× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কান্নাভেজা চোখে ওয়াগনারের বিদায়

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪১ এএম

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৮ পিএম

নিল ওয়াগনার। ছবি : সংগৃহীত

নিল ওয়াগনার। ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট মাঠে অনমনীয় এক চরিত্র ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার নিল ওয়াগনার। চোটাঘাত কিংবা চাপে যিনি কাবু হতেন না সহজে, সেই তিনি ভেঙে পড়লেন বিদায়বেলায়। ধরে এলো কণ্ঠ, চোখে নামল প্লাবণ। অশ্রুভেজা চোখে ওয়াগনার জানিয়ে দিলেন, আর কখনও খেলবেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ওয়েলিংটনে মঙ্গলবার কিউইদের কোচ গ্যারি স্টেডকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন ওয়াগনার।

গেল সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোচের সঙ্গে আলোচনা করেন ওয়াগনার। নিজের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তখনই বুঝে ফেলেছিলেন ৩৮ ছুইঁ-ছুঁই বয়সের বাঁহাতি পেসার। এরপর যখন জানতে পারলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলের পরিকল্পনায় তিনি নেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তখনই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জগৎ বলতে তার জন্য ছিল কেবল টেস্ট ক্রিকেটই। এই যুগের সেই বিরল ক্রিকেটারদের একজন তিনি, ৬৪ টেস্ট খেললেও কখনও রঙিন পোশাকে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তার। 

২৬০ উইকেট নিয়ে শেষ হলো ওয়াগনারের টেস্ট ক্যারিয়ার। নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে যা পঞ্চম সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৭ উইকেট তার সেরা বোলিং। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৯ বার। গড়ে প্রতি ৫২.৭ ডেলিভারিতে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে অন্তত ১০০ উইকেট শিকারিদের মধ্যে তার চেয়ে ভালো স্ট্রাইক রেট শুধু তাদের সর্বকালের অন্যতম সেরা বোলার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির (৫০.৮)।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রায় এক যুগ টেস্ট ক্রিকেট খেলা ওয়াগনারের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটের পথে এগিয়ে চলা, সবই দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০০৬ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক মৌসুমেই দারুণ বোলিংয়ে নজর কাড়েন তিনি। পরের মৌসুমেই দক্ষিণ আফ্রিকার একাডেমি দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ সফর করেন। ওই মৌসুমে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট ছিল তার। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সেঞ্চুরিয়নে একটি টেস্টে ছিলেন দ্বাদশ ব্যক্তি।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের কোটা পদ্ধতির কারণে টেস্ট অভিষেকের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ক্লাব ক্রিকেট খেলতে ইংল্যান্ড যাওয়ার পর সাসেক্সের সঙ্গে চুক্তি প্রায় হয়েই গিয়েছিল। পরে মত বদলে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার আশায়।

সেখানেও তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করতে থাকেন। বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম খবরের শিরোনাম হন তিনি ২০১১ সালে একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে টানা চার বলে উইকেট নিয়ে। সেই ওভারের শেষ বলেও উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে এক ওভারে (৬ বলের) ৫ উইকে শিকারের অনন্য কীর্তি গড়েন তিনি সেদিন।

টানা দুই মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের পর এবং অন্য দেশের হয়ে খেলার জন্য চার বছরের বাধ্যবাধকতা পূরণ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের টেস্ট দলে ডাক পান তিনি। ২০১২ সালে ওয়েস্টইন্ডিজে তার টেস্ট অভিষেক হয়ে যায়। প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পান নবম টেস্টে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে।

এই মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়া পর ওয়াগনারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কিউই কোচ গ্যারি স্টেড। ওয়াগনার জানালেন, ‘জানতাম, সময়টা এগিয়ে আসছে। লোকে বলে, অবসরের ভাবনা আসা মানেই সব এরকম গুলিয়ে যাওয়া। আমি জানতাম, সময়টা আসছে এবং কাছাকাছিই আছে। গত সপ্তাহে যখন ভেবে দেখলাম এবং সামনে তাকালাম, যে ম্যাচগুলি আছে সামনে, আমার মনে হলো, সরে দাঁড়ানোর এবং অন্যদের সুযোগ করে দেওয়ার সঠিক সময় এখনই। (সিদ্ধান্ত) সহজ নয় কখনোই। পথটা আবেগময়, অনেক উত্থান-পতন থাকে। তবে আমার মনে হয়, দায়িত্ব এখন অন্যদেরকে তুলে দেওয়ার সময় এবং ব্ল্যাক ক্যাপদের ভালো একটা জায়গা রেখে যাচ্ছি, যেখান থেকে আশা করি অন্যরা এই ধারাকে সামনে এগিয়ে নেবে।’

আইসিসি টেস্ট রাঙ্কিংয়ে নিউজিল্যান্ড প্রথমবার শীর্ষে ওঠায় তার ছিল বড় ভূমিকা। প্রথম আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের স্মরণীয় স্মৃতির তালিকায় তিনি রাখলেন তার প্রথম টেস্ট জয়কে (২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে), ওয়েস্টইন্ডিজে নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়কে (২০১৪), ২০১৮ সালে ক্রাইস্টচার্চে চতুর্থ ইনিংসে ৯ নম্বরে নেমে ১০৭ মিনিট ব্যাটং করে টেস্ট ড্র করে সিরিজ জয়ের সেই ম্যাচকে এবং গত বছর ইংল্যান্ডের ১ রানের নাটকীয় সেই জয়কে, যেখানে শেষ উইকেট শিকার করেন তিনিই।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া সিরিজের স্কোয়াডেই তাকে রাখার কথা ছিল না। তবে দলের সঙ্গে থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ করে দিতেই প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে তাকে রাখা হয়। একাদশে তার জায়গা হবে না। তবে শেষবার ড্রেসিং রুমে থাকছেন, দলের প্রস্তুতিতে সহায়তা করছেন। এই সুযোগটুকুর জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানালেন তিনি। বিদায়বেলায় ক্যারিয়ারের আরও নানা বাঁকের কথা বললেন তিনি। পরিবার, বন্ধু, কোচ, মেন্টরদের কথা বলতে গিয়েই ভেঙে পড়লেন কান্নায়।

ওয়াগনারের পরিসংখ্যান এমনিতেই যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তবে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট দলে তার ভূমিকা যে ছিল আরও গভীর, তা ফুটে উঠল কোচের কথায়, ‘তার পরিসংখ্যান অসাধারণ। তবে দলে তার অবদানকে কোনোভাবেই খাটো করার সুযোগ নেই। যখন কোনোভাবেই কিছু হয় না, তখন সে ঠিকই উইকেট শিকারের পথ খুঁজে নিত। তার নিখুঁত নিশানা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও অনমনীয় মানসিকতা বড় ভূমিকা রেখেছে আমাদের অনেক স্মরণীয় টেস্ট জয়ে এবং সব সময়ই তাকে মনে রাখা হবে সিংহ হৃদয় বোলার হিসেবে। ব্ল্যাকক্যাপদের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে সে এবং অবশ্যই আমরা তার প্রাণশক্তি ও হার না মানা মানসিকতা মিস করব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা