প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৮ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩৭ পিএম
শান্তদের ক্রিকেটীয় উত্তেজনায় আজ মেতে ওঠে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামপাড়া— ছবি: আ. ই. আলীম
ফিট, ফাস্ট, স্ট্রং অ্যান্ড পাওয়ারফুল— জাতীয় দলের নতুন স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেলি চারটি শব্দে বুঝিয়ে দিলেন সবটা। লম্বা রানিংয়ে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত একঝাঁক ক্রিকেটারের মতও অনেকটা এমন— ফিটনেস খুব জরুরি। খেলোয়াড়দের ফিটনেস বুঝতে এবং বোঝাতে এই অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রেন্থ কোচ বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের রানিং ট্র্যাক। ভোর হতেই সরগরম সেই মাঠে স্মৃতির ট্র্যাকে ছোটাছুটি করেন ৩৫ ক্রিকেটার। ফিটনেস মূল্যায়নের পরীক্ষার মধ্য দিয়েই যেন শুরু হলো তবে বিশ্বকাপ ক্ষণগণনারও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খুব দূরে নয়। আঙুলের কড়ে গোনা ৪১ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্ব আসর। বড় আসরে নামার আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তারপর উড়াল দেবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে, এরপর একেবারে বিশ্বকাপ শেষে তবেই দেশে ফিরবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। বড় আসর সামনে রেখে তাই গতকাল শনিবারের ফিটনেস পরীক্ষা।
শনিবার ভোর ৬টা থেকে বহু বছর পর ক্রিকেটীয় উত্তেজনায় মেতে ওঠে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামপাড়া। প্রস্তুতিতে গরম এড়াতে বেছে নেওয়া হয় সকালের সময়। সময় মাপার জন্য মিরপুরের বদলে খেলোয়াড়দের পরীক্ষা নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। দুই পর্বের ফিটনেস ট্রেনিংয়ে অবশ্য পাস-ফেলের বিষয় ছিল না। ক্রিকেটারদের কার ফিটনেস কেমন, সেটা দেখাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। তবে সবার পারফরম্যান্সে ভালো কিছুই দেখেছেন ট্রেনার নাথান কেলি। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতিতে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকতে কার কতটুকু কাজ করতে হবে সেটা এবার ঠিক করবেন তিনি। জিম্বাবুয়ে সিরিজ, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলা শেষে বিশ্বকাপে শান্তরা যেন ফিটনেস সমস্যায় না পড়েন সেই সতর্কতার অংশ হিসেবেই অস্ট্রেলিয়ান কোচের এমন তৎপরতা।
ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়লেও শান্ত-মাহমুদউল্লাহরা উপভোগ করেছেন এই রানিং সেশন। ফিটনেসের গুরুত্ব কিংবা প্রয়োজনীয়তাও বুঝেছেন টাইগাররা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে স্মৃতির কাছাকাছি ফিরে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন ফিট কিংবা ফিট না সেটি দেখতে এই যে প্রচেষ্টা, এটি প্রতি বছর হওয়া জরুরি। বিসিবির এক ভিডিও বার্তায় টাইগারদের অধিনায়ক বলেছেন, ‘যদি বছরে এমন একটা দুইটা (ফিটনেস) টেস্ট করি, তাহলে নিজেদের অবস্থান বোঝা যাবে। সেই অনুযায়ী কাজ করলে দেখা যাবে প্রায় সব খেলোয়াড় ফিট থাকছে।’
দলের অভিজ্ঞ তারকা এবং ফিটনেস ইস্যুতে সচেতন মুশফিকুর রহিমের কাছে দিনটি উৎসবমুখর মনে হয়েছে, ‘ট্রাকে হয়তো এমন রানিং করা হয় না। কিন্তু মাঠে প্রায়ই এমন রানিং করি। সবাই একসঙ্গে অনেক দিন পর, ভালো লেগেছে।’ তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝে সকালের ঘামঝরানো সেশন হলেও অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয়তা হাতে-কলমে আরেকবার বুঝেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ ও লিটন দাসরা। ফিটনেস ইস্যুতে ভুগতে থাকা উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটনের মতে ব্যস্ত ক্রিকেটসূচির মাঝে লং রানিং অনেক প্রয়োজন, ‘আসলে এই রানিংগুলো আগে যখন বিকেএসপিতে ছিলাম তখন করা হতো। কিন্তু শেষ দুই তিন বছরে ক্রিকেটটা অনেক বেশি ফাস্ট হয়ে যাওয়ার কারণে লং রানিং খুব কম করা হয়। এখন সবাই স্প্রিন্টের ওপর বেশি মনোযোগ দেয়।’
নাথান কেলি মূল ফিটনেস ক্যাম্পটি দুই ভাগে রেখেছিলেন— প্রথমে ৪০ মিটার করে ৪ দফায় স্প্রিন্ট। মানে একেকজন ক্রিকেটার চারবার করে দৌড়েছেন। কত কম সময় নিয়েছেন তারা তা দেখা হয়েছে এই পর্বে। এরপর ১৬০০ মিটারের দৌড়। সেখানে অনেক ক্রিকেটারের ৪০০ মিটারের ট্র্যাকের শেষ ল্যাপ শেষ করতেই হাঁপিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্টেডিয়ামের নতুন অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে অ্যাথলেটদের মতো দৌড়াতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ৩৮ বছর বয়সি মাহমুদউল্লাহর ১৬০০ মিটারের শেষ ল্যাপ শেষ করতে সবচেয়ে দেরি হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে দৌড়ানো শামীম হোসেন, তানভীর ইসলাম, আফিফ হোসেন ও এনামুল হক বিজয়রাও শেষ ল্যাপ শেষ করেছেন অতি কষ্টে। শামীম পাটোয়ারী তার তৃতীয় ল্যাপও শেষ করতে পারেননি।
দলের সহকারী ট্রেনার ইফতিখার ইসলাম ইফতি জানিয়েছেন, সবার ফিটনেস ঠিকঠাক আছে, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝলাম খেলোয়াড়দের অবস্থাটা কী। এটার মধ্যে পাস-ফেলের কিছু নেই। ডিপিএল, বিপিএল গেছে। এরপর ওদের ফিটনেসের অবস্থা কী সেটা জানার জন্য এই আয়োজন। অ্যাভারেজ পারফরম্যান্স সবার, গুড। তবে আমাদের উন্নতির জায়গা আছে। আমরা ট্রেনাররা গুড বলতে পারি না, বলি না আসলে কারণ আমাদের চাহিদার শেষ নেই। ফিটনেস ভালোই আছে সবার।’
ক্রিকেটের স্মৃতিময় মাঠে ফিটনেস মূল্যায়নের পরীক্ষার মধ্য দিয়েই বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু। মাসদেড়েক পরই বসতে যাচ্ছে মারকাটারি ক্রিকেটের বিশ্বযজ্ঞ। চার-ছক্কার গতির খেলায় ফিটনেস তো আরও জরুরি।