× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাবিনাদের প্রতি এই অবহেলার শেষ কোথায়

নাজমুল হক তপন

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৮ পিএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৪ পিএম

নারী ফুটবল লিগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাফুফের কর্মকর্তারা

নারী ফুটবল লিগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাফুফের কর্মকর্তারা

এই প্রচণ্ড তাপদাহের মাঝে মেয়েদের ফুটবল লিগ ফ্লাডলাইটে না হয়ে কেন দিনের বেলা আয়োজন করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার তার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমরা রাতের বেলায় খেলা আয়োজন করলে লিগের খরচ বেড়ে যেত। প্রতি ম্যাচের জন্য আমাদের ১৩ হাজার টাকা ফ্লাডলাইট খরচ বাবদ দিতে হতো। সেটি বহন করার সক্ষমতা আমাদের নেই।’ মেয়েদের ফুটবল লিগের ম্যাচগুলো হবে সাড়ে তিনটা ও সকাল সাড়ে নয়টায়। বিদ্যুৎ বিলের ১৩ হাজার টাকা বাচাঁতেই অনেকটা তপ্ত উনুনের মাঝেই খেলতে বাধ্য করা হচ্ছে মেয়েদের। 

মেয়েদের লিগের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের সিনথেটিক টার্ফে। এমনিতেই এই টার্ফ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নাই। গত কয়েক বছর ধরেই এই টার্ফকে বলা হচ্ছে ‘চোটের ফাঁদ’। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে অসহনীয় গরম। দেশে চলছে রেকর্ড দাবদাহ। এই অবস্থায় সিনথেটিক টার্ফে গরম কোন মাত্রা নেবে সেটা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতে স্বাভাবিক মাঠের তাপ শোষণের আলাদা ক্ষমতা থাকে, যেটি থাকে না টার্ফে। মোট কথা সিনথেটিক টার্ফ মানেই তাপ বর্ধক। দিনের বেলায় এই তাপ বর্ধক টার্ফে খেলাটা কতটা ঝুকিপুর্ণ, সে হিসাবের ধার ধারেনি বাফুফে। সন্ধ্যার পর ম্যাচ আয়োজন করলে, কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে খেলতে পারত সাবিনা খাতুনরা। কেননা সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমতে থাকে। কিন্তু মেয়েদের কথা ভাবার সময় কোথায় ফুটবল অভিভাবক বাফুফের।  

আমাদের নারী ফুটবলারদের নিয়ে কারোরই যেন ভাবার সময় নাই। বঞ্চনা আর অবহেলার এক ধারাবাহিক গল্প যেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল। ধরা যাক ঘরোয়া লিগের কথাই। গত বছরের লিগ আয়োজিত হচ্ছে এবার। এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমের পর ছয় বছর আলোর মুখ দেখেনি মেয়েদের লিগ। পরের তিন বছর লিগ হলেও , আবারও এক বছরের বিরতি। মেয়েদের লিগ নিয়ে আগ্রহ নাই দেশের বড় ক্লাবগুলোর। আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ব্রাদার্স ইউনিয়নের নারী ফুটবলের কোনো দল নাই। এনিয়ে অনেক কথা উঠলেও, জায়ান্ট ক্লাবগুলো কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আগের তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবারের লিগে নাই। অর্থাৎ মেয়েদের ফুটবল থেকে সরে এসেছে তারা। এছাড়াও বসুন্ধরা সরে এসেছে স্পন্সর থেকেও। নারীদের লিগে এর আগে টানা তিনবার স্পন্সর হিসেবে ছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল এবারের লিগেও। কিন্তু লিগ শুরুর তিন দিন আগে কোনো কারণ না দেখিয়েই স্পন্সর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বসুন্ধরা। 

২০২২ সালে নেপাল থেকে সাফ শিরোপা জেতার পর মনে হয়েছিল, ন্যূনতম হলেও কিছু সুযোগসুবিধা পাবে আমাদের নারী ফুটবলাররা। ছাদ খোলা বাসে লাখো জনতরঙ্গের উচ্ছ্বাসে চুপসে গেছে বাযুশূন্য বেলুনের মতোই। সাফ বিজয়ীদের সংবর্ধনার মঞ্চে ফুটবল ফেডারেশন কর্মকর্তাদের ভীড়ে মেয়েদের খুঁজে পাওয়াটাই হয়ে উঠেছিল দুুষ্কর। এনিয়ে ওই সময় মজা করে লেখা হয়েছিল, বাফুফে কর্তা ব্যক্তিরা মেয়েদের সংবর্ধনা দিলেন না নিজেরা সংবর্ধনা নিলেন! ওই সময় আবেগাপ্লুত বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন বলেন, 'মেয়েরা এবারে সাফ চ্যাম্পিয়ন হবে ভাবিনি। আমার ধারণা ছিল পরের সাফে আমাদের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হবে।’ ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের প্রায় সবাই ছিল টিন এজার। গড় বয়স বিশের নিচে। বড়দের প্রতিযোগিতায় টিন এজারদের এত বড় অর্জন, বোধকরি ভাবাও যায় না। খেলাধুলায় সর্ব্বোচ্চ সাফল্য আসে ২৭-৩০ বছর বয়সে। আর আমাদের সাফজয়ী মেয়েদের বয়স ছিল বিশের নিচে।  

সঠিক যত্ন পেলে এই টিন এজাররা কত উঁচুতে উঠতে পারত! অথচ যত্ন তো অনেক দূরের ব্যাপার, অবহেলা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি আমাদের চ্যাম্পিয়ন কন্যাদের ভাগ্যে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাতারাতি ব্রাত্য বনে গেল বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। প্রায় বছর খানেক কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলারই সুযোগ পেলেন না সাবিনারা। গত বছর এপ্রিল মাসে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক বাছাইপর্বে অংশ নিতে পারেনি মেয়েরা। সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও টাকার অভাবের কারণ দেখিয়ে অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠানো হয়নি সাফ বিজয়ীদের। এনিয়ে হতাশা ক্ষোভ বাড়তে থাকে মেয়েদের মধ্যে। দুঃখে হতাশায় অনেকেই চলে যান অকাল অবসরে। ফুটবলকে বিদায় বলে দেন সাফজয়ী দলের সদস্য আনুচিং মগিনি ও সাজেদা খাতুন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অবসরের ঘোষণা দেন সাফ জয়ে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখা সিরাত জাহান স্বপ্না। দেশের ফুটবল ছেড়ে চীনে পাড়ি জমান রক্ষনভাগের অতন্দ্র প্রহরীখ্যাত আঁখি খাতুন। কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশ নারী ফুটবল জাগরণের রুপকার গোলাম রব্বানী ছোটন। নারী ফুটবলের সাজানো সংসারে দেখা দেয় ভাঙন।

সাফ শিরোপা জেতার পর মেয়েদের জন্য দেয়া হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্রতিশ্রুতি। সেটা থেকে গেছে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই। গতবছরের লিগ এ বছরের মাঠে গড়াচ্ছে। অগোছালো আর অব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এবারের লিগের। তারপরও বঞ্চনা নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই মেয়েদের। খেলাটাকেই দেখছেন বড় করে। অন্যতম দল নাসরিন একাডেমির অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেছেন, ‘যেসব ক্লাব মেয়েদের এই লিগে অংশগ্রহণ করছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করছি এবারের লিগ অনেক জমজমাট হবে। দলগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

উপেক্ষা, অবহেলা আর বঞ্চনা নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই মেয়েদের। কেননা সাবিনারা খুব ভালভাবেই জানেন, সাঁতারের ওপর পানি নাই। সাঁতার কাটতে হলে, নিচে ১০ হাত পানিও যা, ৫০ হাতও তাই। উজান স্রোতে সাঁতার কাটাই যে আমাদের নারী ফুটবলারদের ললাট লিখন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা