মিশন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৪৫ এএম
বিশ্বকাপে আশার ফানুস উড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেট অনুরাগীদের দেখিয়েছিল সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান, সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সবার চোখেই ছিল শেষ চারের টিকিট ছিনিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু টানা ছয় হারের দুষ্টু চক্রে আটকে সেই স্বপ্ন কবেই উধাও হয়ে গেছে বিশ্বমঞ্চের আকাশে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে ক্রিকেট মহাযজ্ঞে মিশন শুরু হলেও টাইগাররা একে একে ধরাশায়ী হয় ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের কাছে। এই হারগুলো না হয় কষ্ট হলেও মানা যায়। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ তো বলতে গেলে একরকম ক্ষমার অযোগ্য ‘অপরাধ’।
খারাপ পারফরম্যান্সের খোলসে বন্দি হয়ে সেমির স্বপ্ন বিলীন হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ার আকাশে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৈশ্বিক আসরে পাওয়া দ্বিতীয় জয়ে জিইয়ে রয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার সুযোগ। মাঠের পারফরম্যান্সের বেহাল দশার কারণে লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের সেই স্বপ্নটাও ধ্বংস হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তা-ও রক্ষে অনেক চেষ্টার পর সাকিব আল হাসান (৮২) ও নাজমুল হোসেন শান্তর (৯০) ব্যাটিং দাপটে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়টা এসেছে। তাতেই এখন আশায় বুক বাঁধছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল জনতা। অন্তত ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মাটিতে আইসিসির ফ্ল্যাগশিপ টুর্নামেন্টে খেলার একটা সম্ভাবনা তো টিকে আছে।
বিশ্বকাপে এখন আর এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনাই এখন কেবল উঁকি দিয়ে ডাকছে টাইগারদের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে বিশ্বকাপ পয়েন্ট তালিকার সাতে উঠলেও ইংল্যান্ডের জয়ে আটে নেমে গেছেন লিটন-শান্তরা। তাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা বেঁচে থাকলেও বাংলাদেশের সামনে এখন কঠিন সমীকরণ। সেই হিসাবই করছেন এখন দেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু তারপরও ‘যদি-কিন্তু’তে আটকে আছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার ভাগ্য।
ক্রিকেট দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি আগেই জানিয়ে রেখেছে। বিশ্বকাপের সেরা সাত দল পাবে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট। তার সঙ্গে পাকিস্তান সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে আয়োজক হিসেবে। আর বাবর আজমরা বিশ্বকাপ শেষ করবে তালিকার সাতে থেকে। এটা এখন নিশ্চিত। তারা এখন পাঁচে রয়েছে। শেষ ম্যাচে হারলে পাকিস্তান নেমে যাবে সাতে। সে হিসাবে এখন বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের সেরা আট দল ধরবে পাকিস্তানের ফ্লাইট। তার মানে আট নম্বর অবস্থান করা দলও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সুযোগ পাবে। আর এই তালিকায় এখনে আটে রয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও বড় ব্যবধানে জিতলে নেট রানরেট বাড়িয়ে নিতে পারত দল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দেশের ক্রিকেটারদের। প্রার্থনা করতে হবে ম্যাচ দুটির ফলাফল যেন বাংলাদেশের পক্ষে যায়।
বাংলাদেশ যদি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে চায়, তাহলে শ্রীলঙ্কার হারই কামনা করতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে করেই হোক হারতেই হবে লঙ্কানদের। এই ম্যাচ মাঠে গড়াবে আজ বেঙ্গালুরুতে। ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের জন্যও মহাগুরুত্বপূর্ণ। সেমিফাইনালে নাম লিখতে হলে কিউইদের জয়ের কোনো বিকল্প নেই। আর কোনোভাবে শ্রীলঙ্কা ম্যাচে জিতে গেলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬। এবং সেই পুঁজি নিয়ে টাইগারদের টপকে যাবে লঙ্কানরা। তাতে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। তাই এখন চাইতে হবে ইংল্যান্ডের হারও।
ইংল্যান্ড অবশ্য নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সাতে উঠে গেছে। দাপুটে এই জয়ে ইংলিশদের পুঁজি বাংলাদেশের সমান ৪ পয়েন্ট। তাই এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি হারতে হবে জস বাটলারদের। বৈশ্বিক আসরে ধুঁকতে দেখা গেছে ইংল্যান্ডকে। নাস্তানাবুদ হওয়া দলটি ডাচদের হারাতে পারলেও পাকিস্তানকে হারানো তাদের পক্ষে কঠিনই হবে। সন্দেহ নেই সেমিতে ওঠার জন্য ডু-অর-ডাই ম্যাচটি বাবর আজমরা খেলবেন জান-প্রাণ দিয়ে।
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হওয়ায় এখন হিসাবে আসবে নেট রানরেট। তাই শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিতে না পারলেও হারের ব্যবধানটা কমিয়ে ফেলতে হবে। আর সৌভাগ্যবশত ম্যাচটি জিতে গেলে ৬ পয়েন্টের সংগ্রহ নিয়ে তালিকার আটে থেকে যাবেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। আর এটা হলে দর্শক না হয়ে হেসে-খেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
এখানেই শেষ নয়। আছে আরও হিসাবনিকাশ। ডাচরা তো গতকাল ধরাশায়ী হয়েছে ইংলিশদের কাছে। নেমে গেছে দশে। নেদারল্যান্ডসকে এখন হারতে হবে ভারতের বিপক্ষেও। ৯ নম্বরে থাকা দলটির সংগ্রহও এখন বাংলাদেশের সমান ৪ পয়েন্ট। আর অপ্রতিরোধ্য ও অজেয় ভারত এখন যে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে, তাতে নেদারল্যান্ডসের পক্ষে রোহিত শর্মাদের হারানো এক রকম অসম্ভব। যদিও ক্রিকেটে কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। তবে সে যাই হোক, ডাচদের হারই কেবল কাম্য টাইগারদের।
বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির লক্ষ্যই এখন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের, ‘সত্যি বললে আমাদের লক্ষ্য একটাই যাতে পয়েন্ট টেবিলে একটু ওপরের দিকে শেষ করতে পারি। এমনিতেই আমরা সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ হারিয়েছি। তবে এখনও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগটা আমাদের মুঠোতে আছে, তাই সম্ভাব্য সেরা অবস্থানে শেষ করতে হবে।’
লঙ্কানদের হারানোর পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে স্বপ্ন দেখান সাকিবও, ‘আমার মনে হয় আজকের ম্যাচটা আমাদের একটু হলেও আত্মবিশ্বাস দেবে। ড্রেসিংরুমটা একটু হলেও শান্ত হবে। আরেকটু ভালো খেলতে সাহায্য করবে। তবে অস্ট্রেলিয়া অবশ্যই অনেক ভালো দল। শিরোপাপ্রত্যাশী। আমাদের আজকের ম্যাচটা ভালো ছিল। তবে এটা ধরে রাখতে পারলে আমরা ভালো একটা ম্যাচ খেলতেও পারি। আমাদের বিশ্বাস আছে, এই জয়টা সাহায্য করবে সে জন্য। আরেকটি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যদি জিতি তাহলে মোটামুটি হয়তো শিউর থাকব আমরা কোয়ালিফাই করব। তাই আমাদের জন্য বাঁচা-মরা পরিস্থিতি। আমরা চেষ্টা করব সবকিছু দিয়ে ম্যাচটা জেতার।’