প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৭ পিএম
দ্বৈতনীতি আর অসম সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার গোটা দুনিয়া। সেখানে উল্টো পথে আইসিসি। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির ‘দ্বিচারিতা’ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কেউ বলছেন সংগঠন হিসেবে নৈতিকতার ঘাটতি আছে আইসিসির। ‘ভণ্ড’ বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন কেউবা।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানাতে পার্থ টেস্টে নিজের জুতোয় বিশেষ বার্তা নিয়ে মাঠে নামতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজা। আইসিসি তাতে বাদ সাধে। পরে কালো আর্মব্যান্ড পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারকে। অনুমতি না নিয়ে কাজটি করায় আইসিসি তাকে ভর্ৎসনা করেছিল। বক্সিং ডে টেস্টেও শান্তির প্রতীক ঘুঘু (পাখি) ও জলপাই ডালের স্টিকার লাগিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা। তাতেও আপত্তি জানায় আইসিসি। এই ঘটনার পর সামনে আসে মারনাস লাবুশেনের প্রতি আইসিসির আস্থার দৃশ্যপট।
ধর্মীয় ইস্যু কিংবা একটি বিশেষ পক্ষকে সমর্থনের জন্য খাজা বাধার মুখে পড়লেও ব্যাটে ঈগলের স্টিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যাট করছেন লাবুশেন। সে ঈগলটি বাইবেলের একটি প্রতীকী অর্থ বহন করে। তিনি খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। ব্যাটেও সেটি প্রদর্শন করেন। খাজা তার জুতায় ঘুঘু (পাখি) স্টিকার লাগাতে চেয়েছিলেন। যেটা শান্তির প্রতীক। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর ক্ষেত্রে এটি ছিল তার বিশেষ উদ্যোগ।
বক্সিং ডে টেস্টে ব্যাটে ঈগলের স্টিকার নিয়ে খেলবেন লাবুশেন। অথচ অনুমতি পাননি খাজা। বিষয়টি খটকা লেগেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার মাইকেল হোল্ডিংয়ের। মেনে নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। লাবুশেনের ঈগল আর খাজার পায়রাÑ এ দুটির মধ্যে ফারাক দেখেন না কামিন্স। কেন একটিকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, আরেকটিকে দেওয়া হচ্ছে নাÑ বোধগম্য নয় তার।
বক্সিং ডে টেস্টের আগে অনুশীলনের সময় খাজার ব্যাটে ও জুতোয় কালো পায়রা ও ০১ : ইউডিএইচআর শব্দ দেখা যায়, যা ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসকে নির্দেশ করে। এই জুতো ও ব্যাট পরে বক্সিং ডে টেস্টে খেলার অনুমতি পেতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও দ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেও ব্যর্থ হন খাজা। আইসিসির যুক্তি, আইন অনুযায়ী এই ধরনের ব্যক্তিগত বার্তা প্রকাশ করা যাবে না পোশাকে। অথচ আইসিসির অনুমতি নিয়েই দীর্ঘসময় ধরে লাবুশেনে ব্যাট করছেন।
খাজাকে নিয়ে আইসিসির এমন আচরণে বিস্মিত কিংবদন্তি হোল্ডিং। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থাকে ভণ্ড বলা ছাড়াও দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন। সাবেক এই ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার, ‘অন্য বেশিরভাগ সংগঠন যদি বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের আচরণ ও অবস্থান দিয়ে ধারাবাহিকতা ফুটিয়ে তুলতে না পারে, তাহলে আমি বিস্মিত হব। কিন্তু তাদের (আইসিসি) ক্ষেত্রে নয়। আরও একবার তারা তাদের ভণ্ডামি এবং সংগঠন হিসেবে নৈতিকতার ঘাটতি তুলে ধরল।’
হোল্ডিংয়ের মতো খাজার পাশে দাঁড়িয়েছেন কামিন্সও। অজি অধিনায়কের মতে, ‘সত্যি বলতে, কোনো পার্থক্য দেখছি না (খাজা ও লাবুশেনের) বার্তায়। (খাজার) আবেদনের বিস্তারিত আমি জানি না। এটি একদমই সাধারণ একটি কবুতর। উজির (খাজা) পাশে আছি। নিজের বিশ্বাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সে এবং সেটা বেশ সম্মানজনকভাবেই তুলে ধরেছে।’