প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১৯ পিএম
শুরুটা যেমন তেমন, শেষটা হোক মনের মতো। ট্রাভিস হেডের বেলায় শেষ এবং শুরুÑ দুটোই ছিল দেখার মতো। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে পেয়েছিলেন শতরান, শেষ ম্যাচেও তাই। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সেমিফাইনালে, ফাইনালেও বনেছেন ফাইনালম্যান। তাতেই ইতিহাস। শিরোপা ফয়সালার মঞ্চে সেঞ্চুরিয়ানদের পাশে বসেছেন, নাম লিখিয়েছেন এলিট ক্লাবেও। আহমেদাবাদে বিপর্যস্ত দলের কাণ্ডারি দেশকে দিয়েছেন ষষ্ঠ বিশ্বকাপের স্বাদ। দারুণ সেঞ্চুরির পথে মাড়িয়েছেন রথী-মহারথীদের পথচিহ্ন।
গত রবিবার অস্ট্রেলিয়ার জয়ের রাতে ব্যাটারদের কাজটি সহজ করে দেন বোলাররা। প্যাট কামিন্সের টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত ‘সেরা’ ছিল, তা প্রমাণ করে দেন মিচেল স্টার্ক-হ্যাজলউডরা। রানপাহাড়ে চড়ার আগেই স্বাগতিকদের আটকে দেন তারা। আসরজুড়ে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা ভারত এদিন আড়াইশর আগেই আটকে যায়।
রান তাড়ায় নেমে ৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অদূর বঙ্গোপসাগরের বাতিঘরের মতো আশার আলো জ্বলছিল ভারত শিবিরে। এক সেঞ্চুরিতে সব হিসাব চুকিয়ে দেন হেড। মার্নাশ লাবুশেনকে নিয়ে জয়ের বন্দরে নৌকা ভেড়ানোর পথে গড়েন বিশেষ কৃতিত্ব। হেড এদিন ৯৫ বলে সেঞ্চুরির পরে ১৩৭ রানে ইনিংস শেষে করেন।
সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও ম্যাচেসরা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে এলিট ক্লাবে নাম লেখালেন। যে তালিকায় আছে মাত্র তিনজনের নাম। এক আসরে সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল; দুই ম্যাচেই সেরার পুরস্কার জেতার কীর্তিমানরা হলেন ভারতের মহিন্দর অমরনাথ, শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা ও অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে অমরনাথ, ১৯৯৬ সালে ডি সিলভা ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওয়ার্ন টানা দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হন। দুই যুগ পর তাদের পাশে বসলেন হেড।
হেডের অনিন্দ্যসুন্দর সেঞ্চুরিটিও গড়েছে ইতিহাস। কোনো বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে তার ১৩৭ রানের ইনিংসটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস গিলক্রিস্টের। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৪ বলে ১৪৯ রান করেছিলেন অজি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিকি পন্টিংয়ের। ২০০৩ সালে অজি অধিনায়কের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কারণে শিরোপাবঞ্চিত হয় ভারত। হেড যেমন এবার একাই শেষ করে দিয়েছেন ভারতকে, ঠিক তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে পন্টিং ধসিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলিদের। এ তালিকায় অন্যরা হলেনÑ ক্লাইভ লয়েড, ভিভিয়ান রিচার্ডস, অরবিন্দ ডি সিলভা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।
এই হেডের কারণেই ছয় মাসে দুবার কপাল পুড়েছিল ভারতের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তার কাছেই হেরেছিল রোহিত শর্মারা। সেবার ওভালে দিকহারা অস্ট্রেলিয়াকে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখানো হেড এবার আহমেদাবাদে ছিলেন ওয়ানম্যান আর্মি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইনজুরিতে পড়লেও তার ওপর ভরসা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। টুর্নামেন্টের অর্ধেক সময়ে তার মাঠে নামা হবে না জেনেও অন্তর্ভুক্ত করেন স্কোয়াডে। হেড যেন দুই হাত ভরে সেটিরই প্রতিদান দিলেন।
ফাইনাল সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে নিজের এসব কীর্তির কথা ভেবে যেন উচ্ছ্বসিত হেড, ‘কখনও এমন কিছু আশা করিনি। লাখো কোটি বছরেও নয়। এটি আমার জীবনের অন্যরকম একটি দিন।’ দিনটি কতটা অন্যরকম, সেটিই ফুটে উঠেছে কামিন্সের কথায়। রীতিমতো তিনি হেডকে কিংবদন্তির কাতারে তুলে দিয়েছেন, ‘হাত ভেঙে যাওয়ার পরও নির্বাচক এবং চিকিৎসক দল তার ওপর আস্থা রেখেছিল। ঝুঁকিটা অনেক বড় ছিল। তবে এর প্রতিদান আমরা পেয়েছি। সে একজন কিংবদন্তি। আমরা তাকে ভালোবাসি।’