× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মৃতি ছাড়া কিছুই নেই ভিক্টোরিয়ার

রুবেল রেহান

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০২ পিএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২২ পিএম

স্মৃতি ছাড়া কিছুই নেই ভিক্টোরিয়ার। ছবি : আ. ই. আলীম

স্মৃতি ছাড়া কিছুই নেই ভিক্টোরিয়ার। ছবি : আ. ই. আলীম

একশ বছরের বেশি কোনো রাজত্ব স্থায়ী হয় না, ইতিহাসের আলোকে এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন বিশ্ববরেণ্য ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের শতবর্ষী ক্লাবগুলো যেন সেই ঐতিহাসিক সত্যকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সোনালি অতীত হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার দায়ও অনুভব করেনি কেউ। শতবর্ষী ক্লাবগুলোকে নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক আয়োজন শুরু হচ্ছে আজ। 

১৯ মার্চ, মঙ্গলবার। দুপুরের পর ঝলমলে আকাশটা নিমেষেই ঢাকা পড়ল কালো মেঘের আড়ালে। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। গন্তব্য ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। মূল গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখা গেল ভেতর থেকে পানি গড়িয়ে নামছে রাস্তায়। দুই কদম ভেতরে এগোতেই চোখে পড়ল সবখানে পানি আর পানি। বেলচা দিয়ে আটকে থাকা পানি বের করছেন কেউ একজন। আরেকটু এগোতে চাইলে ভদ্রলোক বললেন, ভাই ভেতরে যাবেন কীভাবে, দাঁড়াবেন কই, সবখানেই তো পানি। 

ফটকের বাইরে এসে দাঁড়াতেই বয়স্ক একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাংবাদিক? হুম, বলতেই নিজ থেকে জানালেন এই ক্লাবের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। এখন আর কোনো দায়িত্বে নেই, তবে ভালোবাসা আর মায়ার টানে সময় পেলেই ছুটে আসেন ক্লাবে। খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ভেতরে আর দেখার কিছু নেই। একদম খালি পড়ে আছে সব।’ বললাম এই হাল কেন? ‘বলতে পারব না। তবে কাজ চলছে, সবকিছু ঠিক করা হবে।’ 

ক্যাসিনোকাণ্ডের সাড়ে তিন বছর পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তালা খুলতে পারে ক্লাবটি। কিন্তু তত দিনে বড় সর্বনাশই হয়ে গেছে ভিক্টোরিয়ার। নথিপত্র কিছুই পাওয়া যায়নি, চুরি গেছে সোনালি অতীতের ট্রফিগুলোও। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ক্লাবটির স্মৃতি ছাড়া যেন কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

বাংলাদেশে যে কয়টি শতবর্ষী ক্লাব আছে, তার মধ্যে অন্যতম ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। শীর্ষ পর্যায়ে খেলা ওয়ারী ক্লাবের পরই সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাব ভিক্টোরিয়া। এটির প্রতিষ্ঠা ১৯০৩ সালে। জানা যায়, ইংল্যান্ডের রানী আলেক্সান্দ্রিয়া ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে ক্লাবটির নামকরণ করা হয়। এ নিয়ে অবশ্য মতবিরোধও আছে। 

স্বাধীনতার আগে, দেশের ক্রীড়া ইভেন্টগুলোতে দাপুটে নাম ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং। এক যুগ আগেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে দলটি। পাঁচ-ছয় বছর আগেও এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ মুমিনুল হক। সেই সময় দলটিতে ছিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বির মতো বোলারও। এক যুগ আগে এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মতো বিশ্বসেরা তারকা ক্রিকেটাররা। তারও আগে ভিক্টোরিয়ার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট, অলক কাপালি, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। ২০০১-০২ এবং ২০০২-০৩ মৌসুমে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে টানা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ভিক্টোরিয়া। এরপর ২০১১-১২ মৌসুমে তারা লাভ করে রানার্সআপ ট্রফি। শুধু ক্রিকেটেই নয়, তাদের সাফল্য ছিল ফুটবল ও হকিতেও। কিন্তু সবকিছুই এখন স্মৃতির পাতায় বন্দি। 

বর্তমানে জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। তার শুরুটাও হয়েছিল ভিক্টোরিয়া ক্লাবে খেলেই। হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মিডফিল্ডার সোহেল রানাদের মতো ফুটবলাররাও এই ক্লাবের আবিষ্কার। এ সময় ফুটবলে কোচিং করা বেশ কয়েকজন কোচই এসেছেন ভিক্টোরিয়ার হাত ধরে। বর্তমানে ফুটবলে দ্বিতীয় স্তরে খেলছে ভিক্টোরিয়া। তবে এ নিয়ে ক্লাবের ভাবনাটা একটু অন্য রকমই। দ্বিতীয় স্তরের ফুটবল থেকে তারাই চায় না প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলতে। পেশাদার লিগে খেলতে হলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটি বহন করার মতো অবস্থায় নেই ভিক্টোরিয়া। কোনোমতে ক্লাবের মানমর্যাদা ধরে রাখাই এখন তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবলে কিংবা ক্রিকেটে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হওয়া, চ্যাম্পিয়ন হওয়াএসব এখন আর ভাবনাতে নেই মতিঝিলপাড়ার ক্লাবটির। অস্তিত্ব ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ ভিক্টোরিয়ার সামনে।

হকিতে শীর্ষ পর্যায়ের প্রিমিয়ার লিগে খেলছে ভিক্টোরিয়া। তবে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই দলটি। চলতি হকি লিগে প্রথম পাঁচ ম্যাচেই ৫১ গোল হজম করেছে ক্লাবটি। অবশেষে লিগে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে প্রথম জয় পায় ভিক্টোরিয়া। এমন পারফরম্যান্সকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন। খেলোয়াড়ের ঘাটতি থাকায়, দল গঠন করতে হিমমিশ খেতে হয়েছে বলে জানান মাজহারুল ইসলাম।

ক্লাবের বর্তমান হালচাল এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাএসব নিয়ে মাজহারুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার সারমর্ম দাঁড় করালে কেবল ‘আক্ষেপ’ আর ‘স্বপ্ন’ সামনে আসে এই দুটি শব্দ। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি যেন অতীতের কংকাল। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে দরকার অর্থ। সেটির জোগান কেবল ব্যক্তিগতভাবে কিংবা বিভিন্নজনের থেকে নিয়ে হয় না। সেই বাস্তবতাই মনে করে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করলেন মাজহারুল ইসলাম, ‘এখন সবকিছু বদলে গেছে। আগের মতো আর কিছুই নেই। বাজে সময়ে অনেকেই অনেকভাবে ক্লাব নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আমাদের এখন অর্থ সংকট। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে আর এগোনো যাচ্ছে না।’

এত হতাশার গল্পের পরও ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে এখনও স্বপ্ন দেখেন মাজহারুল। ভিক্টোরিয়ার সাবেক এই ডিফেন্ডারের অপেক্ষা, পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হয়তো কেউ কেউ এগিয়ে আসবেন। সেক্ষেত্রে তাদের (স্পন্সর) সর্বোচ্চ সুবিধাই দেবেন বলেন জানালেন বর্তমানে বক্সিং ফেডারেশনেরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মাজহারুল, ‘আমরা শিগগিরই একটা গেট টুগেদার করব। ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপন করা হয়নি। সেটি এই বছরের নভেম্বরে করব আশা করি। যারা ক্লাবকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন, তাদের আমন্ত্রণ জানাব। এই ক্লাবকে আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’ 

এমন দুঃসময়েও ক্লাবটি একই সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, রাগবি, হ্যান্ডবল ও বক্সিংয়ে। এ ছাড়া বিচ ভলিবলেও আছে ভিক্টোরিয়ার অংশগ্রহণ। সবকিছু পেছনে ফেলে পুরোনো সেই ভিক্টোরিয়াকে দেখার আগ্রহটা কেবল সংগঠকদেরই নয়, এ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদেরও।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা