প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭ পিএম
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৯ পিএম
বিশ্বকাপের আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই ওয়ানডে সিরিজ খুইয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বমঞ্চে তাদের শুরুটাও ছিল যাচ্ছেতাই নড়বড়ে। সেই ভারত (৬ উইকেটে) ও দক্ষিণ আফ্রিকার (১৩৪ রান) বিপক্ষে হার দিয়েই মিশন শুরু করেছিল। পরে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। দারুণ ফর্মটা ফিরে পেয়ে কেবল জয়ের গল্প লিখে গেছে অজিরা।
দুরন্ত পারফরম্যান্সে ঘরে তুলেছে রেকর্ড ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। লিগ পর্বে সেই দুই হারের শোধটা তুলেছে অস্ট্রেলিয়া নক-আউট পর্বে। সেমিতে তিন উইকেটে তারা হারিয়ে দেয় প্রোটিয়াদের। আর ফাইনালে এসে ছয় উইকেটে হৃদয় ভেঙেছে ভারতীয়দের। হেক্সা মিশন সফল করে আহমেদাবাদে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি পুনর্মঞ্চস্থ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
বাজেভাবে শুরু করেও শিরোপা জিতেই মিশন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। শেষটায় এসে এমন দুর্বার পারফরম্যান্সের রহস্য কী? অজিদের পঞ্চম ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্ব শিরোপা মাথার ওপর উঁচিয়ে ধরা প্যাট কামিন্সের হাসিমাখা উত্তর, ‘আমার মনে হয়, সেরাটা শেষের জন্যই জমা রেখেছিলাম। বড় ম্যাচগুলোতে কয়েকজনই ভালো অবদান রাখল, যেটা আমাদের এগিয়ে দিল।’
শুধু দলীয় পারফরম্যান্সই জমা রেখে দিয়েছিলেন। তা কিন্তু নয়। নিজের সেরা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও রেখেছিলেন বাক্সবন্দি করে। সেমিফাইনাল আর ফাইনালেই খুলে দেন নিজের সেই জাদুর বাক্স। বিশ্বকাপ শুরুর দিকে উইকেটের জন্য হাপিত্যেশ করলেও সেমিতে নেন তিন উইকেট। আর ফাইনালে দুই উইকেট। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১০ ওভার বল করে একটি বাউন্ডারিও দেননি। প্রথম পেসার হিসেবে এবারের বিশ্বকাপে পুরো ১০ ওভারেও কোনো বাউন্ডারি হজম করেননি।
প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয় মানার পর দলকে কী বার্তা দিয়েছিলেন? বিশ্ব জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক নিজের চেনা রূপটাই প্রকাশ করে বলেন, ‘বলেছিলাম আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং বিশ্বকাপ জিততে হবে। আর সেটার জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই। আমাদের সাহসী হতে হবে, এখান থেকেই সেটা শুরু করতে হবে।’
ভারতীয় সমর্থকদের জার্সির রঙে গড়ে উঠা নীল মহাসাগরের মাঝে টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন কামিন্স। উইকেট মন্থর জেনেও কেন নিলেন এই সিদ্ধান্ত? ব্যাখ্যা দিতে কামিন্সের জবাব, ‘পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে বেশিরভাগই আগে ব্যাট করেছি। আজ (রবিবার) মনে হয়েছে রান তাড়া করলেই ভালো হবে। পরে ব্যাটিং সহজ হবে।’
ফাইনালের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াই। স্নায়ুচাপ তো ঘিরে ধরবেই ক্রিকেটারদের। অধিনায়ক কামিন্সও তাই ব্যতিক্রম ছিলেন না। মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে নিজেকে সামাল দিয়ে নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসটা কাটিয়েছেন তিনি ড্রেসিংরুমে, ‘দলে আমি তাদের একজন, যারা স্নায়ু চাপে ভুগছিলাম। কিন্তু হেড এবং মার্নাস খেলাটাকে এগিয়ে নিয়েছে। যখন সে (হেড) হাত ভেঙে ফেলেছিল নির্বাচকরা তখনও তার ওপর ভরসা করেছিল। এটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কাজে দিয়েছে। তার ব্যাটিং দেখা দারুণ ব্যাপার।’
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কামিন্স, ভারতীয় দর্শকদের চুপ করাবেন। ফাইনালে সেটা করে দেখিয়েছেনও। এ নিয়ে কামিন্স বলেন, ‘এটি দারুণ ছিল। বোলিং ইনিংসের সময় বেশ কয়েকবার পুরো গ্যালারি নীরব হতে দেখে আমি খুব খুশি ছিলাম। কয়েকবার তারা অনেক চিৎকার করেছে এবং এটিই সত্যিই অনেক বেশি ছিল। দর্শকরা দুর্দান্ত। ভারতে ক্রিকেটের জন্য থাকা এই প্যাশনের তুলনা নেই। পেছন ফিরে তাকালে এটি দারুণ মুহূর্ত। ফল যা-ই হোক না কেন, এমন একটি দিন আমরা ভুলব না।’
এ বছরটা কামিন্সের জন্য সেরা। প্রথমে জিতেছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। পরে ঘরে তোলেন অ্যাশেজ। আর এবার তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া পেল ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। সবকিছুর চেয়ে কামিন্সের কাছে বিশ্বকাপ জয়ই তার সেরা অর্জন, ‘এটা অনেক বিশাল। এটা ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ চূড়া, ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। বিশেষ করে ভারতে এত বিশাল সমর্থকের সামনে এটা জেতা দারুণ ছিল। এ বছর আমাদের সবার জন্য দারুণ ছিল। ভারতে (বিশ্বকাপ জেতা), টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জেতা, অ্যাশেজÑ সবকিছুই অসাধারণ ছিল। এভাবে সবকিছুতে শীর্ষে থেকে শেষ করতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। এসব মুহূর্তই আমরা জীবনের বাকি সময়টায় মনে রাখব।’