হেলাল নিরব
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৬ পিএম
প্রভাত দিবসের পূর্বাভাস, এই প্রবাদটির কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এবারের বিপিএল। চলতি আসরে হয়েছে মোটে আট ম্যাচ। শেষ হয়েছে ঢাকার প্রাথমিক পর্ব। তবে এতটুকুতেই জমে উঠেছে দেশি-বিদেশি লড়াই। মারকাটারি বিপিএলে রান নেই কেন, সাকিব আল হাসান খেলতে পারবেন তো, আনফিট মাশরাফি বিন মর্তুজার খেলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এর সঙ্গে যোগ হয় বিদেশিরা আসছেন কবে কিংবা আসরে থাকছেন কতদিন? চার দিনের খেলায় মিলছে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর।
জানুয়ারির ১৯ তারিখ পর্দা ওঠা বিপিএলে এখন পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তিনটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেনি। পয়েন্ট টেবিলে সেখানেই এগিয়ে আছেন দেশি খেলোয়াড়রা। ব্যাটিং কিংবা বোলিং— দুই বিভাগের সেরা পাঁচে দেশি খেলোয়াড়দের আধিপত্য। সেরা দশেও আছেন হাতেগোনা দুয়েকজন। যদিও বলার মতো বিদেশি খেলোয়াড় আনতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। তবুও আট ম্যাচের তিনটিতেই ম্যাচের সেরা হয়েছেন বিদেশিরা। বাকি পাঁচজন দেশি। ম্যাচ জমিয়ে দিতে এসব খেলোয়াড়ের ইমপ্যাক্ট থাকছে দীর্ঘ আলোচনায়।
দিনে রান কম, রাতে জমছে রোমাঞ্চ— এমন সমীকরণে শেষ হওয়া ঢাকা পর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন শরিফুল ইসলাম। দুর্দান্ত ঢাকার তারকা পেসার আসরের প্রথম দিনেই গড়েছেন হ্যাটট্রিক। রোমাঞ্চ চড়ানো ম্যাচে কুমিল্লাকে বেশিদূর যেতেও দেননি। এরপর আরও একটি ম্যাচ খেলেছেন শরিফুল, রেখেছেন দলের পক্ষে ইমপ্যাক্ট। ১৩.৪০ গড়ে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন একবার। বোলিংয়ে শরিফুলের মতো দাপট দেখিয়েছেন দেশি আরও দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও খালেদ আহমেদ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তারকা ফিজ দুই ম্যাচে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। তবে দলের জন্য বড় কাজটা করেছেন খালেদ। গতি, আগ্রাসন আর দুর্দান্ত লাইন-লেন্থে ফরচুন বরিশালের তারকা পরাস্ত করেছেন প্রতিপক্ষকে। ৩ ম্যাচে ২১ গড়ে তিনিও নিয়েছেন ৫ উইকেট। বিপিএল শুরুর দ্বিতীয় দিনে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে কুপোকাত হয়েছিল রংপুর রাইডার্স। সাকিবদের নাকানিচুবানি খাওয়ানোর দিনে ৩১ রানে খালেদ নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে আসরের চতুর্থ ম্যাচে দাপট দেখিয়েছিলেন নাহিদুল ইসলাম। বন্দরনগরীর দলটিকে গুঁড়িয়ে দিতে বল হাতে ঘূর্ণি জাদু তুলেছিলেন নাহিদ। ১২ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৪ উইকেট, হয়েছিলেন ম্যাচসেরাও। ব্যাটিংয়ে আলোচনায় এনামুল হক বিজয়, খুলনা টাইগার্সের অধিনায়কের ব্যাটে চড়েই বরিশাল বধ করেছিল টাইগার্সরা। ৪৪ বলে ৬৩ রানের অপরাজিত ইনিংস মিরপুরে উপভোগ্য করে তুলেছিলেন এনামুল। ৩ ম্যাচে এখন অবধি ১৫৬ রান করা মুশফিকও কম যাননি। ৭৮ গড়ে ব্যাটিং করছেন বরিশালের তারকা। চট্টগ্রামের তানজিদ হাসানও বিপিএল জমাতে বেশ ভূমিকা রেখেছেন। দুর্দান্ত ঢাকাকে হারাতে ব্যাটিংয়ে ৪৯ রানের পাশাপাশি নিয়েছিলেন দুটি ক্যাচ। ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তাতে। বিদেশি সংকটে থাকা আসরে মোটাদাগে হিসাব কষলে কম রানের ম্যাচেই বেশি হয়েছে। দেড়শ না ছাড়ানো ম্যাচগুলোতে তাই দেশি বোলারদের আধিপত্যই বেশি ছিল।
ঢাকায় পা রাখার পরের দিনেই খেলতে নামেন বাবর আজম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালাখ্যাত তারকা মানও রেখেছেন। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দাপটও দেখিয়েছেন। মাশরাফিদের বিপক্ষে সেদিনের লো স্কোরিং ম্যাচে নায়ক ছিলেন দুজনÑ আজমতউল্লাহ ওমরজাই এবং বাবর আজম। দুজনের ব্যাটে চড়েই আসে ৪ উইকেট হাতে রাখা জয়। একদিন আগে লম্বা ফ্লাইট করে আসা বাবর সেদিন ব্যাট করেন প্রায় দেড় ঘণ্টা। ৪৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস সাজান ৬ চারে। রাইডার্সদের পেসার হাসান মাহমুদ থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের মুখেও ঝরে বাবর-স্তুতি। সেই ম্যাচের সেরা হন অবশ্য অন্য এক বিদেশি, আফগানিস্তানের ওমরজাই। ৩৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংসেই মূলত ম্যাচটি রাইডার্সদের পক্ষে আসে।
ঠিক একই দিন রাতের খেলায় দাপট দেখান আরও দুই বিদেশি। মঙ্গলবার রাতে তামিমদের বরিশালের বিপক্ষে তাণ্ডব চালান ম্যাথু ফোর্ড। ৫ বলে ১৩ রানের সমীকরণ খালেদের ওপর মেটান ক্যারিবিয়ান তারকা। ফোর্ড সেদিন ৪ বলে একটি করে চার-ছক্কায় মাতিয়ে দেন বিপিএল। রোমাঞ্চ চড়ানো ম্যাচে এক বল হাতে রেখে জেতে কুমিল্লা। অপরাজিত ১৩ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে ৩৩ রানে ২ উইকেট ফোর্ডকে ম্যাচের সেরা বানায়। ওই ম্যাচেই স্পিন ভেলকি দেখান দিমুথ ওয়াল্লেগে। লঙ্কান স্পিনার ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ফেরান মোহাম্মদ রিজওয়ান, তাওহিদ হৃদয় ও রোস্টন চেজকে। আসরের শুরুর দিনে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান নাজিবুল্লাহ জাদরান। ৩০ বলে ৬১ রান করে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে হন ম্যাচের সেরা। তার স্বদেশি ওমরজাইও দেখাচ্ছেন তাণ্ডব।
বিপিএল দ্বিতীয়বারের মতো কনকাশন সাব হয়ে আসা লাথিস ক্রসপোলেকে নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। ঢাকার বিপক্ষে দানুশকা গুনাথিলাকা চোটে পড়লে চট্টগ্রামের হয়ে নামেন ক্রসপোলে। তানজিমদের ম্যাচে দেখান দাপট, ৩১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় আনে ৪৬ রান। মাতিয়ে দেন মিরপুর। দেশি-বিদেশিদের এমন ইনিংস বা ম্যাচের সেরা হওয়ার মতো পারফর্ম বাড়লে আরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, স্কিলফুল খেলোয়াড়ের কিছুটা সংকট থাকলেও কমতি হবে না আকর্ষণের।