প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০৮ পিএম
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১০ পিএম
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (১৯৪৫-২০২৪)
ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা, ব্যতিক্রমী ফুটবল ব্যক্তিত্ব- সদ্য প্রয়াত ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার প্রসঙ্গে কথাগুলো জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, কোচ ও খ্যাতনামা ফুটবল বিশেষজ্ঞ গোলাম সারোয়ার টিপুর। জার্মান ফুটবলের সম্রাট ‘কাইজার’ বেকেনবাওয়ারকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্যও হয়েছিল সাবেক এই বাংলাদেশ কোচের।
ইতিহাসে পেলে-ম্যারাডোনার পাশাপাশি বেকেনবাওয়ারের নাম কি উচ্চারিত হবে, এই প্রসঙ্গে টিপুর জবাব- উচ্চারিত হবে কি, পেলে-ম্যারাডোনার পাশাপাশিই তো তার নাম আছে। জার্মান ‘কাইজার’কে নিয়ে একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামও। পেলে-ম্যারাডোনার সমান্তরালেই থাকবেন বেকেনবাওয়ার- এই মত সাবেক এই গোলমেশিনের।
গ্রেট ফুটবলার, আধুনিক ফুটবলের পথিকৃৎ, বেকেনবাওয়ারের প্রসঙ্গে মূল্যায়ন আসলামের। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখেছেন বলে জানান বাংলাদেশ ফুটবলের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। ১৯৭৪-এর বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে আসলাম জানান, আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। তখনও কলেজে উঠিনি। এর দুই বছর পর আমি ঢাকার ফুটবলে খেলতে আসি। ওই ফাইনালের কথা আমার মনে আছে। প্রথমে গোল করেছিল নেদারল্যান্ডস। ওই দলে ছিলেন ইয়োহান ক্রুয়েফ। মনে রাখতে হবে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রুয়েফ। তাকে অকেজো করে রেখেছিলেন বেকেনবাওয়ার। পিছিয়ে পড়ার পর জার্মানরা যে খেলাটা করেছিল তার কোনো তুলনা হয় না। আর নেতার ভূমিকায় ছিলেন বেকেনবাওয়ার।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল বিটিভি সরাসরি সম্প্রচার করেছিল, নাকি রেকর্ডেড সম্প্রচার হয়েছিল, কথা উঠল সেই প্রসঙ্গ নিয়েও। এ নিয়ে গোলাম সারোয়ারের ভাষ্য- আমার যতদূর মনে পড়ছে বিটিভিতে সরাসরি ফাইনাল দেখেছিলাম। তবে ১৯৬৬-এর ফাইনাল রেকর্ডেড দেখেছিলাম। সম্ভবত দুয়েক দিন পর। ১৯৭৪ সালে টিপু তখন ২৭ বছরের টগবগে যুবক। ১৯৬৬-এ দেখেছেন ইংল্যান্ড-জার্মানির ফাইনাল। ওই ম্যাচে জার্মান ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন বেকেনবাওয়ার। টিপুর কথায়, ওই ম্যাচে কাঁধে ব্যথা নিয়ে খেলেছিলেন কাইজার।
কেন বেকেনবাওয়ার বাকিদের চেয়ে স্বতন্ত্র তার ব্যাখ্যাও দেন বাংলাদেশ ফুটবলের প্রথিতযশা এই বিশ্লেষক, অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনজন। বাকি দুজন জাগালো ও দেশম। এ দুজনও কিংবদন্তি। তবে এরা কিন্তু কেউই ফুটবল ম্যানেজমেন্টে মানে প্রশাসনে আসেননি। বায়ার্ন মিউনিখের সর্বোচ্চ পদে দীর্ঘদিন ছিলেন বেকেনবাওয়ার। ২০০৬ বিশ্বকাপের আয়োজক হয় জার্মানি। এখানেও খুব বড় ভূমিকা ছিল তার।
খেলার মাঠে বেকেনবাওয়ারের মতো নেতা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। গোলাম সারোয়ারের ভাষায়, বেকেনবাওয়ার একজন কমপ্লিট ফুটবলার। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। ১৯৬৬-এর বিশ্বকাপে খেলেন মিডফিল্ডে। এরপর ক্যারিয়ার শেষ করেন ডিফেন্ডার হিসেবে। ভাবা যায়! খেলার মাঠে বেকেনবাওয়ার যে স্বাধীনতা নিয়ে খেলতেন সেটা চিন্তাও করা যায় না বলে জানান টিপু। বলেন, নিচ থেকে ওপরে উঠছেন। আক্রমণে সহায়তা করছেন। কোচ তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। লিবেরো (সুইপার ব্যাক) পজিশনটা তো তার ব্র্যান্ড। এই পজিশনটাই তার নিজের তৈরি।
নিজেই একটা ব্র্যান্ড উল্লেখ করে আসলাম বলেন, এই যে মেসি-রোনালদোরা যেভাবে গোল করতে পারেন, বেকেনবাওয়ার মানের কেউ থাকলে সেটা কঠিন হতো। ফুটবলে লিবেরো সিস্টেম তার আবিষ্কার। এটা আধুনিক ফুটবলের শর্ত হয়ে গেছে। জার্মান ফুটবল এত উন্নত হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বেকেনবাওয়ারের, মনে করেন আসলাম। তার ভাষায়, বায়ার্ন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। আর এটা সম্ভব হয়েছে বেকেনবাওয়ারের কারণে। যোগ করেন, জার্মান ফুটবলের সঙ্গে বেকেনবাওয়ারের সংশ্লিষ্টতা কমে যাওয়ার পর থেকে দেশটির ফুটবলে কিন্তু আগের সেই ধার নেই। ফুটবলে এত বড় সংগঠক আর হয় না!
কোচ, অধিনায়ক ও সংগঠক- এই তিনটা জায়গাতে একজন ব্যক্তি শতভাগ সফল, এত বড় ফুটবল ব্যক্তিত্ব আর হয় না, জানান গোলাম সারোয়ার। তার কথায়, আসলে পেলে, বেকেনবাওয়ার, ম্যারাডোনাদের নিয়ে আমাদের কথা বলাটা মানায় না। তারপরও প্রসঙ্গ এলে আমাদের কথা বলতে হয়। তাকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। কোচিংয়ের কোর্স করার সময় ১৯৯৬ সালে জার্মান গিয়েছিলাম। ডুইসবার্গের একটা একাডেমিতে আমরা নিমন্ত্রিত ছিলাম। ওখানে এসেছিলেন বেকেনবাওয়ার। বেশিক্ষণ ছিলেন না। কোনো কথাবার্তাও আমাদের সঙ্গে হয়নি। কোচিং করানোর জন্য, বেকেনবাওয়ারের অনেক ভিডিও ক্লিপিংস দেখেছি। ফিটনেস, পায়ের সূক্ষ্ম কাজ, নেতৃত্ব- এক ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা ছিলেন বেকেনবাওয়ার।