প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ২১:০১ পিএম
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ২১:০১ পিএম
শান্ত-রাকিবকে পেছনে ফেলে বিএসপিএর বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়েছেন ইমরানুর— ছবি: আ. ই. আলীম
মূল আকর্ষণটাই শুধু বাকি ছিল! ২০২৩ সালের কুল-বিএসপিএ বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ কে হতে যাচ্ছেন— ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত, ফুটবলার রাকিব হোসেন নাকি দৌড়বিদ ইমরানুর হোসেন? পুরষ্কারের মঞ্চে রবিবার সঞ্চালক কিছুটা মজাও করে নিয়েছিলেন, ‘ইমরানুর যেভাবে দৌড়াচ্ছেন, তিনিই কি বর্ষসেরার দৌড়ে জিতবেন কিনা?’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই টাইগার ক্রিকেটের অধিনায়ক শান্ত জানিয়ে রেখেছিলেন শুভকামনা, ফরোয়ার্ড রাকিবও দিয়েছেন ইতিবাচক উত্তর। চূড়ান্ত ঘোষণায় শেষ পর্যন্ত ইমরানুর হোসেনের নামই পড়া হলো।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৩ সালের সেরাদের পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। দেশের ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখকদের সুপ্রাচীন সংগঠন বিএসপিএ ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৪ সাল থেকে সেরা ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করে আসছে সংগঠনটি। সববারের মতো এবারও সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়, সংগঠক, সাংবাদিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। দারুণ এক সন্ধ্যায় সেরাদের সেরারা নিজেদের প্রত্যয়ের কথা শুনিয়েছেন। আগামীতে আরও ভালো করার আশাব্যক্তও করেছেন। পুরষ্কার যেন শান্ত-ইমরানুরদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
বর্ষসেরা ইমরানুরের চাওয়া সেরাটা
২০২৩ সালের সময়টা দারুণ কাটিয়েছিলেন ইমরানুর। গত বছর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন। কাজাখস্তানে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সময় নিয়েছিলেন ৬.৫৯ সেকেন্ড, এশিয়ার সব দেশের খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে জিতেছিলেন সোনা। এছাড়া বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারিতে নিজের হিটে প্রথম হয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেন। থাইল্যান্ডে এশিয়ান অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেমি-ফাইনালে খেলেন। হাঙ্গেরিতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের প্রিলিতে নিজের হিটে প্রথম হয়ে মূল পর্বেও খেলেন ইমরানুর। এতসব অর্জনের কারণেই তিনি পেছনে ফেলেছেন ক্রিকেটার শান্ত ও ফুটবলার রাকিবকে। স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার ইমরানুরের এখন লক্ষ্য প্যারিস অলিম্পিক, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। সামনে প্যারিস অলিম্পিকস ও দক্ষিণ এশিয়ান গেমস আছে, সেখানে ভালো কিছু করতে চাই।’
আক্ষেপ নেই শান্তর
বিশ্বকাপের বছর, টানা খেলা— বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে চাওয়া টাইগার ব্যাটারের চোখে আরও বড় স্বপ্ন। আগের যত বিশ্বকাপ ছিল সেখানে শুধু বলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল, এবার ক্রিকেটটা মাঠে খেলেই ভালো কিছু আনতে চান শান্ত। ইমরানুরের কাছে সেরার পুরষ্কার হারানোর পর টাইগার কাপ্তান ধারাবাহিকতার কথাই বলেছেন।
বর্ষসেরা না হয়েও কোনও আক্ষেপ নেই শান্তর, পুরষ্কারের মঞ্চে এতদূর আসার নেপথ্যও শুনিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটের অধিনায়ক, ‘কঠিন সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পেরেছি বলেই গত বছর সাফল্য পেয়েছি। এটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। বর্ষসেরা হতে পারিনি বলে কোনও আক্ষেপ নেই। ইমরানুর ও রাকিবও ভালো ক্রীড়াবিদ।’
অবাক শেখ মোরসালিন
শেখ মোরসালিন দর্শকের ভোটে পেয়েছেন পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড। জাতীয় ফুটবল দলের তরুণ ফরোয়ার্ড ভাবতেই পারেননি তিনিই জিততে যাচ্ছেন পুরষ্কারটি। পপুলার চয়েজে জয়ী মোরসালিন ক্রিকেটার, ফুটবলার ও অ্যাথলেটদের পেছনে ফেলতে পারায় একটু বেশিই অবাক, ‘শান্ত-পিংকি-ইমরানুর— এদেরকে পেছনে ফেলে এটা (পুরষ্কার) জেতায় একটু অবাকই হয়েছি। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ।’
গোলমুখে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠা তরুণ মোরসালিন নিজের চাওয়াও শুনিয়েছেন দৃপ্ত কণ্ঠে, ‘ব্যক্তিগত লক্ষ্য, আপাতত কিংসকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার। জাতীয় দলেও খেলছি। জাতীয় দলকে এগিয়ে নিতে চাই।’
উপস্থিত ছিলেন যারা
বিএসপিএ সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিবের সভাপতিত্বে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব অঞ্জন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের। গুরুত্বপূর্ণ এক সভা থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। সাবেক তারকা ক্রীড়াবিদ, সংগঠকরা নানা ক্যাটাগরীতে বর্ষসেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কার পেলেন যারা
স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার: চ্যাম্পিয়ন- ইমরানুর রহমান (অ্যাথলেটিক্স), রানার্সআপ- নাজমুল হোসেন শান্ত (ক্রিকেট) ও রাকিব হোসেন (ফুটবল)। পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড: শেখ মোরসালিন (ফুটবল)। বর্ষসেরা ক্রিকেটার (পুরুষ): নাজমুল হোসেন শান্ত। বর্ষসেরা ক্রিকেটার (নারী): ফারজানা হক পিংকি। বর্ষসেরা ফুটবলার: রাকিব হোসেন। বর্ষসেরা অ্যাথলেট (ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড): ইমরানুর রহমান। বর্ষসেরা বক্সার: সেলিম হোসেন। বর্ষসেরা শুটার: কামরুন নাহার কলি। বর্ষসেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড়: রামহিম লিয়ন বম। উদীয়মান ক্রীড়াবিদ: শেখ মোরসালিন (ফুটবল)। বর্ষসেরা দলগত সাফল্য: অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। সক্রিয় সংস্থা: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্ষসেরা কোচ: আলফাজ আহমেদ। তৃণমূলের ক্রীড়াব্যক্তিত্ব: মোয়াজ্জেম হোসেন (ভারোত্তোলন)। বর্ষসেরা সংগঠক: হাবিবুর রহমান (কাবাডি)। বিশেষ সম্মাননা: মনজুর হোসেন মালু।