× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপমহাদেশের মশাল ভারতের হাতে

ফেরদৌস জাহান

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম

উপমহাদেশের মশাল ভারতের হাতে

গত তিন দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে উপমহাদেশের লড়াই হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটের মূল সুর। বিশেষ করে ক্যারিবীয় ক্রিকেট তাদের গৌরব হারিয়ে ফেলার পর উইডলো-চেরির শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে অজিদের আসল চ্যালেঞ্জার উপমহাদেশের দলগুলো। অবশ্য ব্যতিক্রম ছিল গত বিশ্বকাপ। ২০১৯ সালের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, জায়গা করে নিতে পারেনি উপমহাদেশের কোনো দলই। আবারও বিশ্বকাপে ফিরে এসেছে মূল সুর। রাজমুকুটের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ভারত। যেহেতু ক্রিকেটের তীর্থভূমি উপমহাদেশে আয়োজন, স্বভাবতই এ অঞ্চলের মানুষের গর্ব ধরে রাখার ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তেছে ভারতের ওপর। আরও সহজ করে বললে, উপমহাদেশের মশাল এখন ভারতের হাতে। 

রোহিত শর্মার ভারত ফাইনালে ওঠার আগে উপমহাদেশের ক্রিকেট কি জৌলুস হারিয়ে ফেলছেÑ বড় হয়ে ওঠে এ প্রশ্নটিই। নিজেদের চেনা কন্ডিশনে খেলার পরও এ অঞ্চল থেকে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে পেরেছে মোটে একটি দল। ভারত ছাড়া উপমহাদেশের বাকি দলগুলো পথ হারিয়েছে আগেই।

উপমহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে এর চেয়ে খারাপ ফল আগে কখনও হয়নি। এর আগে উপমহাদেশে সর্বশেষ বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ২০১১ সালে। ওই টুর্নামেন্টে সেমিতে খেলেছিল দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দল। সেরা চারে ছিল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। এবারের শেষ চারে উপমহাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ভারত। তবে সহজেই সেমির বাধা পেরিয়ে এ অঞ্চলের ক্রিকেটের মুখ রক্ষা করেছে রোহিত ব্রিগেড। 

গত এক যুগ ধরে উপমহাদেশের ক্রিকেটে যেন ভাটার টান। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠতে পারেনি এ অঞ্চলের কোনো দলই। অথচ ১৯৯২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা ছয় বিশ্বকাপের ফাইনালেই উপস্থিতি ছিল উপমহাদেশের। ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিশ্বজনীন করার কৃতিত্বের দাবিদারও দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলো। ১৯৮৩ সালের ফাইনালে ওই সময়ের ক্রিকেটে একক পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ক্রিকেটকে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত করেছিল ভারত। এর মধ্য দিয়ে একমুখী ক্রিকেট হয়ে ওঠে বহুমুখী।

নব্বইয়ের দশক থেকে ক্যারিবীয় ক্রিকেটকে 

পেছনে ফেলে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। আর এই প্রবল পরাক্রম অজিদের বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়নি দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলো। ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কাও যোগ দেয় শ্রেষ্ঠত্বের মিছিলে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপেই ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল উপমহাদেশের দলগুলো। কিন্তু হাল আমলে ভারত ছাড়া কেউই নিজেদের সেরাটা ধরে রাখতে পারছে না।

এবারের দশ দলের বিশ্বকাপে পাঁচটিই এ অঞ্চলের। আনুপাতিক হিসাবেও সেমিতে ওঠার কথা দুটো দলের। কিন্তু সেমির মঞ্চে জায়গা করে নিতে পেরেছে শুধু ভারত। গত আসরেও উপমহাদেশের একমাত্র দল হিসেবে শেষ চারে পৌঁছে ভারত। তবে ফাইনালে ওঠার আগেই তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজায় নিউজিল্যান্ড। এর আগে ২০১৫ সালে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতকে ডুবিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া।

এবারের আসরে এ অঞ্চলের দলগুলোর মধ্যে ভারত বাদে যা একটু আলো ছড়িয়েছে আফগানিস্তান। চার জয়ে পাকিস্তানের মতোই ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দলটি। দুর্দান্ত যাত্রায় তারা হারায় তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে। মাত্র এক দশক আগেও ভীষণ উদ্দীপ্ত ক্রিকেট খেলত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দলটি এখন অতীতের ছায়া। এবার সেরা আটেও জায়গা হয়নি তাদের। যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে আসার জন্য লঙ্কানদের লড়াই করতে হয়েছিল বাছাই পর্বে। অতটা দুর্দশায় না পড়লেও গত চার আসরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স এবারই।

সব মিলিয়ে ক্রিকেটের একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এবারের ফাইনালে মুখোমুখি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। শুধু এই বিশ্বকাপ নয়, বর্তমান রোহিত শর্মার দলকে অনেকেই তুলনা করছেন ইতিহাসের সেরা দলগুলোর সঙ্গে। সেই মর্যাদায় উন্নীত হতে হলে শ্রেষ্ঠত্বের চ্যালেঞ্জে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়টাই একমাত্র বিকল্প ভারতের। মনে রাখতে হবে, বর্তমান অস্ট্রেলিয়া ইতিহাসের সেরা দলগুলোর কাতারে কোনোভাবেই পড়ে না। ফাইনালে ওঠার আগ পর্যন্ত অজিরা হেরেছে দুটো ম্যাচে। আর বিপরীতে অজেয় ভারত দশে দশ।

বিশ্ব ক্রিকেটে অপ্রতিরোধ্য দল বলতে বোঝায় সত্তরের দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নব্বইয়ের শেষদিক থেকে পরের দশকের অস্ট্রেলিয়া। এই দুটো দলই সামনে যাকেই পেত গুঁড়িয়ে দিত। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ এই দুটো আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ক্রিকেটে সেই একক আধিপত্যের অবসান ঘটায় উপমহাদেশের ক্রিকেটের শিরোমণি ভারত।

১৯৯২-এর আসরে নানা ঘটনা আর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শিরোপা জেতে পাকিস্তান। ১৯৯৬-এর বিশ্বকাপে অজেয় থেকেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখায় শ্রীলঙ্কা। এরপর থেকে শুরু হয় ক্রিকেটে অজি আধিপত্য। বিশ্ব ক্রিকেটে একক নাম হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অজিরা। একই ব্যাপার ঘটে ২০০৭-এর আসরেও। আবারও অজেয় থেকেই বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। 

২০০৭-এর অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে বলা হয়, যদি দুটো দল খেলত তবে ফাইনাল হতো অল অস্ট্রেলিয়ান। পরের তিন আসরে আবারও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। মানে একক আধিপত্যের অবসান। দুর্দমনীয় হয়ে ওঠেনি কোনো দলই। বলা বাহুল্য, অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হয়নি কোনো দল। এবারে ইতিহাসের সেরা দলগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ভারত। ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষ। রবিন লিগে এই অস্ট্রেলিয়াকে ভারত হারিয়েছে ৬ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। চলতি আসরে ইতিহাসের সেরা দলগুলোর পথেই হাঁটছে ভারত। এখন তাদের সামনে শেষ বাধা অস্ট্রেলিয়া। 

এক যুগ ধরে উপমহাদেশে ক্রিকেটের গৌরবের জিয়নকাঠিটি একাই বহন করতে হচ্ছে ভারতকে। কিন্তু যদি এবার ঘরের মাঠে তারা শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়, তবে উপমহাদেশে ক্রিকেটের জন্য এটা হয়ে উঠবে খুব বড় একটা ধাক্কা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা