সংবাদ সম্মেলনে সৌম্য সরকার
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৭ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৯ পিএম
সৌম্য অবশ্য সমালোচনায় এখন কান দেন না, এড়িয়ে যান সবকিছু— সংগৃহীত ছবি
ক্যারিয়ারজুড়ে মুদ্রার উল্টোপিঠই বেশি দেখতে হয়েছে সৌম্য সরকারকে। বেশিরভাগ সময়ই বিদ্ধ হন সমালোচনার তিরে। তবে তিনি আছেন তার নিজের মতো করে। ক্রিকেটার হিসেবে ভালো সময়কে যেমন উদযাপন করেন, তেমনি খারাপ সময়ের সঙ্গেও চেষ্টা করেন মানিয়ে চলতে। নেলসনে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে নিজের মনে জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো বলেন এই বাঁহাতি হার্ডহিটার।
কিউই মুলুকে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলার পরও আক্ষেপ ঝরেছে তার কণ্ঠে। ক্রিকেটারদের জীবন যে শুধু গোলাপশয্যা নয়, তাতে কাঁটাও থাকে, সেই সত্যটিই তুলে ধরেছেন সৌম্য। তার হৃদয়নিংড়ানো উপলব্ধি, ‘আমরা হাসার চেয়ে বেশি কাঁদি’।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সৌম্য সরকারের কষ্টের মুহূর্তগুলোই যেন বেশি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়ে এখনও দলে অনিশ্চিত তিনি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জার্সিতে সৌম্যর অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত তিন সংস্করণে তিন শতাধিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সৌম্য সেখানে ছিলেন সাকল্যে ১৫৩ ম্যাচে। ধারাবাহিকতা না থাকায় তার দলে ফেরা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন, কথা ওঠে তার নিবেদন এবং সক্ষমতা নিয়েও। ক্যারিয়ারে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যাওয়া টাইগার ওপেনার যদিও ওসব ভুলেই যেতে চান।
কিউই মুলুকে আরেকটি পঞ্চাশ ওভারের সিরিজ হারার দিনে সৌম্য ছিলেন ভীষণভাবে উজ্জ্বল। হারা ম্যাচে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ডাক, বোলিংয়ে খরুচে থাকার পর ফিল্ডিংয়েও ছিলেন হতশ্রী। গত দুবছর ধরে প্রায় পুরোটা সময়ই তাকে নিয়ে হয়েছে ঘোর সমালোচনা। হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায়ও সৌম্যকে রেখে দিয়েছিলেন অনেকে। ১৫১ বলে ২২ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৯ রানের ইনিংস খেলে নিন্দুকদের মোক্ষম জবাবটাই দিয়েছেন সৌম্য। তার ব্যাটের আঘাতে রেকর্ড বই হয়েছে ওলট-পালট।
ত্রিশের সৌম্যর এখনকার চাওয়া ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। নেলসনে ম্যাচ শেষে এই স্টাইলিশ ব্যাটার বলেন, ‘ওঠা-নামা আবার কী! ক্রিকেট খেলোয়াড়রা প্রতিদিন ভালো খেলবে না। একটা মানুষ প্রত্যেক দিন যেমন ভালো খাবার প্রত্যাশা করেন না। আমরাও খেলোয়াড়রা প্রত্যেক দিন ভালো করব এমন প্রত্যাশা করি না। আমরা ক্রিকেটাররা হাসার থেকে বেশি কাঁদি। আমরা যখনই খেলি একটা-দুইটা ম্যাচ ভালো খেললে বাকিটা খারাপই যায়। এটা নিয়ে যদি পড়ে থাকি, তাহলে নিজেরাই পিছিয়ে যাব। ইতিবাচক যেগুলো আছে সেগুলো নিয়েই চিন্তা করা হয় বেশি। কীভাবে সামনে আরও ভালো করা যায়, সেভাবেই ফোকাস করা বা চিন্তা করা হয়। এর মধ্যে কতটুকু পারফেক্ট করার চেষ্টা করি, সেটা নিয়েই এগোতে চাই আমরা।’
সৌম্যকে একটু বেশিমাত্রায় সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৩-এর একটু বেশি গড়ে ব্যাটিং করা সৌম্যর আউটের ধরন নিয়েই বেশি কথা ওঠে। সৌম্যকে নিউজিল্যান্ড সফরে কেন দলে রাখা হয়েছিল, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
তবে সৌম্য বিশ্বাস রাখেন, এবার ফিরছেন ক্যারিয়ার শেষ করে যাওয়ার জন্যই, ‘আফসোস বলতে… অবশ্যই যেদিন জাতীয় দলে প্রবেশ করি, এখান থেকে আর বেরুতে চাই না। আসলে এখান থেকেই অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে সবার। কখনও নিজের থেকে খারাপ খেলতে চাইনি। আর তাই চাইব যেন আগামীতেও একইভাবে খেলে যেতে পারি।’
ওপেনার হিসেবে দলে আসা সৌম্যকে ভাবা হচ্ছে অলরাউন্ডার সাকিবের বিকল্প। একজন অলরাউন্ডারের ঘাটতি মেটাতে তাকে দলে নেওয়া হয়েছে। তার ফেরাটাও ছিল যাচ্ছেতাই। আর এতে করে সৌম্যকে নিয়ে চলা সমালোচনা পায় উচ্চমাত্রা। সৌম্য অবশ্য ওসবে এখন কান দেন না, এড়িয়ে যান সবকিছু।
দীর্ঘ ৫ বছর পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সৌম্য। সবশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। ফিফটি করেছেন তা-ও সেই ২০১৯ সালে। প্রত্যাবর্তনের পর সৌম্য তাই পরিবার এবং কোচকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ‘সেঞ্চুরিটা বিফল মনে হচ্ছে। যদি ম্যাচ জিততাম তাহলে ভালো লাগত নিজের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলেন হ্যাঁ, ভালো লাগছে। আমি তো খেলোয়াড়, আমাকে খেলতেই হবে। ভালো খেললে হয়তোবা ভালো নিয়ে লিখবেন, খারাপ করলে খারাপ নিয়ে লিখবেন। এটা আপনাদের কাজ, আমার কাজ খেলা। ওগুলো নিয়ে ওইরকমভাবে ভাবা হয়নি। ভাবলে হয়তোবা নিজের ওপরই চাপ আসত।’
সেই চাপ সামলে সৌম্য এবার আলো ছড়াক, নিদেনপক্ষে দলে থিতু হোক—এটাই ক্রিকেটপ্রেমীদের চাওয়া।