বিপিএল-২০২৪
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:১৫ এএম
বিপিএলে বল হাতে বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়েছেন ইমরান তাহির— রংপুর রাইডার্স
পাকিস্তান পেসার আমের জামাল হয়তো নিজেই বিস্মিত। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যিনি আগে কখনও চারটির বেশি উইকেট পাননি, তিনিই বল হাতে একাই ধসিয়ে দিলেন খুলনা টাইগার্সকে। এতটা বোধকরি আশা করেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও। ওই সময় টেবিলের শীর্ষ দুই দল কুমিল্লা-খুলনার হাইভোল্টেজ ম্যাচটির সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন পাকিস্তানি পেসার আমের। বিপিএলের ওই ম্যাচটি তো বটে, আসরের বেশিরভাগ ম্যাচেই ব্যবধান গড়ে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দেন বিদেশি ক্রিকেটাররা।
খেলাধুলায় বিশেষ করে ক্রিকেটে বলা হয়, সবাই নয়, কেউ কেউ ম্যাচ উইনার। আর চলতি বিপিএলে সেটি প্রমাণ করে চলেছেন বিদেশিরা। ঢাকা থেকে সিলেট ঘুরে ফের ঢাকা পর্ব শেষে কথাটি এভাবে বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বেশিরভাগ সময়ই জ্বলে উঠছেন বিদেশিরা। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকাতেও বিদেশিদের দাপট। এখন অবধি বিপিএলের ২৮টি ম্যাচের ১৫টিতে সেরা হয়েছেন বিদেশিরা। বাকি ১৩টি স্থানীয় ক্রিকেটারদের দখলে।
এটা শুধু ম্যাচের সেরা হওয়াদের হিসাব। মোটা দাগে ম্যাচের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী খেলোয়াড়দের হিসাব কষলে বিদেশিরাই এগিয়ে। বিদেশি খেলোয়াড় সংকটের বিপিএলে এখন পর্যন্ত মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের তালিকায় সেরা ছয়ের তিনজনই বিদেশি।
সেরা ছয়ের মাঝে থাকা তিন দেশির আবার দুজনই বোলার। তালিকায় এক নম্বরে থাকা শরিফুল ইসলাম খেলেছেন নয়টি ম্যাচ। বোলিংয়ে তাণ্ডব চালানো শরিফুল ১৭ উইকেটের পাশাপাশি করেছেন ১৪ রান। আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির সর্বমোট ইমপ্যাক্ট ৩৫১.৪। কিন্তু শরিফুল ঢাকাকে জেতাতে পেরেছেন মোটে এক ম্যাচে।
তালিকায় থাকা তাওহিদ হৃদয়ের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট ৩২১.১। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ২৫০ রান করা বাংলাদেশের এই টপ অর্ডার ব্যাটার একটি ম্যাচ বাদে সেভাবে ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রাখতে পারেননি। ম্যাচ জয়ের ভূমিকা খুব অল্প। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে এবারের আসরে একমাত্র সেঞ্চুরিটি আসে তার ব্যাট থেকে।
৩০৭.২ ইমপ্যাক্টের মাহেদি ম্যাচের সেরা হতে পারেননি একবারও। অন্যদিকে তিন বিদেশির তিনজনেই হয়েছেন ম্যাচের সেরা। নিজের দিনে প্রতিপক্ষকে চূর্ণ করে দিয়েছেন একাই। তালিকায় দুইয়ে থাকা সামিত প্যাটেল বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। আফগানিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটার আজমতউল্লাহ ওমরজাই রংপুরের হয়ে দেখিয়েছেন দাপট। সাত ম্যাচে সেরাও হয়েছেন দুবার। ইমপ্যাক্ট ৩২৮। সেখানে মোহাম্মদ নাঈম কিংবা সাকিব আল হাসানদের ইমপ্যাক্ট তিনশর অনেক নিচে।
বিপিএলে স্থানীয় ব্যাটারদের ব্যাটে রান নেই, হাতেগোনা দুয়েকজন বাদে দেশি বোলাররাও পাচ্ছেন না তেমন সাফল্য। মারকাটারি আসরের শেষের দিকে চলে এলেও খোলসবন্দি দেশি ক্রিকেটাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত মোটা দাগে ব্যর্থ, আফিফ হোসেন কিংবা লিটন দাসও বলার মতো তেমন কিছু করতে পারছেন না। বিশেষ করে যারা টি-টোয়েন্টি দলের ক্রিকেটার, বিশ্বকাপ সামনে রেখে তারা যেন পারফরম্যান্স করা ভুলে গেছেন। খালেদ মাহমুদ সুজনের কণ্ঠে তাই ঝরেছে হতাশা।
দেশিদের ইমপ্যাক্ট রাখতে না পারার বিষয়ে বেশ চিন্তিত সুজন, ‘বিদেশি ক্রিকেটাররা এখানে প্রতিনিয়ত খেলে না, ওরা তো করে দেখাচ্ছে। তাহলে স্থানীয়রা কেন পারবে না। মাঝে মাঝে এতটা নিয়ে চিন্তা হয়। আমাদের গেম সেন্স, গেম নলেজ, মানে আমরা এক ফ্লোতে ব্যাটিং করতে চাই এটা কোনোদিনই হবে না। আপনি কোনো দিন হয়তো ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করবেন, কোনোদিন ২০০ স্ট্রাইক রেটেও ব্যাটিং করতে পারেন আবার ৯০ স্ট্রাইক রেটেও ব্যাটিং করতে হবে। সেরকম চিন্তা বা মাইন্ড সেট নিয়ে ব্যাটিং করলে আমি মনে করি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে আসলে।’
বিপিএলে প্রায় প্রতিটি ম্যাচ শেষে জিমি নিশাম বা আভিস্কা ফার্নান্দোদের মতো তারকারা যখন ইমপ্যাক্টফুল পারফর্ম করে, তখন চলে আসে প্রশ্নটি, দেশি খেলোয়াড়দের সমস্যা আসলে কোথায়?