প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫২ পিএম
পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদ এখন বাংলাদেশ স্পিন বোলিং কোচ; ছবি: বিসিবি
গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদ। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী এই লেগিকে আসন্ন ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর গত সোমবার বিকালে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান ৫৩ বছর বয়সি এই কোচ।
আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তিনি হাজির হয়েছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। তার সঙ্গে নতুন ভিডিও অ্যানালিস্ট মহসিন শেখও এসেছিলেন বিসিবিতে। বিসিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার পর বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্সের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস বাংলাদেশ দলের অনুশীলন কিট মুশতাকের হাতে তুলে দেন।
এরপর বাংলাদেশের নয়া স্পিন বোলিং কোচের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মুশফিকুর রহিম, অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত, তাইজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। এ সময় প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেও আলাপ করেন মুশতাক। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প, পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস ও নবনিযুক্ত ট্রেনার ন্যাথান কিলিও উপস্থিত ছিলেন।
আগামী জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে নিজেদের প্রস্তুত করতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে টাইগাররা। আগামী ৩ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব শুরু করবেন মুশতাক। এজন্য আগামী ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে হবে প্রস্তুতি ক্যাম্প। সেখানেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ খেলবে নাজমুল হোসেন শান্ত ব্রিগেড। এরপর ঢাকায় হবে শেষ দুটি ম্যাচ। এদিকে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল বাংলাদেশে পৌঁছাবে ২৮ এপ্রিল। সেদিনই তারা চট্টগ্রামে চলে যাবে।
বাংলাদেশ দলে যুক্ত হয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন মুশতাক। এক ভিডিও বার্তায়
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ হওয়া আমার জন্য অনেক বেশি সম্মানের। আমি
আমার দায়িত্ব পালনের দিকে পুরো মনোযোগ দিচ্ছি এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ক্রিকেটারদের মধ্যে
ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি সব সময় বিশ্বাস করি তারা (বাংলাদেশ) বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর দলগুলোর
একটি।’ যোগ করেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) যেকোনো দলকেই হারাতে পারে, কারণ তাদের সেই সামর্থ্য
ও প্রতিভা আছে। আমি চেষ্টা করব আমার এই বিশ্বাসটাই তাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশের
সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত।’
খেলোয়াড়ি জীবনে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে
এসেছিলেন মুশতাক। এত বছর পর আবার এসে স্মৃতির সাগরে একটু ডুব দিলেন ৫২ টেস্ট ও ১৪৪
ওয়ানডে খেলা স্পিনার, ‘১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে (বাংলাদেশ সফরের) দলে ছিলাম।
বাংলাদেশ সফরে আসা সবসময়ই দারুণ। কারণ এখানকার স্থানীয়রা পাকিস্তানি ক্রিকেটার ও পাকিস্তানি
মানুষের বড় ভক্ত। আমরাও এখানে আসতে ও ক্রিকেট খেলতে সবসময় উপভোগ করেছি। এখানকার আতিথেয়তা
অসাধারণ। খাবার ও সবকিছুই দারুণ পছন্দ করেছিলাম আমরা’।
খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবে আলাদা করে
নিজের পরিচিতি গড়তে পেরেছেন মুশতাক। বাংলাদেশের
কোচের দায়িত্বে আসার আগে বেশ কয়েকটি জাতীয় দলের স্পিন বিভাগ সামলেছেন তিনি। ২০০৮-১৪
ইংল্যান্ড, ২০১৮-১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০২০-২২ পাকিস্তান জাতীয় দলের স্পিন কোচ ছিলেন
সাবেক এই তারকা লেগি। এ ছাড়া ২০১৪-১৬ সময়কালে তিনি বোলিং পরামর্শক ছিলেন পাকিস্তানের।
বিভিন্ন
দায়িত্ব পালন করেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। বাংলাদেশেও তিনি কোচ হিসেবে নিজের ছাপ
রাখতে চান, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, কোচ হিসেবে আমাকে বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি এখানে এসেছি
পার্থক্য গড়তে। ইনশাল্লাহ পার্থক্য গড়ব স্পিন বিভাগে। আমার যে অভিজ্ঞতা আছে এত বছরের,
তা ভাগাভাগি করতে পারব তরুণ ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে। আশা করি, আমরা পার্থক্য গড়তে
পারব’।
‘আমি বিশ্বাস করি, যাদেরকে কোচিং করানো
সম্ভব, তাদেরকেই কেবল কোচিং করানো যায়। এখানকার তরুণরা দারুণ প্রতিভাবান। আমাদের অভিজ্ঞতা
আমরা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, দলটা দারুণ প্রতিভাবান ও সব
দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে’- যোগ করেন মুশতাক।
তার মূল কাজের জায়গা জাতীয় দল হলেও
বাংলাদেশে ক্রিকেটে তিনি অবদান রাখতে চান অন্যভাবেও, এশিয়ায় ক্লাব ক্রিকেটে, নেট অনুশীলনে
সবসময়ই লেগ স্পিনার, রহস্য স্পিনার, চায়নাম্যান বোলার দেখতে পাওয়া যায়। আশা করি, আমার
অভিজ্ঞতা সেখানে কাজে লাগবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারব
অনেক’।
‘ক্লাব ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণির কোচদের সঙ্গে দেখা করতে পারি এবং চেষ্টা করতে পারি ভালো লেগ স্পিনার বা চায়নাম্যান বোলার বের করে আনতে। কারণ এখন সাদা বলের ক্রিকেটে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট শিকারি স্পিনার লাগেই। রহস্য স্পিনারদের বের করে আনা গুরুত্বপূর্ণ এবং আশা করি, আমরা পারব’।