প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫৯ এএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪ ০৬:০০ এএম
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে রানশূন্য লিটন দাস
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বিপিএলে টানা ছয় সপ্তাহ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার মধ্যে ছিল টাইগাররা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, দেড় মাস খেলার মধ্য থেকে লাভটা কী হলো? লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারতে হয়েছে ১-২ ব্যবধানে। এগিয়ে থেকেও ওয়ানডে সিরিজ জয়ের প্রথম সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্ত ব্রিগেড। দ্বিতীয় ম্যাচ সহজেই জিতে সিরিজে ফিরেছে লঙ্কানরা। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজে প্রতিটি ম্যাচেই একটা সাধারণ দৃশ্য লক্ষণীয়। প্রতিটি ম্যাচেই গুঁড়িয়ে গেছে টপ অর্ডার। টাইগার টপ অর্ডার যেন টপলেস (বেআব্রু) অর্ডার। ম্যাচের পর ম্যাচ যাচ্ছে কিন্তু টপলেস অর্ডারের সমাধান মিলছে না।
চট্টগ্রামে শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ইনিংস বেশ বড় হলেও শুরুতেই ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডে রান ওঠার আগেই সাজঘরমুখো হন লিটন দাস। তিন বল খেলে শূন্য হাতে ফেরেন তিনি। তারপরও এই ম্যাচেই টপ অর্ডারে কিছুটা দৃঢ়তা দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লঙ্কানদের বিপক্ষে বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চিত্রটা এককথায় দুর্বিষহ।
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে লঙ্কানদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জয় এসেছে ৩২ বল হাতে রেখে। তারপরও টপ অর্ডারের দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি মেলেনি। স্বাগতিকরা ৩ উইকেট হারায় মাত্র ২৩ রানে। দুই অঙ্কের ঘরের নাগাল পাওয়ার আগেই বিদায় নেন লিটন দাস (০), সৌম্য (৩) ও তাওহিদ হৃদয় (৩)। এই ধসের মুখ থেকে দলকে টেনে তোলেন শান্ত (১২২*), মুশফিকুর রহিম (৭৩*)। দল জেতায় ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে টপ অর্ডারের এই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া নিয়ে সেভাবে কথা ওঠেনি।
ওয়ানডের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ওপরের সারির ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সিলেটে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে স্বাগতিকরা হার মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে। এই ম্যাচে টপ অর্ডারের ঘাটতি পূরণ করে ম্যাচ জিততে পারেনি টাইগাররা। ম্যাচে জয়ের জন্য ২০৭ রানের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ থামে ২০৩ রানে। এত বড় রান তাড়ায় শুরুতেই পথ হারায় শান্ত ব্রিগেড। মাত্র ৩০ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই আত্মঘাতী হন লিটন দাস (০), সৌম্য (১২), হৃদয় (৮)। ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আউট হন অধিনায়ক শান্ত (২০)।
লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে হেসেখেলেই লঙ্কানদের হারায় টাইগাররা। জয় আসে ৮ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখে। এই ম্যাচটাতেই কিছুটা দৃঢ়তা দেখিয়েছে টাইগার টপ অর্ডার ব্যাটাররা। অন্তত শুরুর বিপর্যয় ঘটতে দেননি দুই ওপেনার লিটন ও সৌম্য। উদ্বোধনী জুটিতে ৬৮ রান যোগ করেন দুজনে। সৌম্য খেলেন ২৬ রানের ইনিংস। আর লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। টপ অর্ডার রান পাওয়ার সুফলও পায় বাংলাদেশ। নির্বিঘ্নেই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টপ অর্ডারে রান পাওয়া আর না পাওয়ার পার্থক্যটি ব্যাপক। সিরিজ নির্ধারণী টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে উত্তেজনা ওঠে তুঙ্গে। জয় যার সিরিজ তার- এমন বাস্তবতার মুখে পড়ে দুদলই। এমন তাপ ছড়ানো ম্যাচে টপলেস অর্ডারের বৃত্তবন্দিই থেকেছে টাইগাররা। ম্যাচে জয়ের জন্য ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জের সামনে টাইগার ব্যাটাররা গুঁড়িয়ে যান মোটে ১৪৬ রানে। ম্যাচে মাত্র ১৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। ওপরের সারির প্রথম ছয় ব্যাটারের একজনও পাননি দুই অঙ্কের ঘরের নাগাল। কে কার চেয়ে কত দ্রুত আউট হবেন, স্বাগতিক ব্যাটাররা নামেন সেই প্রতিযোগিতায়। একে একে সাজঘরমুখো হন লিটন (৭), শান্ত (১), সৌম্য (১১), হৃদয় (০) ও মাহমুদউল্লাহ (০)। ম্যাচটা হারার আগেই হেরে বসে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত রিশাদ হোসেন (৫৩) ও তাসকিন আহমেদের দৃঢ়তায় বড় লজ্জা এড়ায় স্বাগতিকরা।
টপ অর্ডারের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা থেকে বেরোনোর জন্য সিরিজ ফয়সালার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে লিটনকে বাইরে রেখে দর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। লিটনের জায়গায় সৌম্যর সঙ্গী হিসেবে ইনিংস উদ্বোধন করার সম্ভাবনা বেশি এনামুল হক বিজয়ের। টপ অর্ডারে এই বদলে ভাগ্য বদল হয় কি না সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব ভালো কিছুর সাক্ষ্য দিচ্ছে না। এই সিরিজেও বারবার ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছে স্বাগতিক শিবির। বদল এনে টপ অর্ডার নিজেদের কতটা শুধরে নিতে পারে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।