আরিফুর রাজু
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৪ ১৬:২৪ পিএম
আপডেট : ০২ মে ২০২৪ ১৬:৩৭ পিএম
হাসি তার চিরসঙ্গী। হেসেছেন, হাসিয়েছেন...
খাও-দাও, ফুর্তি করো—ক্যারিয়ার জুড়ে ব্রায়ান লারার জীবনদর্শন প্রায় এরকমই। দিনে রেকর্ড ঠুকেছেন। সন্ধ্যায় হাসপাতালে। সেখান থেকে রিলিজ না নিয়েই গভীর রাতে নাইট ক্লাবে। এখানেই শেষ নয়। বরং সারারাত মজা-মাস্তি করে পরেরদিনই বাইশ গজে। ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছেন কোনো এক হতভাগার ওপর। বোলারটিও বল ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। হন্য হয়ে খুঁজতেন শত প্রশ্নের উত্তর!
একবার মাঠে এমন এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন লারা, যা দেখে সতীর্থদের চক্ষু চড়কগাছ। অবাক বনে যান আম্পায়ার, গ্যালারিভর্তি দর্শক। ওয়ারউইকশায়ারে খেলার সময় স্লিপে দাঁড়ানো লারার পকেটে বেজে ওঠে রিংটোন। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই ফোন বের করে কথা বলা শুরু করেন। এছাড়াও টিমমেট-বোর্ডের সঙ্গে সারাক্ষণই ঠোকাঠুকি লেগে থাকতো। তা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। দেখা গেল, টিমবাসে সতীর্থরা মাঠে ঢুকছেন, লারার এন্ট্রি ঘণ্টা দেড়েক পর। আবার ফেরার সময়ও হোটেলে না গিয়ে অন্য ঠিকানায়।
খামখেয়ালিপনা মনোভাবের কারণেই লারার জীবন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক কিছুই। সতীর্থ-বোর্ডের সঙ্গে একপ্রকার ‘সাইলেন্ট ওয়ার’ লেগেই ছিল। তা না হয় লারা চেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ানদের হারানো সুদিন ফিরিয়ে আনতে, সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে। পারেননি, পারেননি নিজের কারণেই। উল্টো বোর্ড আর ভাগ্যের সাথে দ্বন্দ্বটাই বাড়িয়েছিলেন!
খামখেয়ালি হলেও ঠিকই নিজের গায়ে আঘাত এলে বেপরোয়া হয়ে উঠতেন লারা। যা একটি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট । ১৯৯৯ সালে জ্যামাইকা টেস্টের আগেরদিন লারা সাবিনা পার্কে নেট প্র্যাকটিস করতে গিয়ে দেখেন সব নেট অস্ট্রেলিয়ানদের দখলে। তার সুযোগ ছিল না প্র্যাকটিসের। তাতে রেগে মাঠ ছাড়েন। পরের দিন দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নীরবে মেটান আগের দিনের জ্বালা। পরের টেস্টেও খেলেন অসাধারণ ইনিংস। আর সেই সিরিজে অ্যান্টিগার ম্যাচে তো রীতিমতো ৮২ বলে তুলেন সেঞ্চুরি।
ক্রিকেট যেখানে ধ্যান-তাপ্যসা আর আরাধনার জায়গা, সেখানে লারার চোখে ক্রিকেট স্রেফ খেলা। জেতার জন্য, নিজের জন্য খেলা। ক্যারিয়ার জুড়েই যে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি সে কি করে কন্ট্রোল করবে ক্রিকেট। আর যদি সেটাই হতো, তবে অনেক গ্রেটদের শীর্ষে থাকতো তার নাম। তা না হয়, ক্রিকেটে পুরো দল মিলে ৫০০ ই যেখানে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার মতো ব্যাপার, সেখানে একাই ৫০১ কি করে করেছিলেন লারা। যার ৫০১ তোলার মেন্টালিটি থাকে তার তো জীবন এবং ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত থাকার কথাই বেশি । মাদকতা ছড়ানো ব্যাটিং, তৃপ্তি ঢেকুর তুলে দর্শকরা তাকে ততদিনই দেখেছে যতদিন লারা লড়েছেন স্বমহিমায়, শরীরে পড়েছে কারো খোঁচা ।
এই খেয়ালি গ্রেট কেমন ছিলেন তার আরেকটি তথ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তখন পুরোপুরিই লারা নির্ভর ছিল। একজন ব্যাটসম্যান একটা দলের কতটা সমার্থক হতে পারে, সেটা উদাহরণ না টানলে বুঝানো যাবে না। লারার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোট রানের ২০ শতাংশ তার করা। এই ক্ষেত্রে তার উপরে আছেন মাত্র দুজন। একজন ব্র্যাডম্যান (২৩%) এবং অন্যজন হলেন ব্ল্যাক ব্র্যাডম্যান খ্যাত জর্জ হেডলি (২১%)।
যাই হোক, জেন্টালম্যানের ক্রিকেটে জেন্টাল হয়ে না থাকতে পারলেও ঠিকই আভিজাত্যের টেস্টে রেকর্ড ৪০০, ফার্স্ট ক্লাসে হানিফ মোহাম্মদকে ছাড়িয়ে অপরাজিত ৫০১ রান দিয়েই অমর হয়ে থাকবেন লারা। 'ক্রিকেটের বরপুত্র' বনে যাওয়া ব্রায়ান চার্লস লারার আজ শুভ জন্মদিন। ১৯৬৯ সালের ২ মে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো মিচেল স্ট্রিট ক্যান্টারোতে জন্মগ্রহণ করেন -দ্য প্রিন্স অব ত্রিনিদাদ।