নাজমুল হক তপন
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৪ এএম
বাংলাদেশে উৎসবের ঋতু শীত। কথায় বলে, কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। দুঃখ-দুর্দশার বিপরীতে, উৎসব আনন্দ নিয়ে আসে পৌষ মাস তথা শীত। আবার আমাদের দেশে গাছের পাতা ঝরে যায় শীতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে দারুণ সাদৃশ্য এই শীত ঋতুর। একদিকে আনন্দ উৎসব উদযাপন, অন্যদিকে ঝরা পাতার গল্প।
মাত্র অল্প কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এই শীতে ক্রিকেট হাজির হলো উৎসবের উপলক্ষ হয়ে, আবার মনে করিয়ে দিল ঝরা পাতার গল্পকেও। প্রবল পরাক্রম দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে ১১৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। বিজয়ের রাতে দেশের মানুষকে বড় উপহার দিয়েছে মেয়েরা। বিজয় দিবসকে বিজয়ের রঙে ভাসিয়েছে বাংলার বাঘিনীরা।
এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে জুনিয়র টাইগাররা। তারপরও বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশে ক্রিকেটের দিন হয়নি। এই দুই অর্জনের মাঝখানের সময়ে পথ হারিয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দল। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে লড়াইয়ে সিনিয়ররা হেরেছে ৪৪ রানের বড় ব্যবধানে।
জাতীয় দলের এই যে পথ হারানো এর সঙ্গে মিশে আছে ঝরা পাতার সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস। আরও সহজ করে বললে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঝরা পাতার ধারাবাহিক গল্প।
ধরা যাক ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কথাই। ওই আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন বাংলাদেশের এনামুল হক বিজয়। ৬ ম্যাচে ৩৬৫ রান করেছিলেন বিজয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন পাকিস্তান রান মেশিন বাবর আজম। তার ব্যাট থেকে এসেছিল ২৮৭ রান। ওই আসরে ২৮৪ রান করে চেতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাস্টার ব্লাস্টার কুইন্টন ডি কক। বিশ্ব ক্রিকেটে বাবর আজম , ডি ককরা আজ কোথায় আর কোথায় বিজয়! কক্ষচ্যুত নক্ষত্রের ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন বিজয়। ওই আসরে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। পুরো আসরে বিজয়ের অর্ধেক রানও পাননি হেড। ৬ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে মোটে ১৭২ রান। আর সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের সবটুকু আলো নিজের দিকে টেনে নেন হেড। হয়ে ওঠেন ফাইনালের মহানায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই এমনি অসংখ্য ঝরা পাতার গল্প। ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আলো ছড়ান টাইগার ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাব্বির রহমান। ৬ ইনিংসে দুজনের ব্যাট থেকেই আসে ২০৭ রান। ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ওই আসরে সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ৬ ইনিংসে করেন ১৬৬ রান। স্টোকসের পাশে জয়-সাব্বিরের নামটা কতটা বেমানান, সেটা অনুধাবন করতে প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার।
যুব এশিয়া কাপের তিন বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশের যুবারা। আর এটা এসেছে বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে। কিন্তু কম বয়সে দুনিয়া কাঁপানো জুনিয়র টাইগাররা পিছিয়ে পড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে। স্বপ্নযাত্রা একটা সময় পরিণত হয় দুঃস্বপ্নযাত্রায়। বেশিরভাগই হারিয়ে যায়। যেন শীতের ঝরা পাতা !
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের গ্রাফটা ক্রম ঊর্ধ্বমুখী। যতটুকু সুযোগ পেয়েছে , তার চেয়েও অনেক বেশি সাফল্য ঘরে আনছে তারা। সাকিব আল হাসানরা এশিয়া কাপ জিততে না পারলেও এশিয়া কাপ শিরোপা এনে দিয়েছেন সালমা খাতুনরা । যদিও নারী ক্রিকেটে ঝরা পাতার গল্প লেখার সময় এখনও হযনি। তবে সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার যে ঐতিহ্য আমাদের, ভয়টা সেখানেই। কেননা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বেশিরভাগই এখনও তরুণ। সঠিক যত্ন-পরিচর্যার জায়গাটিতে আমাদের যে উন্নাসিকতা , সেটা কি রাতারাতি দূর হয়ে যাবে!
বাংলাদেশ ক্রিকেটে শীতের উৎসব আর ঝরা পাতা দুটো যে চরম সত্যি। সম্ভাবনা আর ‘সম্ভব না’ চলে হাত ধরাধরি করেই।