প্রবা প্রতিবেদক, সিলেট থেকে
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
রিশাদ-তাসকিনের ঝড় আক্ষেপ বাড়িয়েছে— ছবি: এএফপি
সিরিজ জয়ের সব রকমের পরিকল্পনা কষে রেখেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রস্তুত ছিল মঞ্চও। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে টাইগাররা যেভাবে খেলেছে, তাতে স্বপ্নটাও বড় হচ্ছিল। নাজমুল হোসেন শান্তদের ইতিহাস পাল্টানোর সাক্ষী হতে গতকাল শনিবার গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তবে উৎসবের উপলক্ষ এনে দিতে পারেননি শান্তরা। নুয়ান থুশারার এক ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে স্বাগতিকরা। সিরিজ হেরে স্বাগতিক অধিনায়ক তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এমন আর হবে না।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কখনও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে শেষ দেড় বছরে টাইগাররা হারেনি কোনো সিরিজও। নাজমুল হোসেন শান্তদের সামনে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই দুটি রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গড়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। শান্তরা লঙ্কানদের লঙ্কাকাণ্ড থামিয়ে দিতে তো পারেননি উল্টো লঙ্কা পেসে ধসে পড়েছেন। ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শান্ত পুরস্কারের মঞ্চেই জানালেন তাদের ঘাটতি, ‘আমাদের আরও সতর্ক হয়ে ব্যাটিং করা দরকার ছিল, বিশেষ করে শুরুর ছয় ওভারে।’
টাইগার কাপ্তান এরপর সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন একই কথা। লঙ্কানদের ১৭৫ রানের জবাবে টাইগাররা চতুর্থ ওভারে থুশারার কাছেই কি হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ? শান্তর মত, ‘আমারও তাই মনে হচ্ছে। খুবই ভালো ওভার করেছে। বোলারকে কৃতিত্ব দিতে হবে। ওই এক ওভারেই আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি।’
সিলেটের ‘অঘোষিত ফাইনালে’ টাইগারদের পেছনে হাঁটার শুরুটা এনে দেন লিটন দাস। ইনিংসের শট খেলে চাপ বাড়ান এই ওপেনার। সেই চাপ বহুগুণে বাড়িয়ে ধস নামান মাথিশা পাথিরানার জায়গায় লঙ্কান দলে আসা থুশারা। বোলিংয়ে এসেই বোকা বানান শান্তকে। প্রথম বলটি ডট। পরের বল বুঝে ওঠার আগেই স্টাম্প ভেঙে যায়। শান্ত ফেরেন ৬ বলে ১ রান করে। তাওহিদ হৃদয়কে ঠিকঠাক দাঁড়াতেই দেননি থুশারা। একই বল, একই লেন্থ। ফলও একই। স্টাম্প ছিটকে যায় তাওহিদের।
হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা থুশারার পরের শিকার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একটু বাঁক খেয়ে ব্যাটের ফাঁক গলে অভিজ্ঞ ব্যাটারের প্যাডে আঘাত হানে বল। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু আম্পায়ার্স কলের কাছে বেঁচে ফিরতে পারেননি। এখানেই মূলত হেরে বসে বাংলাদেশ। শুধু হ্যাটট্রিকেই শেষ নয়, থুশারা পরে ফিরিয়েছেন সৌম্য সরকারকেও। তার এ বিধ্বংসী বোলিংয়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে সিলেটের দর্শকঠাসা গ্যালারিতে। পঞ্চম শ্রীলঙ্কান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক পেলেন থুশারা।
শান্ত কথা দিয়েছেন আগামীতে এমন আর হবে না, ‘আসলে সব সময় কিন্তু এ রকম হয় না। এক ওভারে ৩ উইকেট পড়েছে তার আগের ওভারে ১ উইকেট পড়েছে। এত উইকেট সাধারণত পড়ে না। আমরা একটু বেশি উইকেট দিয়ে ফেলেছি। আপনি যা বোঝাতে চাচ্ছেন তেমন না হয়তো। ব্যাটাররা প্রস্তুতি নিয়েই আসে। ওই এক ওভারে আসলে পরিকল্পনা করারও সুযোগ ছিল না। টানা ৩ বলে ৩ উইকেট। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে এমন কিছু হবে না।’
টাইগারদের প্রথম উইকেট পতন ১৩ রানে। পরের তিন রান তুলতে হারিয়ে বসে আরও তিন উইকেট। ২৪ রানে সৌম্য ফেরেন পঞ্চম শিকার হয়ে। এরপর দলীয় ৩২ রানে জাকের আলী অনিকের পতন দীর্ঘায়িত করেছে হতাশাকেই। এত কম রানের মধ্যে ৬টি উইকেট এবারই প্রথম হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে খাদের কিনার থেকে দলের বড় লজ্জা এড়ান রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। গ্যালারি মাতিয়ে ছ্ক্কার রেকর্ড গড়ে রিশাদ হাঁকান দুর্দান্ত ফিফটি। আট বা তার নিচে আফিফ হোসেনের পর রিশাদই দ্বিতীয় খেলোয়াড় যিনি ফিফটি করেছেন। ২১ বলে ৩১ রান করে তাসকিন আহমেদ দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ।
অধিনায়ক শান্ত সিরিজ হেরেও রিশাদের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত, ‘বোলিং খুবই ভালো করেছে কন্ডিশন অনুযায়ী। ব্যাটিংটা দরকার ছিল, কারণ এখন আমরা বিশেষজ্ঞ ৬ ব্যাটার নিয়ে খেলছি। একজন অলরাউন্ডার লাগে। আমার মনে হয় ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে এটা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো হবে।’
লম্বা সংবাদ সম্মেলনে শান্তর কণ্ঠে ঝরেছে থুশারার প্রশংসা। সেই সঙ্গে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমানের পাশে। অধিনায়কের কথায়, বিশ্বকাপ সামনে কন্ডিশন অনুযায়ী নিজেদের সেরা প্রস্তুতির কথা। এবং সবশেষে দিয়েছেন লঙ্কানদের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ভুল শুধরানোর প্রতিশ্রুতি। সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়তে না পারলেও শান্ত ফিরে আসার ব্যাপারে প্রত্যয়ী । লঙ্কানদের কাছে আরেকটি সিরিজ হারানোর পরও শান্ত খুশি। এই সিরিজে ইতিবাচক অনেক কিছুই পেয়েছেন বলে মনে করছেন টাইগার কান্ডারি। সেই ভালো কিছু সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে ডালাস পর্যন্ত আদৌ পৌঁছাবে কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।