× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জোহানেসবার্গের সুখস্মৃতিই ফেরাল অজিরা

নজরুল ইসলাম

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৯ পিএম

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০৭ পিএম

জোহানেসবার্গের সুখস্মৃতিই ফেরাল অজিরা

‘এবার যদি ভারত বিশ্বকাপ জিততে না পারে, তাহলে তাদের পরবর্তী বিশ্বকাপ জেতার কথা ভাবতেও হয়তো আরও তিনটি বিশ্বকাপ লেগে যাবে।’ রবি শাস্ত্রীর এই কথাতেই স্পষ্ট। বিশ্ব শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য কতটা মরিয়া ছিল ভারত। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ বলে কথা। তাই তো হিমালয়সম স্বপ্নটা দেখেও ছিলেন রোহিত শর্মারা। বিশ্ব শিরোপা ঘরেই রেখে দিতে চেয়েছিল ভারত। ২০১১ সালের মতো ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিল তারা। রোহিত শর্মার মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো দেশের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে মাখাতে চেয়েছিলেন। ইতিহাসও তাদের পক্ষেই কথা বলছিল। আগের তিন আসরে তো স্বাগতিকরাই ট্রফি ছিনিয়ে নিয়েছিল। ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে আয়োজক ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মাথায় উঠেছিল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ভারতীয়রাও তাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন।

কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। বাজে ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে আয়োজকদের বিশ্বকাপ ধরে রাখার হাল আমলের ঐতিহ্যটা আর ধরে রাখতে পারল না ভারত। মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্সের আগুন পেসে ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র ২৪০ রানে। ব্যাট হাতে যা একটু দাপট দেখান লোকেশ রাহুল (৬৬), বিরাট কোহলি (৫৪) ও রোহিত শর্মা (৪৭)। ত্রয়ী তারকা ব্যাটার দৃঢ়তা না দেখালে ছোট স্কোর গড়ার লজ্জাতেই ডুবতে হতো ভারতীয়দের। বাজে ব্যাটিং-বোলিংয়ে ২০১১ সালের সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারলেন না রোহিতরা। ধোনিরা কাজের কাজটি করেছিলেন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে। শচীন টেন্ডুলকারকে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে তারই মাঠে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিকরা। এবার ফাইনালটা হলো আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। বদলে গেছে প্রতিপক্ষও। তাতে পাল্টে গেছে ফাইনালের ভাগ্যও। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধরাশায়ী হয়ে ফের শিরোপা খোয়াতে হলো ভারতীয়দের। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিল ভারত। এরপর টানা দশ বছর কাটলেও বৈশ্বিক শিরোপা খরাটা রয়েই গেল তাদের। 

বিশ্বকাপের আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই ওয়ানডে সিরিজ খুইয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বমঞ্চে তাদের শুরুটা ছিল যাচ্ছেতাই নড়বড়ে। সেই ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার দিয়েই মিশন শুরু করেছিল তারা। পরে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। দারুণ ফর্মটা ফিরে পেয়ে কেবল জয়ের গল্পই লিখে গেছে অজিরা। দুরন্ত পারফরম্যান্সে ঘরে তুলল ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। লিগ পর্বে সেই দুই হারের শোধটা তুলেছে অস্ট্রেলিয়া নকআউট পর্বে। সেমিতে তারা হারিয়ে দেয় প্রোটিয়াদের। আর ফাইনালে এসে হৃদয় ভাঙে ভারতীয়দের। হেক্সা মিশন সফল করে আহমেদাবাদে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি পুনর্মঞ্চস্থ করল অস্ট্রেলিয়া। সেবার জোহানেসবার্গের মাঠে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল তারা। এ নিয়ে ফাইনালে ভারতকে ধরাশায়ী করে দুটো বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামলেও পারলেন না কোহলি-শামিরা। সঙ্গে ভারতের মাটিতেও দুটো বিশ্বকাপ জিতল অজিরা। প্রথমবার তারা ইডেন গার্ডেনসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। কলকাতার মাঠে ইংল্যান্ডকে বধ করে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারতের মাটিতে এবার নিজেদের ইতিহাসের রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপাই জিতলেন ম্যাক্সওয়েলরা।

নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ। স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ থাকাটাই স্বাভাবিক। ভারতের প্রতিটির ম্যাচে হয়েছেও তাই। ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। দর্শকদের নীল জার্সিতে পুরো নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম রূপ নিয়েছিল নীল মহাসাগরে। সেই নীল উৎসবে শামিল হয়ে টানা ১০ জয় নিয়ে ফাইনালে নেমেছিল ভারতও। স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিল সেই নীল মহাসাগরে অজিদের নাকানিচুবানি খাওয়ানো। কিন্তু দেশের সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে নিজেরাই ডুবেছে সেই নীল মহাসাগরে। ঘরের মাঠের আসর বলে চাপটা একটু বেশি ছিল ভারতের ওপর। অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তায় মনস্তাত্ত্বিক আর স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে হাসলেন ‘যন্ত্রমানব’রাই। পিচ আর টস বিতর্কে জড়িয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে এসে ঠিকই অসহায় আত্মসমর্পণ করে ভারত। নিজেদের সুবিধায় মন্থর উইকেট তৈরি করে কোনো ফায়দাই লুটতে পারল না স্বাগতিকরা। উল্টো নিজেদের বানানো ফাঁদে নিজেরাই আটকে পড়ে নিজেদেরই সর্বনাশ করেছেন বুমরাহ-জাদেজারা। আর শাপেবর হয়েছে অজিদের।

অন্যদের মতো অজি ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্সও জানতেন মাঠ থাকবে ভারতের সমর্থকদের দখলে। অজিদের হাতেগোনা সমর্থকদের হয়তো দেখাই যাবে না। মিলিয়ে যাবে নীল মহাসাগরের ঢেউয়ের তোড়ে। তারপরও সাহস রেখে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স দিয়ে রেখেছিলেন হুমকি। ভারতীয় সমর্থকদের থামিয়ে দেওয়ার রণকৌশলই এঁটে রেখেছেন তারা, ‘বিপুলসংখ্যক সমর্থককে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেয়ে সন্তুষ্টির আর কিছু হতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য এটাই।’ যে কথা ঠিক সেই কাজ। নীল মহাসাগরের জলোচ্ছ্বাস প্যাট কামিন্সরা থামিয়ে দিয়েছেন দাপটের সঙ্গেই। আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাটা তারা বেশ ভালোই কাজে লাগিয়েছেন।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও বলে দিয়েছিলেন, অপরাজেয় ভারতকে যদি কোনো দল হারাতে পারে, তবে সেটি অস্ট্রেলিয়া- ‘আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র দল, যারা ভারতকে হারাতে পারে।’ তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। সঙ্গে ম্যাচসেরা সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড (১৩৭) ও মার্নাস লাবুশেনের (৫৮*) ব্যাটিং ঝলকে ছয় উইকেটের জয়ে আলোর মুখ দেখল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের শিরোপা জয়ের পূর্বাভাসও।

আফগানিস্তান ম্যাচ তো প্রায় হেরেই গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আফগানদের বিপক্ষে ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম নিয়ে অতিমানবীয় ইনিংস খেলে দলকে জেতান ক্রিকেটের এ সুপারস্টার। এ ক্রিকেট সুপারম্যানের হার না মানা ২০১ রানের সেই দাপুটে ইনিংসটা আত্মবিশ্বাসটা আরও বাড়িয়ে দেয় অজিদের। আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটা গিয়ে ঠেকেছিল শিরোপা জয়ের স্বপ্নে। শেষে তারা সেটাই করেও দেখাল।

প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগেই অজিরা দেখে ফেলেন এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ম্যাক্সওয়েল জানান, অসাধ্য সাধন করে আফগানদের হারানোর পর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের আবহ তৈরি হয়েছে দলে। সেবারও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সময় বাজে কেটেছিল অজিদের। সবাইকে অবাক করে শেষ হাসি হাসে অস্ট্রেলিয়াই। সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের প্রেরণা ম্যাক্সওয়েল ছড়িয়ে দেন দলের মধ্যে। বলেন- ‘আফগানিস্তান ম্যাচের রোমাঞ্চ আমাদেরকে সামনে এগোনোর জন্য নতুন বিশ্বাস দিয়েছে। এটি আমাকে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়েছে। প্রায় একই ধরনের অনুভূতি।’ শেষে তার কথাই ফলে গেছে।

দুই কোচের ঠান্ডা যুদ্ধে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড। আর রাজ্যের হতাশা সঙ্গী করে মুখ লুকান রাহুল দ্রাবিড়। রণকৌশলে ম্যাকডোনাল্ডের সাফল্যের নেপথ্যে তো তার লাকি সেভেন অস্ত্র। যেখানে রয়েছেন প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক ও ডেভিড ওয়ার্নার। যারা অস্ট্রেলিয়াকে উপহার দিয়েছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপ। আর দ্রাবিড়ের দলে বিশ্বকাপজয়ী ছিলেন মাত্র দুজন- বিরাট কোহলি আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ম্যাচে ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছেন বিশ্ব জয়ের এই অভিজ্ঞরাই। কোহলি খেলার সুযোগ পেলেও অশ্বিন পাননি। তার অভিশাপ লাগেনি তো দলে! হতেও তো পারে। ঘটনা সত্য হলেও হতে পারে!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা