× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে তুলে ধরার কারিগর কারদারের জন্মদিন আজ

রুবেল রেহান

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪ পিএম

আবদুল কারদার এমন একজন যিনি বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে প্রথমবার সাক্ষাৎ করিয়েছেন। ছবি : সংগৃহীত

আবদুল কারদার এমন একজন যিনি বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে প্রথমবার সাক্ষাৎ করিয়েছেন। ছবি : সংগৃহীত

ইতিহাসে মাত্র তিনজন ক্রিকেটার আছেন যারা টেস্ট পর্যায়ে ভারত এবং পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন। গুল মোহাম্মদ ও আমির ইলাহির পর তৃতীয়জন হলেন পাকিস্তানে দ্য গ্রেট’খ্যাত আবদুল হাফিজ কারদার। ৯৯ বছর আগে এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। 

পাকিস্তান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হানিফ মোহাম্মদ, জাভেদ মিয়াদাদ, ইমরান খান, জহির আব্বাস, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল-হক ও ইউনিস খানরা বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন। বিগত ৭১ বছরে দেশটির এইসব ক্রিকেটাররা গর্বভরে দাবি করতে পারেন তাদের ভূমিকা সত্যিই অনস্বিকার্য ছিল। তবে আবদুল কারদার এমন একজন যিনি বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে প্রথমবার সাক্ষাৎ করিয়েছেন। দেশটিতে তিনিই প্রথম ক্রিকেট বিপ্লব শুরু করেছিলেন। যে কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের গল্পে তিনি সবসময় অমর হয়ে থাকবেন। পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক তিনি। দেশের ক্রিকেটে তার এতটাই প্রভাব ছিল যে এত বছর পরেও তাকে শ্রদ্ধাভরে পাকিস্তানের স্মরণ করা হয় এবং তাকে দেশটির ক্রিকেটের জনক আখ্যায়িত করা হয়।

লাহোরে (পাঞ্জাব) জন্মগ্রহণ করেন কারদার। বাঁহাতি ব্যাটার, যিনি অর্থোডক্স স্পিন বোলিংও করতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় ভারতের হয়ে। ১৯৪৬ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরের ২১ বছর বয়সে ইফতিখার আলি খান পতৌদির নেতৃত্বে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সেই সিরিজে তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন কারদার। মজার ব্যাপার হচ্ছে অভিষেক টেস্ট সিরিজই ভারতের হয়ে তার শেষ সিরিজ হয়ে আছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান।

তবে পাকিস্তানে গিয়ে তাকে ফের টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে নামতে প্রায় ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়। এরপর অভিষেকের পর কিংবদন্তিতে পরিণত হতে বেশিদিন লাগেনি। পাকিস্তান জাতীয় দলে ঢুকেই অধিনায়কত্ব পান তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে দেশটির প্রথম অধিনায়ক তিনিই। এরপর দেশকে প্রথম টেস্ট জয় পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করাননি কারদার। ১৯৫২ সালে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ইনিংস পরাজয়ের সম্মুখীন হয় পাকিস্তান। তবে দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ায় কারদারের পাকিস্তান। ইনিংস পরাজয়ের শোধ ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েই নেয় দলটি। ইনিংস ও ৪৩ রানে পরাজিত করার ম্যাচের নায়ক ছিলেন পেসার ফজল মাহমুদ। ওই টেস্টে ১২ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে বুলডোজার চালান ফজল। 

যদিও সেই সফরে সিরিজ হারে পাকিস্তান। তার চেয়ে বড় কথা পরের আঠারো মাস তাদের জন্য ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। কেউ কেউ অবশ্য এটিকে বলে থাকেন- পাকিস্তান ক্রিকেটে ঝড় ওঠার আগে সেটি ছিল শান্ত সময়। ১৭ আগস্ট, ১৯৫৪ সালে ওভালে ১৮ মাস পর প্রথম জয় পায় পাকিস্তান। ওই সময় পর্যন্ত সেই জয়টি ছিল তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়।

সেবার চার ম্যাচের সিরিজে লেন হাটন, পিটার মে, ডেনিস কম্পটন এবং ফ্রাঙ্ক টাইসনের মতো শক্তিশালী ইংলিশ দলের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শেষ খেলায় মুখোমুখি হয় কারদারের পাকিস্তান। তাদের সামনে সুযোগ সিরিজ ড্রয়ের।

সিরিজের প্রথম টেস্টে নটিংহ্যামে ইনিংস এবং ১২৯ রানে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তান। অবিরাম বৃষ্টির কারণে লর্ডস এবং ম্যানচেস্টার উভয় ম্যাচেই ড্র করতে পেরেছিল পাকিস্তান। তবে সেই সিরিজের শেষ ম্যাচে ২৪ রানের জয় তুলে নিয়ে সিরিজ লেভেল করে সফরকারী দলটি। প্রথম ইনিংসে ৩ রানে পিছিয়ে থাকার পর চতুর্থ ইনিংসে হাটনের ইংল্যান্ডের সামনে ১৬৮ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় কারদারের দল। কিন্তু তারকাখচিত ইংলিশদের ব্যাটিং লাইন আপ শেষ দিনে ফজলের বোলিং তাণ্ডবের সামনে পড়ে। যিনি ওই ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন। তাতেই মাত্র চতুর্থ প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ড জয় করে ইতিহাস তৈরি করেছিল কারদারের পাকিস্তান। সেই সময় সেটি ছিল দুর্দান্ত অর্জন। কারণ এটি অর্জন করতে উইন্ডিজের ২২ বছর, দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮, ভারতীয়দের ৩৯ এবং নিউজিল্যান্ডের ৫৫ বছর লেগেছিল।

ঐতিহাসিক ওই জয়ের মাধ্যমেই উত্থান হয় পাকিস্তানের। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তার অর্জন শুধু ইংল্যান্ডে জয়ের মাধ্যমেই শেষ হয়নি। পরের চার বছরে, নিউজিল্যান্ডকে দুইবার এবং করাচিতে একমাত্র টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় পাকিস্তান। 

এরপর রোহান কানহাই, স্যার গ্যারি সোবার্স, স্যার এভারটন উইকস, ক্লাইড ওয়ালকট, ল্যান্স গিবস এবং রয় গিলক্রিস্টদের নিয়ে গঠিত দলের বিপক্ষে পোর্ট অফ স্পেনে উইন্ডিজকে টেস্ট হারায় কারদারের পাকিস্তান। পোর্ট অফ স্পেনের বিজয় একটি অধ্যায়েরও সমাপ্তি হয় পাকিস্তান ক্রিকেটে। ওই টেস্টেই তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ হয়ে আছে।

পাকিস্তানের হয়ে ২৩টি টেস্ট খেলেছেন কারদার। সবগুলোতেই অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে প্রতিটি দেশের বিপক্ষেই টেস্ট জিতেছে পাকিস্তান। অবশ্য প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলাই হয়নি কারদারের পাকিস্তানের।

ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার আগে টেস্ট ৩৩ দশমিক ৭৬ ব্যাটিং গড়ে ৯২৭ রান করেন কারদার। বল হাতে ২১ উইকেট নিয়েছিলেন ৪৫ দশকি ৪২ গড়ে। অলরাউন্ডার হিসেবে মাঠে তিনি যা অর্জন করেছিলেন সেটা আহামরি কিছু নয়। কিন্তু আজ অবধি, তার অবসর গ্রহণের ৬৫ বছর পরেও পাকিস্তান ক্রিকেটকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরার জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারদারকে।

কারাদারের সঙ্গে যারা খেলেছিলেন তাদেরকে যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে করা হয়। এটা তারা নিজেরাও বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছেন। তাদের চোখে কারদার একজন কঠোর শৃঙ্খলাবাদী ছিলেন। তিনি যে একটি তরুণ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সেই সঙ্গে তিনি যে নির্ভীকতা এবং আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন সেটি ছিল সত্যি অবিশ্বাস্য। 

কারদার ১৯৫৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেন। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে তার গল্পটা সেখানেই শেষ হয়নি। কারণ তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

কারদারই ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো মুশতাক মোহাম্মদকে জাতীয় দলের অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। মোশতাকের অধীনে পাকিস্তান মোট আটটি টেস্টে জয়লাভ করে। কারদার ১৯৯৬ সালে ৭১ বছর বয়সে মারা যান। গত বছর পিসিবির ‘হল অব ফেম’-এ তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা