবশেষ সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচেই টসভাগ্য সহায় হয়েছিল। পিচ এবং আবহাওয়া নিয়ে কথা থাকলেও বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর প্ল্যান ছিল ভিন্ন। কুয়াশার প্রকোপ থাকতে পারে জেনেও টস জিতে ম্যাচ রেফারিকে জানিয়েছিলেন, ‘আগে ফিল্ডিং করব।’
তার আগের সিরিজেও ব্যত্যয় হয়নি। নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। পেয়েছিল ঐতিহাসিক জয়। কিন্তু পরের ম্যাচে টস কথা বলেনি, ফলও আসেনি টাইগারদের পক্ষে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও সেই ফর্মুলা। যে সিরিজে প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে ধরা হচ্ছে সেই সিরিজেও কেন চ্যালেঞ্জ নিতে কার্পণ্যতা শান্তদের, আগে ব্যাটিংয়ের যে ট্রেন্ড চলছে প্রতিপক্ষ সেটি ভণ্ডুল করে দিলে তো গোঁড়ায় গলদ। অনেকটা যেন এমন, টস হেরে ব্যাটিং পেলে ম্যাচটাও হারের খাতায় নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে যেখানে ব্যাটিংটাই সবচেয়ে বেশি আলোচনার সেখানে এমন গা বাঁচানো সিদ্ধান্ত দৃষ্টিকটুও খানিকটা!
নাজমুল হোসেনরা প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হেঁটেছে একই পথে। শুরুতে বোলিং নিয়ে তাসকিনের তোপ, শরিফুলের লাইন ফিরে পাওয়া, সাইফউদ্দিন ও রিশাদের কার্যকরী বোলিং— সব মিলিয়ে আরও একবার পরাস্ত জিম্বাবুয়ে। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৩৮ রান পর্যন্ত যেতে পারে সফরকারীরা। অভিষেক হওয়া জনাথন ক্যাম্পবেল ও ব্রেইন বেটে বাদে বাকিরা খেয়েছেন খাবি। শরিফুল, মাহেদী ও সাইফউদ্দিন নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
১৮ রান খরচায় দুটি শিকার তাসকিনের ও ৩৩ রান দিয়ে রিশাদও ফিরিয়েছেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটারকে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বেনেট ৪৪ রান ও ক্যাম্পবেল করেছেন ৪৫ রান। বাকিদের সবাই ছিল আসা-যাওয়ার মাঝে। জিম্বাবুয়ের দেওয়া দেড়শ রানের কমের এই লক্ষ্য খুব একটা কঠিন নয় শান্তদের। জয়ের ধারায় থেকেই বিশ্ব আসরে যেতে চলেছেন টাইগার ক্রিকেটাররা।