প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১২ পিএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২১ পিএম
কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার দুপুরে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের টার্ফে অনুশীলন করেছে আবাহনী হকি দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে মোকাবিলার আগে ঘাম ঝরিয়েছে আবাহনী শিবির। বিপরীত চিত্র মোহামেডান শিবিরে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে খেলা নিয়েই অনিশ্চয়তায় মতিঝিলপাড়ার ক্লাবটি। বয়কটের সিদ্ধান্তে অটল মোহামেডান। আর এতে করে আজ বহুল কাঙ্ক্ষিত আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মাঠে গড়াবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।
চলতি হকি লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটি দুই দলের জন্য অলিখিত ফাইনাল। আজ আকাশি-নীলদের হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরবে শহিদুল্লাহ টিটুর দল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি না খেলার হুমকি দিয়েছে মোহামেডান। দলের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির হলুদ কার্ডকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সরগরম হয়ে ওঠে হকিপাড়া। ফেডারেশনের এক চিঠির বরাতে মোহামেডানকে জানানো হয় জিমি নিষিদ্ধ থাকবেন আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি জিমির ক্লাব। ফেডারেশনকে সেই দিনই চিঠি দেয় মোহামেডান। কিন্তু ক্লাবের মতে, সেটির সদুত্তর পায়নি তারা। ফিরতি চিঠিতে ফেডারেশন জানায়, ‘ম্যাচ রিপোর্ট শিটে সব কিছু বুঝে আপনার ক্লাবের ম্যানেজার স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া পরপর দুটি হলুড কার্ড পাওয়ার ম্যাচে দলের (মোহামেডান) ম্যানেজারকে বিশেষভাবে অবহিত করা হয়েছে। তাই বাইলজ মোতাবেক তার (জিমি) শাস্তি প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।’
ফেডারেশন থেকে পাওয়া চিঠিতে সন্তুষ্ট না হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ফেডারেশনের সভাপতি বরাবর ফের চিঠি দেয় মোহামেডান। ক্লাবটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী ফিরোজ রশীদের স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে বলা হয়, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লি.-এর হকি খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমিকে (জার্সি নং ৭) বাইলজের ১৫ (ক) ধারা অনুযায়ী পরবর্তী ম্যাচে অংশগ্রহণে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। চিঠিতে বলা হয় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে জিমিকে খেলতে না দিলে এই মোহামেডান ক্লাব লিগে অংশগ্রহণ না করতে বাধ্য হবে।
এদিকে জিমিকাণ্ডে বৃহস্পতিবার ক্লাবের মিডিয়া রুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মোহামেডান। জিমির কার্ড ইস্যুর বাইরে তারা কথা তুলেছেন হকির বেশ কিছু অনিয়ম নিয়েও। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে একের পর এক অহেতুক ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও দাবি ক্লাব কর্ণধারদের। আছে আম্পায়ার নিয়েও অসন্তুষ্টি। মোহামেডানের সহকারী ম্যানেজারের গায়ে একটি হকি ক্লাবের দ্বারা হাত তোলার ঘটনাও তারা উল্লেখ করেন। সে বিষয়ে ফেডারেশনকে অবহিত করেও কোনো বিচার পাননি বলে আক্ষেপ করেছেন মোহামেডানের কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন। তবে আপাতত তারা জিমির নিষেধাজ্ঞা নিয়েই সোচ্চার। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সেটিই জানাতে চেয়েছেন ফেডারেশনকে। মোহামেডান ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা সারোয়ার বলেন, ‘আমরা চাই জিমিকে খেলতে দেওয়া হোক। ফেডারেশন বাইলজের কথা বলেছে। কিন্তু সেখানে এটিও আছে যে দুই কার্ড দেখার পর ওই খেলোয়াড়কে অবহিত করতে হবে। সেটি তো করা হয়নি। আমরা চিঠির উত্তরের জন্য আগামীকাল সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ না করলে আরও বাজে পরিস্থিতির সামনে পড়বে মোহামেডান। লিগ বর্জন করলে তাদেরকে নেমে যেতে হবে প্রথম বিভাগ হকিতে। এই প্রসঙ্গে সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি এই ম্যাচে অংশগ্রহণ না করলে প্রথম বিভাবে নেমে যেতে হবে। কিন্তু এমন অনিয়মের মধ্যে আমরা তো খেলতে চাই না। এমন অনেক খেলাই তো আছে, যেখানে মোহামেডান আগে অংশগ্রহণ করত, কিন্তু এখন আর করে না। হকিতে হয়তো আর খেলব না। তবে এটি আমার মত, শেষ পর্যন্ত ক্লাব সিদ্ধান্ত নেবে।’ ফেডারেশনের অনেক অনিয়মের কথা উল্লেখ করলেও সে বিষয়ে কখনও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে মোহামেডানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। শুধু আমরাই না, ঊষা ক্লাবসহ আরও কয়েকটি ক্লাব প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সেসবের কোনো সুরাহা পায়নি।’ লিগ জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ওয়াকওভারের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রসঙ্গে সারোয়ারের ভাষ্য, ‘এটা তো আসলে তাদের (ফেডারেশন) দায়িত্ব। কেউ কি চায় লিগ টপার থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সরে দাঁড়াতে? কিন্তু আমাদের দলের অধিনায়ক, সেরা খেলোয়াড়কে এমন সময়ে এসে কার্ড দিল…। এমন না যে সে (জিমি) খুব খারাপ কিছু করছে। সে তার দলের পক্ষে কথা বলতে গিয়েছে। কিন্তু সেখানেই তাকে কার্ড দেখানো হলো। তারা তিন কার্ডের বিষয়টি আমাদের অবহিত করলেও হয়তো ওই ম্যাচের পরই আমরা এটি নিয়ে আপিল করতাম। সমাধান তো হয়েও যেতে পারত।
এদিকে গ্রিন ডেল্টা প্রিমিয়ার ডিভিশন হকিতে সুপার লিগের চার খেলা শেষে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে মোহামেডান। সমান ম্যাচ খেলে এক পয়েন্ট কম আবাহনীর। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে চারে থেকে লিগ শেষ করেছে ঊষা ক্রীড়া চক্র। মেরিনার ইয়াংস ক্লাব ও পুলিশেরও একটি করে ম্যাচ বাকি আছে।