ফেডারেশন কাপ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৯ পিএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৫ পিএম
শেখ রাসেলকে হারিয়ে সেমিতে মোহামেডান। ছবি : সংগৃহীত
আরও একবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। হারের শঙ্কায় থাকা ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল সাদা-কালোরা। পিছিয়ে থাকা ম্যাচে দেখাল শেষ ২০ মিনিটের ঝলক। তাতে পুরে অঙ্গার শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ৭০ মিনিট পর্যন্ত এক গোলের লিড ধরে রেখেও হতাশায় ডুবল ধানমন্ডিপাড়ার ক্লাবটি। ফেডারেশন কাপে তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান।
গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার কোয়ার্টার ফাইনালের খেলায় শেখ রাসেলকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করেছে মোহামেডান। জয়ী দলের হয়ে দুটি গোল করেন মোজাফফর মোজাফফরভ ও জাফর ইকবাল। শেখ রাসেলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন সেকু সিল্লা। খেলার মাত্র ২৬ সেকেন্ডে এদিন লিড নেয় শেখ রাসেল। চলতি মৌসুমে এত অল্প সময়ে আর কোনো দল প্রতিপক্ষের জাল কাঁপাতে পারেনি। দেশের ফুটবলে এত কম সময়ে গোল সবশেষ কবে দেখা গেছে সেটিও আলোচনার দাবি রাখে।
শেখ রাসেলের মনির আলমের দারুণ এক ক্রসে দলকে লিড এনে দেন সেকু সিল্লা। এই মৌসুমেই গিনির এই ফুটবলারকে চুক্তিবদ্ধ করে শেখ রাসেল। ক্লাবটির জার্সিতে এটি তার প্রথম গোল। এত দ্রুত সময়ে পিছিয়ে পড়াই যেন শাপেবর হয়ে দাঁড়ায় মোহামেডানের জন্য। এরপর মুহুর্মুর্হ আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে তোলেন আলফাজ আহমেদের শিষ্যরা। খেলার পঞ্চম মিনিটেই সুযোগ তৈরি করে মোহামেডান। আরিফ হোসেনের কাট ব্যাকে বক্সে বল পেয়ে যান ইমানুয়েল সানডে। কিন্তু দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। শেখ রাসেলের মিতুল মারমার শরীর বরাবর কিক নিলে সেটি অনায়াসেই ঠেকিয়ে দেন জাতীয় দলের এই গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর মোজাফফরভের নিচু শট প্রতিহত হয় প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়ালে।
খেলার ২৩ মিনিটে সানডের কাট ব্যাক থেকে গোলে শট নেন সুলেমান দিয়াবাতে। কর্নারের বিনিময়ে আলতো টোকায় বারের ওপর দিয়ে বল বের করেন মিতুল। এরপর কর্নার কিক থেকে কামরুল ইসলামের শটও আটকান তিনি। প্রথমার্ধের এরকম আক্রমণ আরও করেছে মোহামেডান। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মেলেনি তাতে। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যান আলফাজের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চেনা রূপে হাজির হতে পারেনি মোহামেডান। প্রথমার্ধের মতো এই অর্ধে নেমে নিজেদের হারিয়েই যেন খুঁজছিল সাদা-কালোরা। তাতে সময়ক্ষেপণও হয়েছে বেশ। তবে হাল ছাড়েননি মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেন তারা। ফলও মেলে ৭০ মিনিটে। বক্সের ভেতর থেকে দিয়াবাতে বল ক্রস দেন বক্সের বাইরে থাকা মোজাফফরভের উদ্দেশে। উজবেকিস্তানের এই মিডফিল্ডারের গতিময় শটের বল মিতুলকে ফাঁকি দিয়ে জড়িয়ে পড়ে জালে। উল্লাসে ফেটে পড়ে মোহামেডানের ডাগআউট। ১-১ সমতায় ফিরে যেন খেলায় প্রাণ ফিরে পায় সাদা-কালো শিবির। বিপরীত দৃশ্য শেখ রাসেল শিবিরে। এ সময় দলটির রক্ষণভাগ ভেঙে পড়ে। সেটির ফায়দা তুলে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় মোহামেডান। তবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারেনি দলটি।
সম্ভাব্য ড্রয়ের দিকে ছুটতে চলা ম্যাচে রোমাঞ্চ ফেরে যোগ করা সময়ে। পাঁচ মিনিটের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় মোহামেডান। মোজাফফরভের পাস ধরে বক্সে ক্রস দেন আরিফ। বল পেয়েই গোলে শট নেন জাফর। কিন্তু সামনে থাকা শেখ রাসেলের দানি আতান্দ্রা প্রতিহত করেন। ফিরতি বল আসে সেই জাফরেরই পায়ে। এবার পায়ে বল নিয়ে দারুণ কারিকুরিতে সময় নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি সময় আর কোনো গোলের দেখা পায়নি দুই দল।
২০১২-১৩ মৌসুমের পর ফেডারেশন কাপের সেমিতে ওঠা হলো না শেখ রাসেলের। সেবারই প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতে দলটি। এরপর আর কখনও তারা সেমিতেই পা রাখতে পারেনি। মোহামেডানের সামনে সেই সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করল দলটি, তাতে অপেক্ষা কেবল আরও বাড়ল।