প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:১৭ পিএম
রিশাদ দেখাচ্ছেন নতুন স্বপ্ন— ছবি: সংগৃহীত
একজন বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার পাওয়ার হাহাকার বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ পুরোনো। যিনি বোলিং করতে পারবেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে উইকেটও এনে দেবেন। হাত ঘোরানোর পাশাপাশি টুকটাক চালিয়ে নেওয়ার মতো ব্যাটিংটাও পারবেন। মোদ্দাকথা, টপ ও মিডল অর্ডার যেদিন ধুঁকবে সেদিন দলের হাল ধরতে পারবেন, দ্রুত কিছু রান তুলেও দেবেন। এক কথায় সব্যসাচী এমন একজনকেই খুঁজছিল বিসিবি। সেখানে রিশাদ হোসেন দিয়েছেন নতুন দিনের বার্তা। তার ভেতর দেখা যাচ্ছে ‘কমপ্লিট অলরাউন্ড প্যাকেজ’-এর সম্ভাবনা।
গত এক দশকে টাইগার ক্রিকেটে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে আছে একটা কথা, ‘আমরা একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি।’ লেগ স্পিনার নেই, লেগ স্পিনার চাই— স্লোগানের মতো হয়ে যাওয়া সময়ে ধূমকেতুর মতো এসেছিলেন কয়েকজন। কোনো সংস্করণেই কবজির মোচড়ে বল ঘোরানোর মতো স্পিনাররা থিতু হতে পারেননি। নিরন্তর সেই অনুসন্ধানে আপাতত আশা হয়ে জ্বলছেন রিশাদ। বোলিং তো বটেই, ব্যাট হাতেও তাণ্ডব চালাচ্ছেন। সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটার রিশাদকেই সবার মনে ধরবে। এমন ইনিংস আগে কে কবে খেলেছেন, বড় হয়ে উঠেছে এ প্রশ্নটিই।
টি-টোয়েন্টিতে ২১ বর্ষী লেগি নিজের জাত চিনিয়েছেন আগেই। এই লঙ্কানদের বিপক্ষে সিলেটে তিন ম্যাচে বোলার রিশাদ নেন ৩ উইকেট। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বোলিংয়ের পর শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে চালান তাণ্ডব। ব্যাটার রিশাদ সেদিন ৭ ছক্কায় খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। গতকাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাইজুলের জায়গায় সুযোগ পেয়ে খেলেছেন আরেকটি ক্যামিও।
মূলত বোলার হিসেবে দলে থাকা রিশাদ সামলেছেন দুটি দিক। ৯ ওভারে ৫১ রান খরচার দিনে ফেরান কুসল মেন্ডিসকে। ব্যাটিংয়ে যা করেছেন তাকে বীরত্ব বললেও বেশি হবে না।
চট্টগ্রামে রিশাদ হোসেন যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। বেশিরভাগ বাংলাদেশি সমর্থকের চোখ তখন মুশফিকের ব্যাটে নিবদ্ধ। কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যাটারকে অনেকটাই দর্শক বানিয়ে দেন এই তরুণ। চার-ছক্কায় লঙ্কান বোলারদের উড়িয়ে রিশাদ কাটিয়ে দেন শঙ্কা। ১৮ বলের ইনিংসে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বেধড়ক পেটানো রিশাদ বাউন্ডারি থেকেই আনেন ৪৪ রান। ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ৪ ছক্কা ও ৫ চারের মার। রিশাদ সোলো শোতে বাংলাদেশ জেতে ৫৮ বল হাতে রেখে।
দলে প্রথমবার ডাক পেয়ে রিশাদ নিজেও বলেছেন, তার ওপর আস্থা রাখলে তার প্রতিদান দেবেন। ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং স্বনামধন্য ক্রীড়াব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদীন ফাহিম তার ভেতর খুঁজে পেয়েছিলেন সম্ভাবনা, রিশাদ যদি ভয়কে দূর করতে পারে তবেই সাফল্য পাবে, আর সাফল্য পেলে দলেও টিকে থাকবে। সেই ভয়কে জয় করেছেন এই তরুণ।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া রিশাদ বলেন, ‘ম্যাচ জিতিয়ে আসতে পেরে খুব খুশি। শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। পরে বল কানেক্ট করতে পেরেছি। মুশফিক আমাকে বলেছিলেন যদি নিজের শক্তির জায়গায় বল পাই, যেন হিট করি। আমি পেরেছি।’
রিশাদের জাতীয় দলের যাত্রা সবে শুরু। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে মিলিয়ে এখন অবধি খেলেছেন ১২ ম্যাচ। উইকেটের হিসাব সরিয়ে রাখলেও আলাদাভাবে আলোচনার দাবি রাখেন ব্যাটার রিশাদ। ব্যাট হাতে তার গড় পঞ্চাশের বেশি। স্ট্রাইক রেট প্রায় আড়াইশ (২৪৫)। শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে গলদঘর্ম টাইগারদের জন্য আপাতত রিশাদ যে আশীর্বাদ তা বলাই যায়।