প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ২০:৩২ পিএম
বল হাতে গতির ঝড় তুলে নিজেকে জানান দিয়েছেন নাহিদ— বিসিবি
সিলেটে ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে নাহিদ রানা রাজত্ব করবেন, গতির সঙ্গে সুইং কিংবা বাড়তি বাউন্সে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেবেন— ২১ বর্ষী পেসারকে নিয়ে ছিল এমন আত্মবিশ্বাস। তবে কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়েছে। শুক্রবার সিলেটে খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম যখন শ্রীলঙ্কার ইনিংসের অর্ধেক শেষ করে বসেছেন, তখন অপরপাশে রান বিলিয়ে যাচ্ছিলেন তরুণ পেসার। যদিও শেষপর্যন্ত অভিষেক হওয়ার দিনে নায়ক হয়েই ফিরলেন নাহিদ। তার ১৪০ থেকে ১৪৫ কিমি গতির আশেপাশে বোলিং তোপে তিনশ ছাড়ানোর আগে থামে লঙ্কানরা।
লাক্কাতুরার চা বাগান ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নাহিদ বিস্ফোরণের শুরু ৫৬ ওভারে। দিনের খেলা ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে মাঝদুপুর। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলটিকে সজোরে বাউন্ডারি ছাড়া করেন কামিন্দু মেন্ডিস। সাদা পোশাকে প্রথমবার সেঞ্চুরির উদযাপন যদিও পরের বলেই থামিয়ে দেন রানা। আগ্রাসন, গতি এবং অফস্টাম্পের বাইরের বল। বুঝে ওঠার আগেই থামতে হয় কামিন্দুকে। লিটন দাসের হাতে যখন ক্যাচ হয়ে লঙ্কান ব্যাটার ফিরছেন তখনও তবে নির্বিকার রানা। স্বপ্নের ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পেয়েও উদযাপনের ছিটেফোটাটা দেখালেন না।
যেন জমিয়ে রাখেন ছাই চাপা আগুন। সেই আগুনে পেসে পরে এলোমেলো হয়ে যায় লঙ্কান ব্যাটিং লাইন আপ। দুহাত মাটির দিকে ঝাকিয়ে এরপর দুবার বুনো উল্লাস করেন নাহিদ। স্বপ্নের অভিষক স্বপ্নের মতোই শুরু। লঙ্কান দুই সেঞ্চুরিয়ানকে শিকারে পরিণত করেন স্পিডস্টার। এই দুই উইকেটের মাহাত্ম্য শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। শুরুতে বাংলাদেশের সাজানো বাগান তছনছ করে দেন সফরকারী দলের এই দুই ব্যাটার।
বাবা-মায়ের কঠিন শর্ত ছিল, ‘এসএসসির আগে খেলা নয়। ’ সেই শর্ত মেনে চড়াই-উতরাইয়ের নানা স্তর পেরিয়ে নাহিদ পেয়েছেনদাপট দেখানোর মঞ্চ । বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার নাহিদ। গতিই তার বোলিংয়ের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। গত বিপিএলে ১৪৯.৭ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে চমকে দিয়েছিলেন। গতকাল সিলেটেও তোলেন গতির ঝড়। নাহিদের বোলিংয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক তার অ্যাকশন। একেবারেই সহজাত বোলিং। লম্বা। ছিপছিপে। হাই আর্ম অ্যাকশন হওয়াতে বল ছোঁড়ার সময় বাড়তি গতি পান। শরীরের শক্তি কাজে লাগাতে পারেন দারুণভাবে। সেই শারীরিক গুণটাই কাজে লাগিয়েছেন নাহিদ। আর কাজে লাগিয়েছেন প্রাপ্ত সুযোগ।
শ্রীলঙ্কা যখন ঘুরে দাড়িয়েছে। কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাটে যখন শঙ্কা বাড়ছিল, তখন এক স্পেলে সব শঙ্কা বিলিন করে দেন নাহিদ। প্রথমে দিনের দুই সেঞ্চুরিয়ানের সঙ্গে ফেরান আরেক লঙ্কানকে। প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ে আরেকবার ধস নামানোর পর বাকি কাজ সারেন তাইজুল ইসলাম। শেষ সেশনে এই দুই বোলারের দাপটে ৬৮ ওভারে ২৮০ রানে থামে শ্রীলঙ্কা। ১৪ ওভারে নাহিদ খরচ করেছেন ৮৭ রান। তবে ফিরিয়েছেন দুই সেঞ্চুরিয়ানকে। প্রবাথ জয়সুরিয়াকে আউট করে থামিয়ে দেন লঙ্কানদের রানের চাকা।
গতি আর বাউন্সে লঙ্কানদের ভড়কে দেওয়া নাহিদকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ঘু টাইগারদের পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস ‘সে খুবই বুদ্ধিমান। স্পিড স্টার। নাহিদ প্রায় প্রতিটি বল ১৪৫ কিমি বল করেছে। তার অ্যাকশনও দারুণ। তবে তাকে অনেক কিছু শিখতে হবে।তারপরও সে দারুণ পেসার। তরুণ পেসারদের এমন ক্ষুধা থাকাটা গুুরত্বপর্ণ। আমি মনে করি উইকেট নেওয়ার এই চাওয়া তাদেরকে আরও বেশি আগ্রাসী করে তুলবে। তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করেছে। আমি তাদের পরিশ্রমে খুব খুশি। তারা আরও কতটা ভালো করতে পারে নজর দিতে হবে সেদিকটায়।’
অ্যাডাসমের মতে উদীয়মান এসব সম্ভাবনাময় তরুণ সময়ের সঙ্গে আরো ক্ষুরধার হয়ে উঠবে। তার কথায়, ‘আমাদের তরুণ পেসারদের সবাই ভালো করেছে। মনে রাখতে হবে তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। তারপরও তারা চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি। আর শ্রীলঙ্কা যেভাবে খেলেছে সেভাবেই তাদের খেলার কথা। তারা আমাদের ওপর চড়াও হতে চাইবে। আর তাই আমরা নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে কিভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে।’
কদিন আগেও সাদা পোশাক, লাল বল হাতে ২২ গজে ছোটার স্বপ্ন দেখা ছেলেটাই এখন দেখাচ্ছেন বড় আশা । কথায় বলে , দিবসের পুর্বাভাষ দেয় প্রভাত। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম দিনে সেই প্রবাদটির কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নাহিদ রানা। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট মানেই স্পিনারদের জয়জয়কার। ঘরের মাটিতে টাইগার পেসাররা অনেকটাই যেন পরবাসী। পেসারদের উপর আস্থা রাখতেও যেন দ্বিধায় ভোগে ম্যানেজম্যান্ট। তবে আস্থার প্রতিদান দিয়ে নাহিদ বুঝিয়ে দিলেন, তার আবির্ভাব দিন বদলের অঙ্গীকার নিয়েই।