হেলাল নিরব
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২১ পিএম
রিশাদকে ঘিরে আশা দেখছে বাংলাদেশ —ছবি : আ.ই.আলীম
‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’- বাংলায় শব্দ তিনটির অর্থ ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ খ্রিস্টপূর্ব ’৪৭ সালের বাক্যটি যদি বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের সঙ্গে মেলানো হয় তাহলে অনেকটা এমন হবেÑ ‘এলাম, খেললাম, হারিয়ে গেলাম।’ কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক শোনালেও এটাই যেন বাস্তবতা। লাল-সবুজের জার্সিতে কোনো লেগ স্পিনার দলে এলে পাল্টা প্রশ্নও তাই ওঠে, ‘কতদিন টিকে থাকবেন?’
সেই টিকে থাকার জিজ্ঞাসা রিশাদ হোসেনের দিকেও। ২১ বর্ষী লেগ স্পিনারের আগে বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রেও উঠেছিল একই প্রশ্ন। অলক কাপালির অকালে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চলছে লেগ স্পিনার খোঁজার কাজ। ২০১৫ সালে আশার আলো হয়ে আসা জুবায়ের হোসেন লিখন টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন মোটে এক ম্যাচ। দাপুটে শুরু করা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব যেন বিপ্লব ঘটানোর আগেই হারিয়ে গেলেন। জুবায়ের হোসেন, তানভির হায়দার, আমিনুল ইসলামদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই স্বপ্ন অঙ্কুরোদগম হওয়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকজন লেগি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার। এমন একটা সময়ে রিশাদের যাত্রাটা কতদূর?
কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন, রিশাদের আরও কাজ করা দরকার। টিকে থাকতে বাকিদের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি, ‘ওকে নিয়ে এখন পর্যন্ত আশা দেখা যায়। কিন্তু পুরোটা নির্ভর করবে রিশাদের ওপর এবং রিশাদকে যারা গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে তাদের ওপর। পারফর্ম করার পুরো দায়িত্ব তো আর ওর একার নয়। তার আশপাশে যারা আছে তাদেরও একটা রোল প্লে করতে হবে। একজন লেগ স্পিনারের পাশে কোচ, অধিনায়ক এবং খেলোয়াড়দের সবার থাকা দরকার। বিশেষ করে যারা নতুন, তরুণ খেলোয়াড় তাদের পাশে থাকতে হবে। যেন সে সাহসটা পায় সব সময়।’
বিশেষজ্ঞ একজন লেগ স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশের হাহাকার বেশ পুরোনো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত এক দশকে বিজ্ঞাপনের মতো সেঁটে আছে একটা কথা, ‘আমরা একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি।’ লেগ স্পিনার নেই, লেগ স্পিনার চাইÑ স্লোগানের মতো হয়ে যাওয়া সময়ে ধূমকেতুর মতো এসেছিলেন কয়েকজন। কোনো সংস্করণেই কবজির মোচড়ে বল ঘোরানোর মতো স্পিনাররা থিতু হতে পারেননি। নিরন্তর সেই অনুসন্ধানে আপাতত আশা হয়ে জ্বলছেন রিশাদ।
চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া রিশাদকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপের বছরে আস্থার মানও ইতোমধ্যে রাখতে শুরু করেছেন রিশাদ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ছিলেন আলোচনার টেবিলে। প্রথম ম্যাচে ২৪ রানে ১ উইকেট পাওয়ার পর বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দাপট দেখিয়েছিলেন রিশাদ। কিউই ব্যাটারদের বেঁধে রাখতে ৩ ওভার বল করে খরচ করেছিলেন মোটে ১০ রান। রিশাদের পারফরম্যান্সে বেশ খুশি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে দলের অধিনায়ক হয়ে নির্বাচকরা। বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার আশা রাখার পক্ষেই বলেছিলেন, ‘পরের ম্যাচে যদি রিশাদ ভালো নাও করে, তাও কিন্তু হতাশ হব না। আমার মনে হয়, সবাই যদি রিশাদের প্রতি এই ধৈর্যটা দেখাতে পারি, তাহলে কিন্তু রিশাদ ভালো করতে পারবে।’
রিশাদ নিজেও বলেছেন, তার ওপর আস্থা রাখলে তার দাম দেবেন। ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং স্বনামধন্য ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ফাহিম খুঁজে পেয়েছেন ঘাটতি। তার মতে, রিশাদ যদি ভয়কে দূর করতে পারে তবেই সাফল্য পাবে, আর সাফল্য পেলে দলেও টিকে থাকবে।
সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটারের মেন্টর ফাহিম মনে করেন রিশাদের বাধা হতে পারে ‘ভয়’, ‘রিশাদ যখন নার্ভাস হয়ে যায় তখন ভুল জায়গায় বোলিং করে। যখন নার্ভাস থাকে না তখন ভালো জায়গায় বোলিং করে। ও যে পারে তা আগের ম্যাচেই (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে) প্রমাণ করে দিয়েছে। কিন্তু বড় ব্যাটসম্যানরা যখন আসে তখন মার খাওয়ার ভয়ে এদিক-ওদিকে বল করে। সেই ভয়টা দূর হয়ে গেলে সে হয়তো আরও সাহসী হবে। নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী থাকবে। তাই ভয়টা রিশাদের দূর করা দরকার।’
ক্রিকেট বিশ্বে চলছে লেগ স্পিনারদের জয়জয়কার। টি-টোয়েন্টির সেরা বোলারদের তালিকায় যত চলছিল লেগিদের দাপট, সমানুপাতিক হারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ছিল হাহাকার। এবার সেই আক্ষেপ পরিত্রাণের শুরুটা কি রিশাদের হাতে, সময় দেবে উত্তর।