প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪৩ এএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫১ পিএম
নাহিদা আক্তার
সামনে নারী এশিয়া কাপ। জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসতে যাচ্ছে মহাদেশীয় এ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আর অক্টোবরে মাঠে গড়়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের মেয়েদের এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বাংলাদেশ। নতুন দুই মিশনের জন্য লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে ভারতও। ভবিষ্যৎ ট্যুর প্ল্যানের ফাঁকা স্লটে দুদেশের মেয়েরা খেলতে যাচ্ছে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজটির জন্য দিন কয়েক ধরেই প্রচণ্ড তাপদাহকে উপেক্ষা করেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে দুদল। তীব্র গরমে অনুশীলন করতে গিয়েই নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে নারী ক্রিকেটারদের। অবিশ্বাস্য রকমের ক্লান্তি ভর করছে নিগার সুলতানা জ্যোতি ও হারমানপ্রীত কাউরদের ঘাড়ে। মাঠের লড়াই তো এখনো শুরুই হয়নি। তাতেই এই করুণ দশা। আর মূল লড়াই মাঠে গড়়ালে মেয়েদের যে অবর্ণনীয় ধকল পোহাতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতের মেয়েরা তো থাকবেনই মাঠে। তার সঙ্গে ফারজানা হক-মারুফা আক্তারদের লড়তে হবে ভয়াবহ গরমের বিরুদ্ধেও।
মাত্রাতিরিক্ত দাবদাহের চোখরাঙানিকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে খেলতে হবে নারী ক্রিকেটারদের। দেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের আবহাওয়ার বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন। প্রকৃতির ভয়ানক চেহারার বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজেদের প্রস্তুত করছেন খেলোয়াড়রা। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সহ-কাপ্তান নাহিদা আক্তার গণমাধ্যমে ক্রিকেটারদের মাঠের বাইরের শত্রু খরতাপে বিপর্যস্ত পরিবেশ নিয়ে বলেন, ‘যে গরম পড়ছে, সবার কষ্ট হচ্ছে। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে এ নিয়ে অজুহাত দেওয়া উচিত নয়। তারপরও আমরা বলব, ঢাকার থেকে এখানে...আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি, মানিয়ে নিতে হবে। এটা নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা আমাদের মনোযোগ খেলায় রাখছি।’
গরমের মাঝে যতটুকু অনুশীলন করতে পেরেছেন তাতে সন্তুষ্ট নাহিদা। দলের প্রস্তুতি নিয়ে তারকা এ ক্রিকেটার বলেন, ‘আমরা এখানে খুবই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। আরও একটা দিন আছে। আশা করি, ভালো প্রস্তুতি হবে। গতকাল আর আজ আমাদের ব্যাটাররা খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। বোলাররাও খুব ভালো করেছে।’
নিজেদের ঘরের মাঠের সর্বশেষ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছেন বাঘিনীরা। তবে এবার প্রস্তুতি সন্তোষজনক হওয়ায় ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজের আগে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন টাইগ্রেসরা। ভারতবধের স্বপ্ন দেখছেন দেশের নন্দিনীরা। নাহিদার কণ্ঠে ঝরল তেমন দৃঢ় প্রত্যয়, ‘আমাদের ভালো খেলতে হবে। এটা নিশ্চিত যে ভালো না খেললে ম্যাচ জেতা যাবে না। যেদিন ভালো খেলবেন, সেদিন ম্যাচ জিতবেন। আমাদেরও সে চেষ্টাই থাকবে। এখন আমরা একটা ভালো জায়গায় আছি। আমরা যদি আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে ভালো কিছু করতে পারব।’
এ স্বপ্নযাত্রায় সুখস্মৃতি আর পরিসংখ্যানও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েদের। ফাহিমা-স্বর্ণরা ভারতের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে এর আগে হোম কন্ডিশনের ফায়দা লুটেছে বেশ কয়েকবার। নাহিদাদের সেই মধুর অতীত আবার নিকট ভবিষ্যতের। গেল বছর শক্তিমত্তায় যোজন যোজন এগিয়ে থাকা ভারতের মেয়েদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। জমে উঠায় তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অবশ্য ভারত শেষ হাসি হাসে ২-১ ব্যবধানে। দাপুটে পারফরম্যান্সে একদিনের তিন ম্যাচের সিরিজটি তো অমীমাংসিত থেকে যায় ১-১ এ।
লাল-সবুজের জার্সিধারীদের চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ে যায় ভারতের ক্রিকেটারদের স্লেজিং, বাজে আচরণ আর বিতর্কের আড়ালে। নতুন সিরিজের আগে মাঠের এবং মাঠের বাইরের পুরোনো ইস্যুগুলোর পুনরুত্থান হয়েছে। তবে নাহিদার অবশ্য কোনো ইচ্ছেই নেই সেই পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার। তাই তো জোর দিয়েই জানালেন, দলের চোখ কেবল মাঠের লড়াইয়ে, ‘আমরা ওটা চিন্তা করছি না। আমরা চিন্তা করি মাঠে কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলব, কীভাবে জয় পাব…।’
কিভাবে প্রতিবেশী ভারতের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করা সম্ভব, সেটা বেশ ভালোই করেই জানেন নাহিদারা। অতীতে ভারতকে হারানোর স্মৃতি ঘাটলে ব্যাপারটা হয়ে যাবে স্পষ্ট। ঘূর্ণি বিষ ছড়াতে বাংলাদেশের মেয়েদের স্পিন অস্ত্র ভান্ডার দারুণ সমৃদ্ধ। আর মারুফা আক্তারের অন্তর্ভুক্তি দলের পেস আক্রমণের ধারকে করেছে আরও শাণিত। ভারতের প্রতাপশালী ব্যাটিং লাইনআপকে রুখার জন্য বোলিং ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞতাই এখন দেশের অদম্য মেয়েদের আসল শক্তি। নাহিদা বলেন, ‘শক্তির জায়গায় যারা ভালো করবে, তারাই এগিয়ে থাকবে। আমাদের বোলাররা ভালো করছে, ব্যাটাররাও করছে। ফিল্ডিংয়ে চেষ্টা করছি কীভাবে আরও ভালো করা যায়।’
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গড়াচ্ছে আগামী রবিবার। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ হবে ৩০ এপ্রিল। ২ ও ৬ মে হবে তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টি। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ হবে ৯ মে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম দুই ও শেষ ম্যাচ হবে দিনে-রাতে। ডে-নাইট ম্যাচগুলো শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। একই ভেন্যুর আউটারে তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হবে দিনের আলোতে। শুরু হবে দুপুর ২টায়।