প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০৮ পিএম
৫ ফুট ৫ ইঞ্চির ছোটখাটো একজন দানব ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার— সংগৃহীত ছবি
সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিন মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন জশ হ্যাজলউড। চতুর্থ দিনে সেই মঞ্চের নায়ক হয়ে আবর্তন করেন ডেভিড ওয়ার্নার। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) নিয়মেও শনিবার আসে শিথিলতা। ঘরের ছেলের বিদায় উপলক্ষে মাঠে নামার সেই সুযোগ দুই হাত ভরে সেটি নেন দর্শকরা। কেউ কাঁদলেন, কেউ হাসলেন, কারও কণ্ঠে ততক্ষণে নিস্তব্ধতা। টেস্টের আঙিনা থেকে সাদা পোশাকের সংস্করণেরই অন্যতম সেরা এক খেলোয়াড়ের বিদায়টা একটু তো কষ্টের হবেই। ওয়ার্নারও শেষবেলায় আর পারেননি। মাঠেই এতশত কাণ্ড করে বসা ওয়ার্নার কেঁদেছেন, বুক ঢুকরে ওঠা সেই কান্নার রেশ থেকে বাঁচতে মুখও ঢেকেছেন।
পাকিস্তানকে ঘরের মাটিতে আরেকটি হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেওয়ার দিনে ওয়ার্নার ছিলেন পুরোনো স্টাইলে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের ইনিংসে ফিফটি হাঁকিয়ে যেন জানানও দিলেন, ‘ফুরিয়ে যাইনি।’ কিন্তু অতশত বিতর্কে গেলেন না ওয়ার্নার। নিজেকে বিনোদনের মানুষ হিসেবে হলেও মনে রাখতে বললেন। অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক এবং দেশের অন্যতম ওপেনারকে ক্রিকেট দিয়েই মনে রাখবে মানুষ। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির ছোটখাটো একজন দানব ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার। যিনি প্রতিপক্ষের বোলারকে তুলাধুনা করে মনোবলে ধস নামিয়ে দিলেন।
সিডনিতে ৮ উইকেটে জয় পাওয়ার দিনে ওয়ার্নার ফেরেন দলীয় শতরানের পর। ৫৭ রানের ইনিংস থামে সাজিদ খানের বলে। বর্ণিল টেস্ট অধ্যায়ের ইতি টেনে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন হেলমেটে আলতো করে চুমু এঁকে দিলেন ওয়ার্নার। পুরো সিডনির গ্যালারি তখন হাততালিতে অভিবাদন জানাচ্ছিল। ওয়ার্নার হাতের গ্লাভস আর মাথার হেলমেট ছুড়ে দিলেন এক কিশোরের দিকে। বিদায়িজনের বড় উপহার পেয়ে সে কি ছুট সেই কিশোরের!
ওয়ার্নার শেষবেলায় তাদের কথাও বললেন, ‘যাত্রাটা রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী। যেভাবে খেলেছি, তাতে লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি বলে বিশ্বাস করি। আশা করি তরুণরাও আমাকে অনুসরণ করবে। সাদা বল থেকে টেস্ট ক্রিকেট— এটাই আমাদের খেলার শীর্ষবিন্দু। তাই কঠোর পরিশ্রম করো এবং লাল বলের ক্রিকেট খেলো। কারণ, এটাও মজার।’
ক্রিকেটটা মজা করেই খেলেছেন ওয়ার্নার। ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করা ব্যাটার যখন হাস্যরসের জোগান দিতেন তখন বেরসিকও যেন না হেসে থাকতে পারতেন না। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া অভিযাত্রা গতকাল সিডনিতে সমাপ্তি টেনে দিলেন। ১১২ ম্যাচে ২০৫ ইনিংসে ৪৪.৫৯ গড়ে ৮৭৮৬ রান। ২৬ শতক ও ৩৭টি অর্ধশতক। ওয়ার্নার তো সেরা হয়েই থামতে যাচ্ছেন। টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনা থেকে সরে দাঁড়ানোর মঞ্চে কত উপহারই না পেলেন। সফরকারী পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা তাকে বাবর আজমের জার্সিতে স্বাক্ষর করে দিলেন, ফুল পেলেন। কিন্তু বিদায়বেলায়ও ভুললেন না পরিবারের কথা। সিডনিতে শেষ করতে যাওয়া ওয়ার্নারের কত আকুতি ছিল। সেই কথা রেখেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। কথা রাখেন ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষকে ‘ওয়ার্ন’ করা ওয়ার্নার। সিডনি গ্রাউন্ডের সবুজ ঘাসের মাঝে গতকাল সাদা অক্ষরগুলোও যেন একটু বেশিই স্পষ্ট লাগছিল, ‘থ্যাংকস ডেভ’।