প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১৩ এএম
‘যতদিন শিরোপাশূন্য থাকব, ততদিন চোকার্স তকমা লেগেই থাকবে’Ñ ফাইনালের আগে ‘নিজেদের ফাইনাল’ বনে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে তো বটেই, টেম্বা বাভুমার চোখ সেমি ছাপিয়ে ফাইনাল হয়ে সোজা ট্রফিতে নিবদ্ধ। এবার অন্তত সেমিফাইনালকে টুর্নামেন্টের ফাইনাল অর্থাৎ শেষ ম্যাচ বানাতে চান না দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। একই সঙ্গে কলকাতা থেকে আহমেদাবাদের টিকিট কাটার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ প্যাট কামিন্সরাও। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের চোখেও শিরোপার স্বপ্ন।
আজ শুক্রবারের লড়াইয়ের আগে পেছন ফিরে দেখা যাক সুলুক সন্ধানে যেকেউই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুর্ভাগা বলতে বাধ্য। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালÑ চারবার সেমিতে উঠে কোনোবারই ফাইনালের টিকিট পায়নি প্রোটিয়ারা, এর মধ্যে দুইবার হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনে নাটকীয়ভাবে অজিদের কাছে পরাজিত ম্যাচটি এখনও প্রোটিয়া সমর্থকদের মাঝরাতের বুকের ব্যথার কারণ। ওই ঘটনার ২৪ বছর পর ফের মুখোমুখি দুই দল। স্বাভাবিকভাবেই এই ম্যাচে অজিদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইতিহাসে পুনরাবৃত্তি করতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টটা এতদিনে নিশ্চিত ভুলে গেছেন প্যাট কামিন্সরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে যে লজ্জায় ডুবতে হয়েছিল, সেটা তাদের ভোগায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। টানা দুই ম্যাচ হেরে বিশ্ব আসর শেষ কবে শুরু করেছিল সফলতম দলটি, তা ঘাঁটতে নাভিশ্বাস ছুটেছে পরিসংখ্যানবিদদেরও। সমর্থকরাও বিশ্বাস করতে পারেননি সে দৃশ্যপট। টানা দুই ম্যাচ শুধু হারই নয়, স্রেফ উড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার, রান পাননি কেউ। বোলাররা ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজেলউডের বলে ছিল না ধার, জাম্পা খুঁজে পাচ্ছিলেন না লাইন-লেংথ।
এরপর কী হলো, কী ঘটেছিল, সেটা সবারই জানা। যখনই তাদের ফেলা হচ্ছিল বাতিলের খাতায়। পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে। সেখান থেকেই দুর্দান্ত কামব্যাক। টিকে থাকতে হলে হারা যাবে না, এমন সমীকরণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এক ভিন্ন অস্ট্রেলিয়াকে দেখেছিল বিশ্ব। কোনো এক জাদুর কাঠির পরশে ফর্মে ফিরলেন সবাই। রান এলো। বল হাতে যেন মুড়ি মুড়কির মতো উইকেট পাওয়া শুরু করলেন বোলাররা। আর ম্যাক্সওয়েল তো লঙ্কানদের একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে খেলেছেন এক অবিশ্বাস্য ইনিসং, যা শতাব্দীজুড়ে আলোচনায় থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার এমন ঘুরে দাঁড়ানো দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তবে অধিনায়ক ঠিকই জানতেন। ভরসা ছিল দলের প্রতি। অপেক্ষায় ছিলেন সঠিক সময়ের। বরং কামিন্স মনে করেন, ‘এটা বিশ্বকাপ। শুরুতেই সব শেষ, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। জানতাম, ফিরে আসব। সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা দেখা পাওয়া মাত্রই আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখান থেকে আর ফেরত যাওয়ার কিছু নেই। আমরা শুধু সামনেই তাকাচ্ছি। আহমেদাবাদের ফাইনালে একটা দল অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া হবে।’
অস্ট্রেলিয়া পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। স্রোতের বিপরীতে হাঁটার অভিজ্ঞতা ব্যাপক। ভিন্ন প্রোটিয়ারা। দলের বেশিরভাগেরই এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। তারুণ্যনির্ভর দলটি অতীতের লজ্জা ভুলতে মরিয়া। রাসি ফন ডার ডুসেন যেমনটি বলছেন, ‘১৯৯৯ সালে আমার বয়স ছিল ১০ বছর। ওই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল। আবার সুযোগ এসেছে। আমরা পারব।’ স্পিনার শামসি মনে করেন, শুরুর মতো শেষটাও রাঙাবে তার দল। দলে যে উচ্ছ্বাস আছে সেটি থাকবে আজও, ‘আমাদের এই দলটি ভিন্ন আমেজের একটি দল। এখানে খেলোয়াড়রাও ভিন্ন। কেউই বলেনি সেমিফাইনালে খেলব, কিন্তু সেখানে পৌঁছেছি। এটাই এই দলের মান। চাপে থাকা সত্ত্বেও আমরা বুঝতে পেরেছি বিশেষ কিছু করে দেখানোর এটাই সেরা সুযোগ। কখনোই বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, এ কারণেই সুযোগটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পূর্বসূরিরা যেটা পারেনি, সেটাই করে দেখাব।
মহারণে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ ছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ঘিরে। তবে ম্যাচের আগে ম্যাক্সিকে নিয়ে সুখবর দেন কামিন্স। জানানো হয় ব্যথা অনুভব করায় অজি অলরাউন্ডারের স্ক্যান করানো হয়। সৌভাগ্যজনকভাবে সে ফিট। তবে প্রোটিয়া শিবিরের চিন্তার কারণ বাভুমা। কোচ রব ওয়াল্টার জানান, ‘ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বাভুমার। আগের চেয়ে অনেক ভালো জায়গায় আছে।’ তবে তাকে সেমিতে দেখা যাবে কি না সে ব্যাপারে কিছুই জানাননি ওয়াল্টার।
আজ ম্যাচের প্রতিবন্ধক হতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতায় বৃষ্টি নামতে পারে। যদি রিজার্ভ ডে-তেও খেলা শেষ না হয় কপাল পুড়বে অস্ট্রেলিয়ার, প্রোটিয়াদের জন্য হবে আশীর্বাদ। পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে থাকার সুবিধা পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালে চলে যাবে।
ইডেন গার্ডেনসে লড়াইয়ের আগে ১০৯ বার মুখোমুখিতে ৫টি জয় বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্বকাপে দুদলের জয় সমান। তবে পরিসংখ্যান একপাশে রেখে দুদলই চাইবে এগিয়ে যেতে শিরোপার আরেকটু কাছে। কামিন্সদের প্রত্যাবর্তনে রাঙানো বিশ্বকাপের পথ আরেকটু বাড়বে নাকি ‘চোকার্স’ তকমাটা ঘুচিয়ে দেবে প্রোটিয়ারা। দুদলের চোখ নিবিষ্ট আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের শিরোপার মঞ্চে। কারা থাকবে সেখানে, সময় দেবে সব উত্তর।