প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৪ এএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৪ এএম
গতকাল রবিবার বাফুফে ভবনের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাফের ট্রফি বুঝে পাওয়ার পর ফটোসেশনে বাংলাদেশ দল। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু
‘আমরা তো হোটেলে গিয়ে দেখেছি ইন্ডিয়াকে ট্রফিটা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের দেয়নি। আমার টিমমেটরা সবাই বলছিল ওদের কেন ট্রফিটা দেওয়া হলো, এটা নিয়ে ওরা আপসেট ছিল, সবাই তো বলছিল দুই টিমকে একসঙ্গেই ট্রফি দেবে। তখন আমি সবাইকে (খেলোয়াড়দের) বলছিলাম, ট্রফিটা মেইন না, আমরা জিতছি এটাই বড় কথা। আর আমাদের নামের পাশে তো চ্যাম্পিয়ন লেখাই আছে, এটাই অনেক। ট্রফি যেদিন দেয় দিক, সমস্যা নাই।’ গতকাল রবিবার বাফুফে ভবনের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাফের ট্রফি বুঝে পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে এভাবেই বলছিলেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার। বাংলাদেশ যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফির জন্য যে মোসাম্মৎ সাগরিকা, উমেহ্লা খাতুন, পূজা দাসরা অপেক্ষায় ছিলেন সেটা আফিদার কথা থেকেই পরিষ্কার। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষা অবসান ঘটল সাফ ট্রফি জয়ের ১০ দিনের মাথায়।
গতকাল দুপুরে বাংলাদেশকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের ট্রফি দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের তৃতীয় নেপাল এবং চতুর্থ হয়েছে ভুটান। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পাওয়ার পর আফিদা বলেন, অনেক দিন অপেক্ষার পর ট্রফিটা পেলাম, খুশি লাগছে।’ এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপ আছে প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটুর। তার ভাষায় ‘ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে খুব খুশি হতাম। আমাদের টার্গেট ছিল এটাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয় নাই। তবে ভালো লাগছে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
এর আগে মেয়েদের সব সাফল্যই আসে সাবেক কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের হাত ধরে। কয়েক মাস আগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সফল এই কোচ। তারপরই বাফুফে দায়িত্ব তুলে দেয় সাইফুল বারীর কাঁধে। দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই ছিল সাইফল বারীর বড় কোনো অ্যাসাইনমেন্ট। তার ওপর প্রতিযোগিতার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল তার সামনে। এই পরীক্ষায় উতরে গেছেন কোচ সাইফুল বারী, ‘আমার দায়িত্ব হচ্ছে কোচিং করানো, তাদের খেলায় উন্নতি করা। প্লেয়ারদের আরও ভালো করা যায় কি না, সেটি নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলি। আমার এর বাইরে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তবে সবচেয়ে বড় বোঝাটা ছিল গত বছরের চ্যাম্পিয়ন, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, ট্রফি ধরে রাখা। এখানে মেয়েরা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাতে আমার অবদান খুবই কম। মেয়েরা পরিশ্রম করছে, ওরা প্রস্তুত ছিল। আমার এখানে অবদান তেমন কিছুই না, জাস্ট আমার হাত ধরে হয়তো চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা আমি এই টিমের সঙ্গে কাজ করছি। তাই পুরো কুতিত্ব মেয়েদের। কিরন আপা (মাহফুজা আক্তার কিরন) এবং সালাউদ্দিন ভাই (বাফুফে সভাপতি) এদের (খেলোয়াড়দের) যে রকম সুযোগসুবিধা দিয়েছে, বছরের পর বছর একসঙ্গে কাজ করেছে, তাতে ওনাদের অবদান অনেক। এটা মেয়েদের অনেক টিমেই নেই। মাঠের প্রশিক্ষণই সব না, প্রধান কাজ হচ্ছে সব মিলিয়ে একটা দল মসৃণভাবে পরিচালনা করা। এটা ওনারা করেছেন।’
ফাইনালে টস বিতর্কের পর একটা সময় ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা দুই দলকে ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দেন। সে সময়ের মধ্যে কোনো দল মাঠে উপস্থিত না হলে অন্য দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে বলেও জানান। যদিও দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের মধ্যেও ভারতীয় দল মাঠে প্রবেশ করেনি এবং তারা ম্যাচ কমিশনারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। পরবর্তী সময়ে সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালের নেতৃত্বে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণায় বিষয়টি মীমাংসা হয়।
বাংলাদেশ সেদিন ওই নিয়মটি নিয়ে অনড় থাকতে পারত কি না, জানতে চাইলে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরন বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমি তো তাদের সঙ্গে ঝগড়া করব না। আমরা চাইলে সেটা করতে পারতাম। আমরা ওদের সঙ্গে সিদ্ধান্তে অনড় থেকে এককভাবে শিরোপা জিততে পারতাম। তাতে কী হতো, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতো। এসবের কি কোনো দরকার আছে? কেন তাদের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করব। আর ওরা ছিল আমাদের অতিথি। আর আমরা অতিথিদের সঙ্গে এমনটা করতে পারি না। অতিথিদের সঙ্গে যেমন আচরণ করা উচিত, সেটাই করেছি।’
মেয়েদের এত বড় অর্জনের পরও বাফুফের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটা হয়েছে বেশ সাদামাটাই। সেটা হতে পারত আরও বড় পরিসরে। তবে সে পথে হাঁটেনি বাফুফে। এ ব্যপারে মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘মাঠে যদি আমরা উদযাপন করতাম তার গ্ল্যামারও থাকত অন্যরকম। সেটা যেহেতু হয়নি, তাই আমাদের এটা মানতে হবে।’