প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
সিলেটে লঙ্কা পেসে ধুঁকছে টাইগাররা, শঙ্কায় বড় হার— সংগৃহীত ছবি
মুখ টিপে হাসছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। কাভার পয়েন্টে দাঁড়ানো অধিনায়ককে কিছু একটা বলেছিলেন মিড উইকেটে থাকা কেউ। ততক্ষণে বাংলাদেশের হার অনেকটাই নিশ্চিত। ৫১১ রানের বিশাল লক্ষ্যে শঙ্কা কাটাতে গিয়ে লজ্জাকাণ্ড ঘটিয়ে বসেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। সিলেট টেস্টে হার মেনে নিলেও টাইগাররা তবে এখনও প্রাপ্তি খুঁজছেন। ভরাডুবির মুষ্টিলাভ আর কি! এই টেস্টে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে শান্তরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন, ‘কীভাবে হারটা সম্মানজনক করা যায়!’
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ শুরু করবে ৪৭ রান থেকে। পাঁচ উইকেট হারানো দলের সামনে এখনও ৪৬৪ রানের কঙ্কটাকীর্ণ পথ। এমন অবস্থায় স্বাগতিকদের চাওয়া লড়াই এবং সবশেষে রেকর্ড রানের হার থেকে বাঁচা। সেই সংকল্পে দাঁড়িয়ে আজ সোমবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবেন মুমিনুল হক। ২৯ বলে ৭ রান করা টাইগারদের আশা হয়ে থাকা ব্যাটারকে সঙ্গ দেবেন নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম (৬)। তার আগে গতকাল রবিবার লাল বলের ক্রিকেটে বিবর্ণ দশার বর্ণনা দিয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ শুনিয়েছেন প্রাপ্তি খোঁজার কথা। টপ অর্ডার ব্যাটারদের বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী আর ছন্নছাড়া শটের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মিরাজ বলেছেন সম্ভাবনার কথাই, ‘এটার ব্যাখ্যা আসলে যে খেলোয়াড়রা (বাজে) খেলে সে ভালো বলতে পারবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ওই মুহূর্তে কী চিন্তা করছে। আমার কাছে মনে হয় শেষ দিকে এটা অবশ্যই কঠিন। তবে চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। আলাদা করে, আমাদের আউটগুলো হতাশাজনক। তারপরও ভালো খেলার চেষ্টা করব। আমরা যারা আছি— মুমিনুল ভাই রান করতে পারলে ভালো, আমি যদি ব্যাটিং করি ভালো একটা অবস্থানে যদি দিতে পারি। তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
সেই ভালোটা হার রোখার মতো নয় নিশ্চিত, হারকে সহনীয় অর্থাৎ সম্মানজনক অবস্থায় আনার। সিলেট টেস্টে চারটি ইনিংসের কিছু বিষয় মিলে যাচ্ছে। লঙ্কানদের ব্যাটিং ব্যর্থতা, কামিন্দু-ধনঞ্জয়া সেঞ্চুরিতে ঘুরে দাঁড়ানো, টাইগারদের টপ অর্ডারের ধস এবং ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে থাকা। শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা যেখানে দিনের শেষ অবধি দাপুটে ব্যাটিং করছিলেন, তাইজুলদের যত্রতত্র উড়িয়ে মারছিলেন। সেখানেই নাজেহাল দশায় লিটন-শান্তরা। আত্মঘাতী এসব শটের বিষয়টি দৃষ্টিকটু লেগেছে নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকের।
সিলেটে ব্যাটারদের তীব্র সমালোচনা করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিসিবির কর্তা, ‘ব্যাটিংয়ের দিক থেকে যদি বলেন আমার কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে। গ্রহণযোগ্য নয়। এই রকম ব্যাটিং হবে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে…। ওদের ব্যাটিং দেখার পর আমাদের ব্যাটিং দুই রকম মনে হয়েছে। আমি হতাশ।’ পিচের সমস্যা কিনা সেই বিষয়ে রাজ্জাকের ভাষ্য, ‘পিচের সমস্যা হবে কেন? আধা ঘণ্টার মধ্যে পিচ কি আকাশপাতাল পার্থক্য হয়ে যাবে নাকি। কিছুক্ষণ আগেই ওরা দুজন একশ মেরে গেল। ১০ মিনিটের ব্রেক থাকে। ১০ মিনিটে উইকেটে কী এমন হলো? আসলে আমাদের অ্যাপ্লিকেশনে কিছু ভুল হয়েছে।’
পাঁচ শতাধিক রানের বোঝা মাথায় নিয়ে টাইগারদের ব্যাটিং শুরু ছিল হতশ্রী। বিশ্ব ফার্নান্দোর ইনিংসের প্রথম ওভারেই এলবিডব্লিউ হন মাহমুদুল হাসান জয়। কাসুন রাজিতার দ্বিতীয় ওভারে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ক্যাচ দেন অধিনায়ক শান্ত। উইকেটের পেছনে খোঁচা মেরে ফেরেন শাহাদাত হোসেন দিপুও। সবশেষে লিটন দাস হয়েছেন সবচেয়ে দৃষ্টিকটু আউট। ছয় নম্বরে চাপ সামলাতে এসে প্রথম বলেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিং গড়বড় করে বসেন লিটন। অমন পরিস্থিতিতে এমন শটে হতভম্ব সমর্থকরা।
টাইগার অলরাউন্ডার মিরাজের মতে— টেস্ট বলেই এমন হচ্ছে, ‘আমরা যখন ওদের প্রথম সেশনে ৫ উইকেট নিয়ে ফেলেছিলাম তখন সবাই কী চিন্তা করেছিল, ওদের ১০০ রানের ভেতরে অলআউট করে দেব। তারপর কিন্তু ওরা জুটিটা গড়েছে। দুজনে দুটি ১০০ মেরেছে। টেস্ট ক্রিকেটটাই কিন্তু এরকম। উপরে যদি কেউ ভালো না খেলে, কিন্তু পরে যদি দুজন ২টা ১০০ মারে বা ১৫০ মারে তাহলে কিন্তু ...’
মিরাজ এর মাঝে পুনরায় প্রশ্নটি শুনেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কেন পারছে না কামব্যাক করতে।’ টাইগার অলরাউন্ডার নিজেদের ঘাটতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের আরও স্কিল বাড়াতে হবে। আমাদের কোন জায়গায় ঘাটতি আছে? আমাদের হয়তো শট খেলার প্রবণতা একটু বেশি হচ্ছে। যে বলটা ছাড়তে পারি সহজেই সেটা হয়তো খেলে দিচ্ছি। তখন আউট হয়ে যাচ্ছি। টেস্ট ক্রিকেটে আরও উন্নতি করতে হবে আমাদের।’