প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৩ পিএম
বিতর্ক আর শেন ওয়ার্ন যেখানে মিলেমিশে একাকার। সেটা মাঠে হোক কিংবা মাঠের বাইরে। বেঁচে থাকতে বিতর্ক ছাড়া ছিলেন না কিংবদন্তি লেগস্পিনার। মনে করা যাক ২০১৩ সালের কথা। সেবার অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ওভাল টেস্টে ধারাভাষ্য দিতে প্যানেলে ছিলেন ওয়ার্ন। আড্ডার ছলেই এক পর্যায়ে বলেছিলেন যে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ঐতিহ্যবাহী ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরতে বাধ্য করতেন সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। এটি যে তার কাছে ‘হাস্যকর’ এবং ‘ফালতু’ ব্যাপার মনে হতো, সেটি বলতেও গোপন করেননি ওয়ার্ন।
আলোচনার সূত্রপাত হয় ওই টেস্টের তৃতীয় দিন। ব্যাগি গ্রিনের বদলে সাদা ফ্লপি হ্যাট পড়ে থাকা মাইকেল ক্লার্ক ও পিটার সিডল ধরা পড়েন টেলিভিশন ক্যামেরায়। সেটি নিয়েই আলোচনার শুরু। বলা ভালো ওই টেস্টেই অলরাউন্ডার জেমস ফকনারের অভিষেকে তাকে ব্যাগি গ্রিন পড়িয়ে দিয়েছিলেন ওয়ার্ন। ধারাভাষ্যে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে ওয়ার্ন সেদিন বলেছিলেন, ‘আমাদের সময় ওয়াহ (স্টিভ) একটা হাস্যকর নিয়ম চালু করেছিল। টেস্টের প্রথম এক ঘন্টা সবাইকে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরতে হতো।’
নিয়মটা পছন্দ হয়নি বলে ওয়ার্ন আপত্তি করে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলাটা যে গর্বের সেটা বোঝানোর জন্য ব্যাগি গ্রিন ক্যাপই পরতে হবে, এমন তো কথা নেই। কিন্তু ওয়াহ কানে নেননি সে আপত্তি। এমনকি সাবেক অস্ট্রেলিয়ান টেনিস তারকা প্যাট্রিক র্যাফটার উইম্বলডনের ফাইনালে ওঠার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা যখন তার খেলা দেখতে যাবেন বলে ঠিক করলেন, ওয়াহ নিয়ম করে দিলেন সবাইকে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পড়ে যেতে হবে। ওয়ার্নের কাছে সেটা ‘ফালতু’ ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল। তার বলা এই কথাগুলোর জন্য সেই সময়ে টুইটারে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ওয়ার্ন। যদিও সেসবে কখনও পাত্তা দেননি এই কিংবদন্তি। তবে যেই ব্যাগি গ্রিনকে নিয়ে এত সমালোচনার সামনে পড়েছিলেন, যেটাকে এত তুচ্ছ এবং হাস্যকর ও ফালতু বলেছিলেন সেটিই ২০২২ সালে পরলোক গমনের আগে নিলামে প্রায় এক মিলিয়নেরও (৬৭৬০০০ মার্কিন ডলার) বেশি অস্ট্রেলিয়ান ডলারে বিক্রি করেছিলেন ওয়ার্ন।
ওয়ার্নের সেই মন্তব্যের প্রায় এক দশক পর আবার ব্যাগি গ্রিনকাণ্ড সামনে আসে অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের সুবাদে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সিডনি টেস্ট খেলে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগেই দুই টেস্ট জিতে সিডনিতে পা রাখে অস্ট্রেলিয়া। এখানেই বিপত্তি ঘটে। হোটেল থেকে নিজের প্রিয় ব্যাগি গ্রিন হারিয়ে ফেলেন ওয়ার্নার। বিদায়ী টেস্টে নিজের প্রেমিকাসমান ব্যাগি গ্রিনকে হারিয়ে বেজায় ক্ষেপেছিলেন এই ওপেনার। তাতে কোনো লাভ না দেখে মিনতি করেই ক্যাপটি ফেরত চেয়েছিলেন তিনি।
ওয়ার্নারের ব্যাগি গ্রিন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার বাবা বলেছিলেন, যে বা যারা ওর ব্যাগি গ্রিন নিয়ে থাকেন সেটা যেন এই টেস্ট চলাকালীন ফিরিয়ে দেয়। অন্তত রাস্তায় ফেলে দিলেও চলবে, সেটা মানুষ কুড়িয়ে ওকে অবশ্যই ফেরত দেবে। এটা নিয়ে আলোচনা এতটাই ছড়িয়েছিল যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ব্যাগি গ্রিন ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতকিছুর পর অবশেষে সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিন শুরুর আগে ক্যাপটি হোটেলেই পেয়ে যান ওয়ার্নার। তবে ক্যাপটি কীভাবে সেখানে আসলো বা কে বা কারা রেখে গেল সেটি জানা যায়নি।
সেটি জানতেও চাননি ওয়ার্নার। তিন বরং তার প্রিয় ব্যাগি গ্রিন ফিরে পেয়ে দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত হন, ‘আমি খুবই সন্তুষ্ট এবং স্বস্তি পাচ্ছি যে, আমার ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটা ফিরে পাওয়া গেছে, যা দারুণ খবর। প্রতিটি ক্রিকেটারই জানেন, তার ক্যাপ কতটা স্পেশাল এবং এটি আমি জীবনের বাকি সময় হৃদয়ে লালন করব। এটা খুঁজে পেতে সহায়তা করা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ এবং সত্যিই আমি খুবই কৃতজ্ঞ।’