হেলাল নিরব, সিলেট থেকে
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ২৩:১৯ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ০১:৩৯ এএম
সিরিজ জিতে ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন করেছে লঙ্কানরা— ছবি: বিসিবি
সিরিজের শুরুতে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘ইতিহাস গড়তে চাই।’ অধিনায়কের সুরে সুর মিলিয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ১০ বছরে যা হয়নি, ব্যতিক্রম হয়নি সিলেটেও। টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের বিপক্ষে এ নিয়ে পাঁচটি সিরিজে অপরাজিত থাকছে লঙ্কানরা। গতকাল শনিবার অঘোষিত ফাইনাল বনে যাওয়া তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে শান্তদের ২৮ রানে হারিয়েছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দল।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে লড়াই জমিয়ে হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে এসেছিল রেকর্ড জয়। তৃতীয়টিতে জিতলেই হবে ইতিহাস, লঙ্কানদের বিপক্ষে ঘুচবে এক দশকের অপেক্ষা। কিন্তু এমন সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি শান্তরা। বোলিংয়ে বাজে শুরুর খেসারত পুষিয়ে দিয়েছেন কুশল মেন্ডিস। বাংলাদেশকে প্রিয় প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা কুশলের দারুণ ফিফটিতে লঙ্কানরা ৭ উইকেট হারিয়ে জমা করে ১৭৪ রান।
জবাবে নুয়ান থুশারার স্লিঙ্গি অ্যাকশনের এক ওভারেই সব স্বপ্ন শেষ। দেড়শ ছাড়ানো লক্ষ্যে টাইগাররা যখন পঞ্চাশ পেরোবে কি না শঙ্কায় পড়েছিল, তখন টাইগার টপ অর্ডারদের চোখে আঙুল দেওয়া ব্যাটিং করেন রিশাদ হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ। তবে হার রুখতে পারেননি, তাদের ঝড় বরং বাড়িয়েছে আক্ষেপ।
১৪৬ রানে থেমে যাওয়া বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের শুরু ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। আগের ওভারে বাজে শট খেলে চাপ বাড়িয়ে দেন লিটন দাস। সেই চাপ বহুগুণে বাড়িয়ে ধস নামান মাথিশা পাথিরানার জায়গায় লঙ্কান দলে আসা থুশারা। আক্রমণে এসেই নিজের দ্বিতীয় বলে ছত্রখান করে দেন অধিনায়ক শান্তর স্টাম্প। টাইগার অধিনায়ক ফেরেন ৬ বলে ১ রান করে। তাওহিদ হৃদয়কেও সরাসরি বোল্ড করেন থুশারা।
হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা থুশারার পরের শিকার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হ্যাটট্রিক। আর এখানেই হেরে বসে বাংলাদেশ। থুশারার পরের শিকার সৌম্য সরকার। পঞ্চম শ্রীলঙ্কান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করেছেন ২৯ বছর বয়সি এই লঙ্কান পেসার। শ্রীলঙ্কার এটি ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ হ্যাটট্রিক করিম জানাতের, গত বছর এই সিলেটেই।
দলীয় ৩২ রানে বিদায় নেন সেনসেশন জাকের আলী। বড় লজ্জার সামনে দাঁড়িয়ে স্বাগতিকরা। এখান থেকে দলকে টেনে তোলেন রিশাদ ও তাসকিন। গ্যালারি মাতিয়ে দুর্দান্ত ফিফটি হাঁকান রিশাদ। আট বা তার নিচে আফিফ হোসেনের পর রিশাদই দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পেলেন ফিফটি। রিশাদ ভেঙেছেন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে করা জাকেরের ছক্কার রেকর্ড। ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি গতকাল রেকর্ড ৭ ছক্কায় সাজান রিশাদ। তাসকিনের হার মানা ৩১ রানের ইনিংসটি মাত্র ২১ বলে গড়া। তবে আশার ক্ষীণ আলো নিভে যায় রিশাদের বিদায়ে। এরপর শরিফুলকে ফিরিয়ে হারের আনুষ্ঠানিকতা সারেন দাসুন শানাকা।
নুয়ান থুশারার ফাইফারের দিনে ব্যাটিংয়ে তাণ্ডব চালিয়ছিলেন কুশল মেন্ডিস। বাংলাদেশের বিপক্ষে মেন্ডিস সংক্ষিপ্ত সংস্করণের শুরুটাই করেছিলেন হ্যাটট্রিক ফিফটি দিয়ে। সাকিব আল হাসান-লিটন দাসদের বিপক্ষে ৮ ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ইনিংসগুলোও ঈর্ষণীয় ৫৩, ৭০, ৫৭, ১১, ৬০, ৫৯, ৩৬ ও গতকালের ৮৬। ইনিংসের শুরেুতে তাসকিন-শরিফুলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পর খাপছাড়া হয়ে রান বিলিয়ে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান।
আগের দুটি ম্যাচের মতো গতকালও ফিজ ছিলেন নখদন্তহীন। গতকালও শেষ ওভারের বোলিংয়ে ১৪ রান দেন মুস্তাফিজ, চার ওভারে দেন ৪৭ রান। বাকি সবাই দারুণ থাকলেও কুশলের ধারাবাহিকতার কাছে হার মানে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে ১৮১ রান গড়ে সিরিজের সেরাও হয়েছেন কুশল। লঙ্কান ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে শানাকার ব্যাটে।
তার ছোট্ট ঝড়েই ১৭৪ রান পর্যন্ত যায় শ্রীলঙ্কা, যা পেরোতে গিয়ে থুশারার তোপে পড়ে বাংলাদেশ। ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দেন টাইগার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ হারার পাশাপাশি ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে দেড় বছরের অপ্রতিরোধ্য যাত্রাও থেমেছে শান্তদের।