প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৬ পিএম
যুগ্ম চ্যাম্পিয়নে মীমাংসা হয় ২০২৪ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। প্রবা ফটো
ফ্লাডলাইটের আলোয়
কয়েন টসের পরই উদযাপনে ফেটে পড়েন ভারতীয় মেয়েরা। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছিল ছলছল চোখে অবাক
তাকিয়ে আছেন বাংলাদেশের দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার। শিরোপা হারানোর বেদনায় ভেঙে পড়লেন
তার সতীর্থরাও। স্বাগতিক দল আপত্তি তোলার পর জানা গেল শিরোপা হাতছাড়া হয়নি বাংলাদেশের।
সুযোগ আছে তাদের সামনেও। আসে নতুন সিদ্ধান্ত। টসে শিরোপা নির্ধারণ নয়, চলবে পেনাল্টি।
এবার আপত্তি তোলেন ভারতীয়রা। নির্ধারিত সময়ের খেলা আর পেনাল্টি শুটআউটের পর কেটে যায়
রুদ্ধশ্বাস আরও আড়াই ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত যুগ্ম চ্যাম্পিয়নে মীমাংসা হয় ২০২৪ সালের সাফ
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। কিন্তু এতকিছুর পর প্রশ্নটা স্বাভাকিভাবেই
উঠছেÑ এত ভুলের দায় কার?
‘বাইলজে টসে শিরোপা
নিষ্পত্তির ধারা নেই, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে টাইব্রেকার চালিয়ে যাওয়াই নিয়ম’Ñ এই দাবিতে
টস নিয়ে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ দল। এরপর দুটি দেশের ফুটবল ফেডারেশন, দক্ষিণ এশিয়ান
ফুটবল ফেডারেশন (সাফ), এশিয়ান ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার (এএফসি) কর্তাদের মধ্যে প্রায়
আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে আলোচনা। দুই পক্ষের সম্মতিতে শেষ পর্যন্ত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা
করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতকে। কিন্তু তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল জানতে চাওয়া হয় সাফের
সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালের কাছে। শুক্রবার মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি জানান,
‘ম্যাচ কমিশনার (ডি সিলভা জয়াসুরিয়া ডিলান) ভুলটা করেন। সে সময় রেফারি পেনাল্টি চালিয়ে
যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু টসের বিষয়টি ম্যাচ কমিশনারই তোলেন। পরে তিনি তার ভুল স্বীকার
করেছেন।’
ম্যাচ কমিশনার
ভুল স্বীকার করে আধাঘণ্টা সময় বেঁধে দেন দুই দলকে। বাংলাদেশ দল পেনাল্টি নিতে রাজি
হলেও ভারত অস্বীকৃতি জানায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার মধ্যেও তারা মাঠে প্রবেশ করেনি। শেষ
পর্যন্ত ভারতীয় ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে বসেন আনোয়ারুল হক, ‘আমরা ওদেরকে তিনটি প্রস্তাব
দেই। এক. দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা। দুই. ম্যাচের মীমাংসা পেনাল্টিতেই হওয়া।
তিন. পুনরায় ম্যাচ আয়োজন। অনেক কিছুর পর শেষ পর্যন্ত ওরা প্রথমটি বেছে নেয়।’ যুগ্ম
চ্যাম্পিয়নের সিদ্ধান্ত মেনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাঠে প্রবেশ করে ভারতীয় দল।
ট্রফি ভাগাভাগির ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করে অতিথি দলটি। তবে এই তিনটি সিদ্ধান্তের একটিও
যদি ভারত মেনে না নিত, তাহলে কী হতো জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সেক্ষেত্রে ম্যাচ
অ্যাবান্ডনড (পরিত্যক্ত) হতো। তারপরও আমরা কমিটির কাছে বিষয়টি তুলতাম।’
যদিও শ্রীলঙ্কান
ম্যাচ কমিশনারের ভুলে এত হট্টগোল বেধে গেল। তবে বাংলাদেশ বা বাফুফে দায় এড়াতে পারে
কি না প্রশ্ন করতেই আনোয়ারুল হকের উত্তর, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশ কেন দায় নেবে।
এটা ম্যাচ কমিশনারের ভুল। তা ছাড়া সে ভুল স্বীকার করেছে। এরকম কিছু (২২ শটের পেনাল্টি)
হবে আমাদের ধারনাতেই ছিল না। আর এ ধরনের ভুল হতেই পারে। এএফসি কাপেও তো এরকম ভুল কতই
হয়েছে।’ এরপর তিনি এটাও বলেছেন যে, ভবিষ্যতে যাতে এমন কোনো ভুল না হয় সে ব্যাপারে সাফ
সতর্ক থাকবে।
ম্যাচে মোট গোল
হয়েছে ২৪টি। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়। এর মধ্যে পেনাল্টি কিকে এসেছে
২২ গোল। ভারত-বাংলাদেশের ছোট মেয়েরা স্পটকিকে ছিলেন নিখুঁত। গোল করেছেন দুই দলের গোলরক্ষকই।
এত কিছুর পরও বড়দের ভুলে তিন ঘণ্টার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কেটেছে আফিদা-সাগরিকাদের। স্বভাবতই
প্রশ্ন উঠছে, বড়দের ভুলের মাশুল কেন গুনতে হলেঅ ছোটদের?