মশিউর রহমান টিপু
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩০ পিএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
খেলা কিন্তু সত্যিই হবে আজ! বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার আগুনে ফাইনাল। মুম্বাই আর কলকাতায় দুটি হাইভোল্টেজ সেমিফাইনাল দেখার পর এই দুয়ের শিরোপা দ্বৈরথ নিয়ে প্রত্যাশার পারদ হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছে। কষ্টিপাথরে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর ফাইনালে উঠেছে দুই দল। যোগ্যতায়, দক্ষতায় কেউ কারও চেয়ে কম নয়। ফলে গুজরাটের আহমেদাবাদে আজ এমন শিরোপা লড়াই-ই অনিবার্য হয়ে উঠেছে, যা দেখে মনে হবেÑ কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।
মন চায় ভুলতে
একটি-দুটি নয়, এবারের বিশ্বকাপে পরপর ৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার। লক্ষ্য তো সবারই বড় কিছু থাকে। সেখানে পৌঁছাতে না পারলেও কাছাকাছি অন্তত যায়। যেমন গিয়েছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপ ঘিরে তাদের অনেক আক্ষেপ হয়তো থাকবে, কিন্তু দুঃখ থাকবে বলে মনে হয় না। একটা দল সংঘবদ্ধ থাকলে মাঠে কী অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো যায়, সেটা এবার আফগানরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশকে এ যাত্রায় ব্যর্থই বলতে হয়। হিসাবের খাতা শূন্য বলা যাবে না, কারণ দুটি জয় আছে। কিন্তু এবার দলের যেরকম নিষ্প্রাণ চেহারা দেখা গেছে তা মনকে কেবলই বিদীর্ণ করে, হতাশা জাগায়। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ছন্দপতন ঘটে যাওয়া দলটিকে ‘দল’ হিসেবে দেখা যায়নি একবারও। ভেতরের কোন্দল আর এত এত বিশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো দলের পক্ষেই ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব শুধু নয়, আরও অনেক উটকো বিষয় এবার পুরো টিমকে ব্যর্থতার যূপকাষ্ঠে বলি হতে বাধ্য করেছে। তাতে দেশের কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙেছে। কিন্তু ‘… হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে’ কে-ইবা ভালোবাসে! অতএব আপাতত সান্ত্বনা খোঁজা যাক দারুণ এক ফাইনাল উপভোগের মাঝে।
তারায় তারায় খচিত
এবারের বিশ্বকাপটা যেন হয়ে উঠেছিল ভরপুর তারার মেলা। ফাইনাল, সেমিফাইনালের আগে বিদায় নেওয়া দলের আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের নাম এখনও সমর্থকদের মুখে মুখে। তবে ফাইনালিস্ট দুই দলের এক থেকে এগারোÑ সবকজনই যেন একেকটি উজ্জ্বল তারকা। একদিকে ভারতের বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ শামি, রোহিত শর্মা; অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাক্সওয়েল, ওয়ার্নার, জাম্পাÑ কাকে বাদে রেখে কার কথা বলা। এ বলে আমায় দেখো, ও বলে আমায়। এমন ‘ভুবন ভরা’ আলো সব বিশ্বকাপে সহজে দেখা যায় না।
বাজির ঘোড়া কে?
সেই পুরোনো প্রশ্ন- ‘কে জিতবে শিরোপা’ অথবা ‘শেষ হাসি কার?’ এবার ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের আগেও এই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি আছে পক্ষে ও বিপক্ষে নানা যুক্তি-তক্কো-গপ্পোও। ভারত একে স্বাগতিক, তার ওপর দলে রয়েছেন খাপ খোলা তরবারির মতো ঝিলিক দেওয়া একঝাঁক লড়াকু খেলোয়াড়। প্রায় সবাই রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। শুরু থেকে ফাইনাল পর্যন্ত অপরাজিত থাকায় মানসিকভাবেও সবাই বেশ চনমনে। তার সঙ্গে এক্সট্রা চার্জ জোগান দিচ্ছে দেশটির শতকোটি মানুষের সমর্থন। সর্বোপরি আছে মনপসন্দ ‘ঘরোয়া উইকেটের’ আশীর্বাদ! এমন দলকে হারানো শুধু মুশকিল নয়, ‘না, মুমকিনও।’ কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠে থাকা অন্য দলটি যে অস্ট্রেলিয়া! এমন একটি দল, যাদেরকে হারার আগে কখনও হারতে দেখেনি কেউ। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় মরণ কামড় দিয়ে মাঠের প্রতি ইঞ্চি জমিন আঁকড়ে ধরে থাকা একটি দল। লড়াই, লড়াই এবং লড়াই-ই যাদের শেষ কথা। ইস্পাতদৃঢ় মনোবল আর পেশাদারি উৎকর্ষের এমন সম্মিলন অন্যদের মাঝে কমই দেখা যায়। অসিদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে আছে সর্বাধিক পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতাও।
ভারতের জন্য এবার শিরোপা জেতার ব্যাপারটা হচ্ছে, আরেকবার অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার সামনে রয়েছে গ্রুপ পর্বে চেন্নাইয়ে স্বাগতিকদের কাছে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণাকে আহমেদাবাদে জয়ে রূপান্তরিত করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ। দুদলই মুখিয়ে আছে সামর্থ্যের শেষবিন্দু উজাড় করে দিয়ে শিরোপা হাতে তুলে নিতে। কাজেই ধরে নেওয়া যায়, সবার জন্য এক অবিস্মরণীয় ফাইনাল অপেক্ষা করছে আজ। শিরোপা ভারত জিতুক অথবা অস্ট্রেলিয়াÑ জয় শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটেরই।
মনে রবে কিনা রবে…
প্রতিটি বিশ্বকাপ যেন একেকটি আনন্দ-বেদনার কাব্য। নানা ঘটনা, চমক, অঘটন আর বিতর্কের জন্ম হয় বলেই বিশ্বকাপ ঘিরে থাকে এত উন্মাদনা। ভারতের মাটিতে এবারের আসরটি ক্রিকেটপ্রেমীদের চাওয়া-পাওয়া যেন কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছে। কী ছিল না এবারের বিশ্বকাপে! পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার রোমাঞ্চ ছিল, আশাভঙ্গের বেদনা ছিল, ছিল অপ্রত্যাশিত সাফল্যে উদ্ভাসিত হওয়ার পরম আনন্দ। বিতর্কও কিছু কম ছিল না। তবে এই জায়গায় নিশ্চিতভাবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ‘টাইমড আউট’ নাটক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ম্যাথুসকে টাইমড আউটের শিকার বানিয়ে আলোচনা বা সমালোচনার মধ্যমণি হয়েছেন সাকিব আল হাসান। খেলা নিয়ে বেশি কথা হোক বা না হোক, অন্তত এই একটি ঘটনায় বাংলাদেশের নাম চির ‘অক্ষয়’ হয়ে থাকবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।