প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ২৩:৪৩ পিএম
লিটন ভুগছেন, তবে তার পরিশ্রমে বিশ্বাস রাখছে ব্যাটিং কোচ— ফাইল ছবি
ব্যাট-প্যাডের মাঝে বিশাল গ্যাপ, পায়ের অবস্থানে গড়বড় কিংবা বাজে শট সিলেকশন— ব্যাটিংয়ে বেশ কয়েক মাস লিটন দাস ভুগেছেন নানান সমস্যায়। ফলস্বরূপ ব্যর্থ হয়েছেন, রান পাননি। সমালোচনাও হচ্ছে বেশ। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন এবং ফিরেছেনও। পুরোনো ফর্ম তবে ফেরেনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও লিটনের পুরোনো সেই ভুল। টাইগারদের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প দাঁড়িয়েছেন লিটনের পাশে। ইতিবাচক মানসিকতায় জোর দিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং কোচ।
নিজেও ইতিবাচক মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন হেম্প। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রায় সবার প্রসঙ্গেই প্রশংসা করেছেন ব্যাটিং কোচ। ইংলিশ কাউন্টি ও অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাপুষ্ট এই কোচের বিশ্বাসের সবটা জুড়ে পরিশ্রম। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই ‘পরিশ্রম’ শব্দটিই বলেছেন কয়েকবার। সবশেষ লিটন-তানজিদ-তাওহীদদের অ্যাপ্রোচের কথাও বলেছেন। মোদ্দাকথা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নামার আগে ব্যাটারদের স্তুতিই গেয়েছেন ব্যাটিং কোচ।
ফর্মহীন লিটনের কাঁধে আস্থার হাত রেখেছেন হেম্প। টাইগার কোচ বিশ্বাস করেন পরিশ্রম করে যাওয়া লিটন গিগগিরই সফলতা পাবেন, ‘লিটন হয়তো রান পাচ্ছে না। কিন্তু নিজের খেলাটা নিয়ে সে অনেক পরিশ্রম করছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে প্রতিনিয়ত আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ক্রিকেটাররা এমন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে, কখনও তারা রান করবে, কখনও করবে না। এখন হয়তো সে অতটা ধারাবাহিক নয়। তবে লিটন এটি নিয়ে কাজ করছে এবং কঠোর পরিশ্রম করছে। এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
লিটনের সমস্যা টেকনিক্যাল নাকি মনস্তাত্ত্বিক? হেম্প উত্তর দিয়েছেন ‘পরিশ্রম’ শব্দটি টেনে, ‘আসলে কাজটি অনেক কঠিন। নতুন বল অনেক সময় এদিক-সেদিক করে, গত রাতে (শুক্রবার) যা করল (লিটন)। এখানে ব্যাট করাটা কঠিন, কারণ নতুন বলের চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে সে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।’
তাওহীদ হৃদয়ের ‘ফেয়ারলেস’ ক্রিকেটের আলাদা করে প্রশংসা করেছেন হেম্প। খুব বেশি শক্তিশালী নন হৃদয়। ছোটখাটো গড়নের হলেও হাঁকাতে পারেন বড় বড় সব ছক্কা। ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক সব জায়গাতেই সামর্থ্য দেখিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে স্মার্ট ক্রিকেট খেলা, স্ট্রাইক রোটেশন সবকিছুতেই হৃদয়ের হৃদয়কাড়া মুনশিয়ানা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন ১৮ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস।
তাওহীদ কি তবে ‘ফেয়ারলেস’ ক্রিকেটার? হেম্প মনে করেন দলের বাকি সবারও এমন অ্যাপ্রোচে খেলা উচিত, ‘আমি তা বলব না। ফেয়ারলেস বলতে কী বুঝিয়েছেন তার ওপর নির্ভর করছে। শট খেলার ক্ষেত্রে আসলে সবাইকেই এভাবে কোচিং করাই। ইতিবাচক থাকতে বলি। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে বলি। এভাবেই খেলোয়াড়দের সাহস জুগিয়ে থাকি। আসলে পুরো গ্রুপের ক্রিকেটাররাই দারুণ প্রতিভাবান। সে (হৃদয়) এমন একজন যে প্রতিনিয়ত নিজের খেলাটাকে উন্নত করতে চায়। কোচিংয়ের দিক থেকে দেখলে বিষয়টি দারুণ। আপনি এমন ক্রিকেটারই চাইবেন যে খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সে এমনই একজন। হৃদয় অনেক পরিশ্রম করে।’
পরিশ্রমের মাধ্যমে তরুণদের উন্নতিও মনে ধরেছে হেম্পের। গত ম্যাচে অভিষেকে ফিফটি হাঁকানো তানজিদ হাসান তামিমের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন, ‘সে উন্নতি করছে। তানজিদ ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও খেলেছে। এইচপি প্রোগ্রামের আওতায় ছিল। আমার তাকে আগে দেখার অভিজ্ঞতা আছে। সে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসেই এগোচ্ছে। আগের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে। তরুণ ক্রিকেটারদের নিজের শক্তির জায়গা প্রয়োগ করে ভালো করতে দেখার বিষয়টি দারুণ। বর্তমানে সে সঠিক পথেই এগোচ্ছে।’
তবে মারকাটারি সংস্করণের বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং নিয়েই টাইগারদের যত দুশ্চিন্তা। স্ট্রাইক রেট, পাওয়ার প্লের সদ্ব্যবহার, দ্রুত রান তোলা এবং কার্যকরী ইনিংস খেলা— সবকিছুতে বাকিদের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। টাইগারদের ব্যাটিং কোচের মতে নিজেদের শক্তির জায়গা ঠিক রাখলেই সব সমস্যার সমাধান।
হেম্পের মতে, ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ হতে হবে সামর্থ্য অনুযায়ী, ‘শুধু নিশ্চিত করতে চেয়েছি আমাদের শক্তির জায়গা অনুযায়ী যেন খেলতে পারি। এভাবেই ক্রিকেটারদের খেলতে দেখতে চাই। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে। সিদ্ধান্ত নিতে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে কাজটা ভালো করেন তা থেকে যেন দূরে সরে না যান। যদি সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে খেলোয়াড়রা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো করবে। আমরা ম্যাচ জিততে পারব। এটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’