× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুই কোচেরও স্নায়ুর লড়াই

আরিফুর রাজু

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম

বাঁয়ে অ্যান্ডু ম্যাকডোনাল্ড ডানে  রাহুল দ্রাবিড়।

বাঁয়ে অ্যান্ডু ম্যাকডোনাল্ড ডানে রাহুল দ্রাবিড়।

সময় চলে যায়। ঝরে পড়া পাতা, নদীর ঢেউ কিংবা সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়। কজনইবা মনে রাখেন ওসব! বিরহের অনলে যারা পোড়েন, চোখের সামনে খসে পড়তে দেখেন নক্ষত্ররাজি, তারাও কি সময় ভুলে যান? নাকি ভুলে যাওয়ার বাহানায় বুকে ফুঁসেন হিমালয়-চাপা ক্ষোভ। নিশ্চয়ই প্রতিশোধের নেশায় তারাও পোড়েন! মুভির দৃশ্যপটে হিরোদের রোলে যেমনটা থাকে, আদপে তা ঘটেও, কুড়ি কিংবা চল্লিশে... বদলা তো নিতেই হবে!

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শোকে পাথর বনে গিয়েছিল ভারত। জোহানেসবার্গে সৌরভ গাঙ্গুলিদের সামনে দেশটির ক্রিকেটের অপমৃত্যু ঘটেছিল। দ্রাবিড়কে ‘গ্রেট ওয়াল’, গাঙ্গুলিকে ‘রক্ষাকবচ’ ভাবা হলেও কেউ কিচ্ছুটি করতে পারেননি। স্রেফ হলুদের ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছিল সম্মান। অস্ট্রেলিয়ার কাছে অস্তিত্ব খুইয়ে কেবল সেদিন রুপার একটি পদকই জুটেছিল। অসহায়ত্বের ঠিক ২০ বছর পর সুযোগ আসে বদলা নেওয়ার। ক্রিকেটার দ্রাবিড় সেবার যেটা পারেননি কোচ দ্রাবিড়ের সামনে সেই সুযোগ। আহমেদাবাদে সুমধুর প্রতিশোধ নিয়ে নীলের সাগরে ডুবিয়ে দেওয়ার অপেক্ষাও। 

বছর কুড়ি আগের বিভীষিকাময় রাত ভোলেনি ভারত, ভোলেননি দ্রাবিড়ও। শক্ত প্রাচীরে ঘেরা ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্য যেভাবে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়েছিল, সে ব্যথা এখনও তাজা। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে দ্রাবিড় দেখেছিলেন ধ্বংসলীলা। সেবার খেলোয়াড়, এবারের রোহিত শর্মাদের কোচ তিনি। কখনও ট্রফি ছুঁতে না পারা দ্রাবিড়ের মনন-মস্তিষ্কে শিরোপা। হাতছোঁয়া দূরত্বে থাকা সোনালি ট্রফিতে চুমু আঁকতেই স্বপ্ন কষছেন তিনি।

২০ বছর পর সেই কাহিনী শিষ্যদের শুনিয়েছেন দ্রাবিড়। মুখ লুকিয়ে বোবাকান্না কিংবা বিছানায় ছটফটানি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বারবার। তাতিয়ে দিয়েছেন কখনও বিশ্বকাপের ফাইনাল না খেলা রোহিত, শামি, বুমরাহদের। কোচ হিসেবে তিনি চাইবেন শিষ্যদের ডানায় ভর করে শিরোপা জিততে। সমর্থকরাও অপেক্ষায়। দ্রাবিড়ও গুনছেন প্রহর। আজ যে তার রুপার পদকটির রঙ বদল করে নেওয়ার পালা। পারবেন? সময় উত্তর দেবে!

পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সামনে নিজেদের কতটা দৃঢ় রাখতে পারবে ভারত, নিজের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন দ্রাবিড়Ñ সেই শঙ্কাও আছে। ২০ বছর আগে এমনই এক বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই পন্টিংয়ের উত্তরসূরিরা মাঝে মাঝে উদভ্রান্ত হয়েছেন ঠিকই। যেমনটা হয়েছিলেন এই বিশ্বকাপের শুরুতে। দুঃসময় সামলে একটা একটি করে ইট গেঁথে ধীরে ও ধরে তৈরি করেন ভবিষ্যতের অট্টালিকা। তা স্কাইস্ক্র্যাপারে রূপ দেওয়ার পেছনের কারিগর অ্যান্ডু ম্যাকডোনাল্ডরা।

ম্যাকডোনাল্ড, যিনি ২০২৩ বিশ্বকাপে শুরুতেই দিক হারানো অস্ট্রেলিয়ার বদলে দেওয়ার নায়ক। শিষ্যদের প্রতি তার বিশ্বাস আকাশচুম্বী। সব সময়ই ছাতা হয়ে পাশে রয়েছেন। দলের দুর্দিন কিংবা প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, সবকিছুরই লাগাম টেনেছেন। বিশ্বকাপের শুরুতে অজি পালে ধাক্কা লাগে। নিন্দুকদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট তিনিই ভুলিয়ে দিয়েছিলেন। টানা দুই ম্যাচ হেরে বিশ্ব আসর শেষ কবে শুরু করেছিল সফলতম দলটি, তা ঘাঁটতে যখন নাভিশ্বাস ছুটেছে, পরিসংখ্যানবিদদের মতো তখনও তিনি শান্ত।

আসরে টানা দুই ম্যাচ শুধু হারই নয়, স্রেফ উড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার, রান পাননি কেউ। বোলাররা ছিলেন নিজেদের ছায়ায়। স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজেলউডের বলে ছিল না ধার, জাম্পা খুঁজে পাচ্ছিলেন না লাইন-লেংথ।

এরপর কী হলো, নিষ্প্রভ দলটি ফিরে পেল পুরোনো ঝাঁজ। টিকে থাকতে হলে হারা যাবে না, এমন সমীকরণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এক ভিন্ন অস্ট্রেলিয়াকে দেখল বিশ্ব। জীয়নকাঠির স্পর্শে ফর্মে ফিরলেন সবাই। রান এলো। বল হাতে মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেটের দেখা মিলল। আর কামিন্সের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ম্যাকডোনাল্ডও গাইতে শুরু করলেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। দিক হারানো স্মিথ-ওয়ার্নারদের তিনিই যে বদলে দেওয়ার নায়ক, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

গণমাধ্যমবিমুখ ম্যাকডোনাল্ড সুযোগ পেলেই মেতে ওঠেন শিষ্যদের বন্দনায়। তাতিয়ে দেন ম্যাক্সওয়েলদের। ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে বিজয়ের গান গাওয়ার পেছনের শক্তিদাতা তিনিই। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার নায়ক ম্যাক্সির অতিমানবীয় ইনিংসকে ‘চোখের শান্তি’ বলা ম্যাকডোনাল্ড প্রশংসা করতে ভোলেননি ধীরগতির কামিন্সকেও। তাদের জুটিটি তার বেশ দারুণ লেগেছে। আহমেদাবাদে ঠিক তেমনই আরেকটি সুন্দর দিন দেখার অপেক্ষায় তিনি। তবেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। শীতল যুদ্ধে জয়ী হলে তিনিও হবেন ইতিহাসের অংশ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা