প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৯ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৮ পিএম
বড় জয়ে সেমির পথে আরেক পা বাড়িয়েছেন রাব্বি-জেমসরা ছবি : এক্স
জিতলে টিকে থাকবে আশা, হারলে গোটাতে হবে পাত্তাড়ি— নেপালের বিপক্ষে কঠিন এমন সমীকরণে বাজিমাত করেছে মাহফুজুর রহমান রাব্বির দল। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট এবং ১৪৮ বল হাতে রেখে জিতেছে বাংলাদেশ। নেপালের পাঠ চুকানো বাংলাদেশের সামনে বাধা হয়ে থাকছে পাকিস্তান। তাদের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি রানরেটেও এগিয়ে থাকতে হবে টাইগার যুবাদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার মানগাউং ওভালে বুধবার টস হেরে বোলিংয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন রহনত দৌলা বর্ষণ-শেখ পারভেজ জীবন। ব্যাটিংয়ে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে এশিয়ার দলটি। আসা-যাওয়ার দিনে বিশাল বিক্রমের ব্যাটে শতরান পার করলে ১৬৯ রানের বেশি জমা করতে পারেননি বাকি ব্যাটাররা। বড় ম্যাচে ছোট লক্ষ্যে তেমন ভুল করেননি টাইগার যুবারা। সুবাশ বান্দারির ফাইফারের দিনে আরিফুল ও জিসানের ফিফটিতে সহজেই লক্ষ্যে নোঙর ফেলে বাংলাদেশ।
নেপালের ছোট লক্ষ্যে বাংলাদেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে খেলেছে— উইকেট বাঁচানো, বল কম খেলা এবং রান রেট বাড়িয়ে নেওয়া। সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে মোটাদাগে সেটি করতে পেরেছে রাব্বিরা। প্রাথমিক পর্বের ভারতের বিপক্ষে হেরে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ রানরেটেও বেশ এগিয়েছে। মাইনাস ০.৬৬৭ থেকে টাইগার যুবারা এখন প্লাস পয়েন্টে আছেন (০.৩৪৮)। ছয় দলের গ্রুপ থেকে শেষ চারে উঠবে দুটি দল। সেখানে এখন অবধি ৩ ম্যাচের তিনটিতে জিতে শীর্ষে আছে ভারত। দুইয়ে সমান পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আরেকটি চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের যুবাদের বিপক্ষে। সেখানে তবে জিতলেই নয়, রানরেটের দিকেও নজর রাখতে হবে ২০২০ সালের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে।
সেমির লড়াই তথা আসরে টিকে থাকার মঞ্চে নেপালকে ব্লুফন্টেনে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন আগে বোলিং করে দেড়শ ছাড়িয়ে খুব বেশিদূর এগোতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। বোলিংয়ে দাপুটে শুরু এনে দিয়েছিলেন মারুফ মৃধা। সেই পথ দৈর্ঘে-প্রস্তে পরে বাড়িয়ে দেন রোহনাত দৌলা বর্ষণ ও শেখ পারভেজ জীবন। ১৯ রান খরচায় বর্ষনের চার উইকেটের বিপরীতে তিনটি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার জীবন। বাকি কাজ একটি করে উইকেট নিয়ে সেরেছেন জিসান-ইমন-মারুফরা।
নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারানো নেপালের বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনীর শুরু চতুর্থ ওভারে। মারুফের বলে বিপিন রাওয়াল ফেরেন ২ রান করে। এরপর ব্যর্থ হয়েছেন টপ অর্ডারের বাকি দুজন। অর্জুন কুমালের ব্যাটে আসে ১৬ রান, আকাশ ত্রিপাঠি করেন ৩। মাঝে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অধিনায়ক দেব ও বিশাল। ৩৫ রান করে দেবকে সাজঘরের পথ দেখান জিসান। নেপালকে ১৩৮ রানে রেখে ফেরে বিশাল। ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৮ রান আসে তার ব্যাটে। এরপর শেষ দিকে শুভাস বান্দারির ১৮ রানে দেড়শ ছাড়ায় নেপাল।
ছোট লক্ষ্যে দাপুটে শুরু করে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুর বল থেকেই মেরে খেলেন ওপেনার জিসান আলম। আশিকুর রহমান শিবলি যদিও খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ১৬ রানে শিবলি যখন ফেরেন তখন স্কোরবোর্ডে ৬৭ রান। দলীয় শতরানের মাঝে আরও দুই বাংলাদেশের ব্যাটারকে ফেরান সুবাশ বান্দারি। রিজওয়ানের ব্যাটে আসে ১৫ রান, জিসান ফেরেন ফিফটি হাঁকিয়ে। ৪৩ বলে মারকাটারি ইনিংসে জিসানের উইলোতে ছিল ছয় চার ও দুটি ছক্কার মার।
শতরান পার করা বাংলাদেশকে একপাশ আগলে এগোচ্ছিলেন আরিফুল ইসলাম। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফিফটি করে টিকে থাকলেও আরহার আমিন ও মোহাম্মদ শিহাব জেমস ব্যর্থ হয়েছেন। আগের তিন ব্যাটারের মতো এই দুজনকেও ফিরিয়েছেন নেপালের বোলার বান্দারি। ৮ ওভারে ৪৪ রান খরচায় ৫ উিইকেটের দেখাও পেয়েছেন বান্দারি। বাকিরা ছিলেন মলিন। মূলত আরিফুলের ৩৮ বলে ৫৯ রানের ইনিংসের কাছেই লড়াই জমাতে খাবি খায় নেপাল। শেষ পর্যন্ত পারভেজকে (৫) সঙ্গ করে দলকে জিতিয়েই পরে মাঠ ছাড়েন আরিফুল। ৩৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কার ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস খেলার দিনে সেরা হন অবশ্য যুবাদের পেসার বর্ষণ।
সুপার সিক্স মিশনে অনেক জটিল সমীকরণে শুরুটা বড় জয়ে হলেও এখনও বাংলাদেশকে মেলাতে হবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। শেষ চারে যাওয়ার জন্য বাকি থাকা পাকিস্তানকে হারালেই চলবে না। অনেক ‘যদি-কিন্তু’র হিসাবও থাকতে হবে পক্ষে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে রানরেটও। তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান এখন টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে, রানরেটও একের অধিক। সেমির মঞ্চ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে রাব্বি-জেমসদের সামনে অপেক্ষায় আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেপাল- ১৬৯/১০ (৪৯.৫ ওভার) (দেব ৩৫, বিশাল ৪৮, বর্ষণ ১৯/৪, জীবন ৩৪/৩)
বাংলাদেশ- ১৭০/৫ (২৫.২ ওভার) (জিসান ৫৫, আরিফুল ৫৯, সুবাস বান্দারি ৪৪/৫)
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: রহনাত দৌলা বর্ষণ (৪/১৯)