প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৭ পিএম
জুনিয়র টাইগারদের আজ জিততে হবে বড় ব্যবধানে। প্রবা ফটো
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখে মাহফুজুর রহমান রাব্বিরা। প্রাথমিক পর্বে শুরুতেই হারের ধাক্কা সামলে সুপার সিক্সে নেপাল পরীক্ষায় উতরালেও সেমিফাইনাল মিশনে কঠিন বাস্তবতার সামনে জুনিয়র টাইগাররা। সেমির মঞ্চে টিকে থাকতে ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত শক্তি পাকিস্তানকে শুধু হারালেই চলবে না দূর করতে হবে নেট রান রেটের বড় ব্যবধানও। এমনি আজ শনিবার বেনোনিতে তাপ ছড়ানো মহাদ্বৈরথে মুখোমুখি হচ্ছেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যুবারা।
নক আউটে রূপ নেওয়া ম্যাচের আগে পরিসংখ্যান, কিংবা চলতি আসরে পয়েন্ট টেবিল- সবকিছুতেই এগিয়ে আছে পাকিস্তান। তাদের ঝুলিতে আছে ৬ পয়েন্ট। বাংলাদেশের অর্জন সেখানে ৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ ম্যাচ যদি পরিত্যক্ত কিংবা টাই হয় তবে সেমির আগে বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে রাব্বিদের। পাকিস্তানের নেট রান রেট ১.০৬৪। বাংলাদেশের নেট রান রেট ০.৩৪৮। অর্থাৎ জিতলেই হবে না, সেমির রেসে থাকার জন্য রান রেটের জটিল হিসাবও মেলাতে হবে রাব্বিদের।
চলতি যুব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচে হারেনি পাকিস্তান। এমন একটা দলের বিপক্ষে খুব বড় ব্যবধানে জয়ের চ্যালেঞ্জ এখন রাব্বি ব্রিগেডের সামনে। জুনিয়র টাইগারদের জন্য কতটা কঠিন সমীকরণ অপেক্ষা করছে সেটার দিকে তাকানো যাক। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ যদি আগে ব্যাট করে তাহলে জয়ের ব্যবধান হতে হবে কমপক্ষে ৫০ রান। যেমন বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ২৫০ রান করলে পাকিস্তানকে ২০০ রানের আগে অলআউট বা আটকে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে ০.০০১ বেশি থাকবে বাংলাদেশের রানরেট। তবে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৫০ পার হয়ে গেলে ব্যবধান রাখতে হবে কমপক্ষে ৫১ রান। অর্থাৎ বাংলাদেশ ২৭০ রান করলে পাকিস্তানকে ২১৯ রানের ভেতর অলআউট করতে হবে। অথবা ৩০০ করলে পাকিস্তানকে আটকে রাখতে হবে ২৪৯ রানের মাঝে। অন্যদিকে পাকিস্তান আগে ব্যাট করলে বাংলাদেশকে ৩৮ থেকে ৪০ ওভারের মাঝে ম্যাচ শেষ করতে হবে। ৩০০ রান টার্গেট থাকলে ৩৯.৩ ওভার পর্যন্ত খেলার সুযোগ পাবেন টাইগাররা। ২৫০ রান করলে ৩৯ ওভার এবং ২০০ রানের ক্ষেত্রে ৩৮.৪ ওভার সময় পাবে বাংলাদেশ।
এমন দুরূহ সমীকরণ মেলানো সম্ভব কেবল মাঠের খেলায়। আপাতত গাণিতিক হিসাব বলছে বাংলাদেশের জন্য কাজটা খুব একটা সহজ হচ্ছে না। চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথম রাউন্ডে খেলছে ১৬টি দল। প্রতি গ্রুপ থেকে ৩টি করে দল এসেছে সুপার সিক্সে। সেখানে ১২টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে। দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল উঠবে সেমিফাইনালে। গ্রুপ এ থেকে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। তাদের কাছে হেরে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের। তাই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ পাচ্ছে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালের মর্যাদা।
সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমির লড়াইয়ে টিকে আছে বাংলাদেশ। হিমালয়ের দেশটিকে ১৪৮ বলের ব্যবধানে হারিয়ে নেট রান রেটও কিছুটা বাড়িয়েছে জুনিয়র টাইগাররা। সুপার সিক্স পর্বে নেট রান রেটে মাইনাস নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ এখন আছে প্লাসে। আজ বড় পরীক্ষায় নামার আগে এসবই হয়ে উঠতে পারে রাব্বিদের জন্য বড় প্রেরণা। সুপার সিক্স পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে এমন এক ব্যবধানে জয় পেতে হবে, যাতে পাকিস্তানের রান রেট নেমে আসে জুনিয়র টাইগারদের নিচে। তাহলেই মিলবে সেমির দুয়ার।
এমনিতেই বেনিনোর উইলমোর পার্কের এই মাঠটি রানপ্রসবা। বলে বাউন্স থাকে, ব্যাটে বল আসে, স্বচ্ছন্দে স্ট্রোক খেলতে পারেন ব্যাটাররা। মাঠটিতে প্রথম ইনিংসে সাধারণত রান তিনশ ছাড়ায়। তাই পাকিস্তান যদি আগে ব্যাট করে তবে বড় পরীক্ষা দিতে হবে জুনিয়র টাইগার বোলারদের। সর্বশেষ ম্যাচে নেপালকে ধসিয়ে দেন রহনত দৌলা বর্ষণ। এ ছাড়া আসরজুড়েই উজ্জীবিত বোলিং করছেন মারুফ মৃধা ও অধিনায়ক রাব্বিরা। তা ছাড়া সবশেষ পাঁচ দেখায়ও সুখকর অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। সবশেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হারা বাংলাদেশের যুবারা শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হেরেছেন। তবে মাহফুজুর রহমান রাব্বিদের কাছে বড় অনুপ্রেরণার হতে পারে এশিয়া কাপ। বিশ্বকাপের আগে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে দাপট দেখিয়েছেন জুনিয়র টাইগাররা। আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বনেছেন। যুব এশিয়া কাপে শুরু থেকে দুর্বার গতিতে এগোনো বাংলাদেশ শেষ চারে হারায় ভারতকে। এরপর শিরোপার মঞ্চে আরব আমিরাতের স্বপ্নযাত্রা থামান টাইগাররা। ওই আসরে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হয়নি যুবাদের। এবার তাদের সামনে রুদ্ধমূর্তি হয়ে আছে পাকিস্তান। কঠিন সমীকরণ জুনিয়র টাইগারদের সামনে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ দল এবারের লড়াইয়ে সমীকরণ মেলাতে পারলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। অন্যথায় আক্ষেপ নিয়েই ফিরতে হবে মাহফুজুর রহমান রাব্বিদের।