প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৮ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১১:৫১ এএম
গত ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়েন টাইগাররা। ফাইল ফটো
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পয়া না অপয়া ভেন্যু? সেই উত্তর দেবে পরিসংখ্যান। খাতা-কলমের কাটাকুটিতে মোটাদাগে আধিপত্য অবশ্য বাংলাদেশের। লাক্কাতুরার চা বাগান ঘেরা মাঠটিতে এখন অবধি খেলা সাতটি ওয়ানডের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে সিক্সটি ফিফটি। পাঁচটির মাঝে জয় তিনটিতে। টেস্টে সমান সমান। সিলেটে একবার হেরেছে, আরেকবার গড়েছে ইতিহাস। টাইগারদের দুই হাত ভরে দেওয়া ভেন্যুটিকে পয়া বলাই যায়! এমন শুভ মাঠটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার ইতিহাস গড়ার সামনে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
দেশের মাটিতে আগে কখনও লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপ ঘোচানোর মিশন শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২২ মার্চ। সিলেটের পয়া ভেন্যুতে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাদের এবারই প্রথমবার আতিথেয়তা দিয়েছেন শান্তরা। ভেন্যুটি খুব বেশি পরিচিত নয় স্বাগতিকদেরও। তবুও এখানে যে শেষবার ঐতিহাসিক জয় তুলেছিল টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই নামিয়েছিল চা বাগান ঘেরা মাঠটিতে। শান্ত-মুশফিকদের এটাই হতে পারে বাড়তি শক্তি। তার ওপর যোগ হয়েছে ওয়ানডে সিরিজে পাওয়া আত্মবিশ্বাস।
লঙ্কানদের বিপক্ষে সিলেটে লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশ অবশ্য স্বস্তিতে থাকতে পারে। ভেন্যুটিতে খেলা দুটি টেস্টের সবশেষটিতে জয় পেয়েছে, তাও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। যারা কি না বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাধারী দল। লঙ্কানদের ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে তাই অধিনায়ক শান্ত অকপটে বলেছেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগে এই জয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
২০১৮ সালে এই মাঠে তুলনামূলক দুর্বল জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫১ রানের হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল। ইনিংসে বাংলাদেশ একবারও দুইশ পার হয়নিÑ প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯। রোডেশিয়ানরা জিতেছিল গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট। ওই ম্যাচে প্রথমবার ১০ উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। সব মিলিয়ে নিয়েছিলেন ১১টি উইকেট। সেই শোক প্রায় পাঁচ বছর পর কিউইদের ওপর তুলেছিলেন তাইজুল। সিলেটে মাস কয়েক আগে টাইগার স্পিনার পেয়েছিলেন দ্বিতীয়বার ১০ উইকেটের দেখা। টিম সাউদি-কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশও পেয়েছিল ঐতিহাসিক জয়। কিউইদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ১৫০ রানে পাওয়া জয়টি টাইগারদের প্রথম জয়। সব মিলিয়ে দ্বিতীয়Ñ আগেরটি ছিল গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। লঙ্কানদের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার আগেও পরিসংখ্যান অনেকটা এমন।
এখন অবধি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৪টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে মোটে একটিতে। সেটিও কিন্তু ঐতিহাসিক টেস্ট ছিল। ২০১৭ শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় বাংলাদেশের শততম ম্যাচটি জিতেছিল তামিম-সাকিবদের দল। এ ছাড়া ১৮টি ম্যাচে দেখেছে তিক্ত হার। দেশের মাটিতে জয়ের আক্ষেপই বেড়েছিল। বাকি পাঁচটি টেস্টে ফল ফয়সালা হয়েছে ভাগাভাগিতে। এবার সেই হারের বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জ সিলেটে। পূর্ণকালীন নেতৃত্ব পেয়ে শুরু করা নাজমুল হোসেন শান্তও আশাবাদী।
চট্টগ্রামে লঙ্কানদের পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট সিরিজে হারিয়ে শান্ত শুনিয়েছেন প্ল্যান করে এগোনোর কথা, ‘সিরিজটি থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় দক্ষতার উন্নতির বিষয় আছে। ম্যাচটা (তৃতীয় ওয়ানডে) হয়তো আরও ভালোভাবে জিততে পারতাম। দিনশেষে খেলাটা জিততে পেরেছি বলে খুশি। সামনে যখন সিরিজ খেলতে আসব তখন আরও সুন্দরভাবে প্ল্যান করে কীভাবে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি সেটা করতে হবে।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের দুটি চক্রাকারে বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছিল। এবার সেই ধারা থেকে বের হতে চান সাদা পোশাকের নতুন নায়ক শান্ত। টাইগাররাও বেশ এগিয়ে আছে। এখন অবধি পয়েন্ট টেবিলের চারে আছে শান্তর দল। দুটি টেস্ট খেলে একটিতে হারের বিপক্ষে আছে অন্যটিতে জয়। ১২ পয়েন্ট নিয়ে সিলেটে শুরু করে সেটি আরও বাড়িয়ে নেওয়ার প্রত্যয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যদের। শক্তি-সামর্থ্য আর পরিসংখ্যান পাশে রেখে সাম্প্রতিক পারফর্ম বিচার করলে লঙ্কানদের বেশ ভুগতে হবে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মতো লাক্কাতুরার চা বাগানে নামতে পারে কলম্বোর সুখস্মৃতিও।